Home পরিবেশ পৃথিবী হারাল প্রকৃতির প্রহরী, প্রয়াত পরিবেশবিদ ও শিম্পাঞ্জি গবেষক জেন গুডলকে

পৃথিবী হারাল প্রকৃতির প্রহরী, প্রয়াত পরিবেশবিদ ও শিম্পাঞ্জি গবেষক জেন গুডলকে

প্রয়াত জেন গুডল। ৯১ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন খ্যাতনামা পরিবেশবিদ ও শিম্পাঞ্জি গবেষক। প্রকৃতি সংরক্ষণে তাঁর অবদান বিশ্বজুড়ে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

jane goodall

পৃথিবী হারাল প্রকৃতির এক অমূল্য প্রহরীকে। প্রয়াত হলেন বিশ্ববিখ্যাত প্রাণীবিজ্ঞানী, পরিবেশ আন্দোলনের মুখ ও শিম্পাঞ্জি গবেষণার পথিকৃৎ জেন গুডল (Jane Goodall)। বুধবার তাঁর প্রতিষ্ঠান Jane Goodall Institute জানায়, ৯১ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন এই কিংবদন্তি বিজ্ঞানী।

জেন গুডল ষাটের দশকে তানজানিয়ার জঙ্গলে শিম্পাঞ্জিদের মধ্যে বসবাস শুরু করে এমন সব তথ্য সামনে এনেছিলেন, যা আগে কেবল মানুষের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ মনে করা হতো। তিনি প্রথম দেখিয়েছিলেন যে শিম্পাঞ্জিরা যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে পারে, সামাজিক সম্পর্কে আবদ্ধ হয় এবং তাদেরও নিজস্ব ব্যক্তিত্ব থাকে। তাঁর এই আবিষ্কার বদলে দেয় মানুষ ও প্রাণিজগতের সম্পর্ক বোঝার ধারা।

প্রথমে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ থেকে শুরু করে তথ্যচিত্রে তাঁর কাজ সারা বিশ্বে আলোচিত হয়ে ওঠে। একদিকে যেমন তিনি বিজ্ঞানের ইতিহাসে মাইলফলক স্থাপন করেন, অন্যদিকে তেমনি মানুষকে বোঝান প্রকৃতি ও জীবজগতের সঙ্গে গভীর আন্তঃসম্পর্কের কথা।

পরবর্তী সময়ে জেন গুডল জীবজন্তুর অধিকার রক্ষায়, বন সংরক্ষণে ও পরিবেশ রক্ষায় জীবন উৎসর্গ করেন। ৯০-এর দশকেও তিনি বছরে প্রায় ৩০০ দিন সারা পৃথিবী জুড়ে বক্তৃতা দিয়েছেন। কোমল অথচ দৃঢ় কণ্ঠে তিনি জলবায়ু সংকটের বাস্তবতা জানালেও মানুষের মনে আশা জাগিয়েছেন।

ব্রিটেন, ফ্রান্স, জাপান, তানজানিয়াসহ বিশ্বের বহু দেশ তাঁকে সম্মান জানিয়েছে। ২০২১ সালে তিনি পান মর্যাদাপূর্ণ Templeton Prize, আর ২০২৫ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তাঁকে দেন Presidential Medal of Freedom। এছাড়া তিনি ছিলেন জাতিসংঘের শান্তির দূত। তাঁর লেখা Reason for Hope সহ বহু বই আন্তর্জাতিকভাবে জনপ্রিয় হয়েছে।

১৯৩৪ সালে লন্ডনে জন্ম নেওয়া জেন গুডলের শৈশব থেকেই প্রাণীজগতের প্রতি টান ছিল প্রবল। মাত্র ১০ বছর বয়সে Tarzan of the Apes বই পড়ে ঠিক করেছিলেন আফ্রিকায় গিয়ে বন্যপ্রাণীর সঙ্গে জীবন কাটাবেন। সেই স্বপ্নই তাঁকে নিয়ে যায় লুইস লিকির কাছে, যিনি তাঁকে শিম্পাঞ্জি গবেষণার সুযোগ দেন। বাকিটা ইতিহাস।

জীবনের শেষ পর্বেও তিনি সক্রিয় ছিলেন। সামাজিক মাধ্যম থেকে শুরু করে নিজের Hopecast পডকাস্টে তিনি বারবার মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছেন। তাঁর বার্তা ছিল স্পষ্ট— “আজকের দিনে ছোট ছোট সঠিক সিদ্ধান্তই ভবিষ্যতের জন্য বড় পরিবর্তন আনতে পারে।”

প্রকৃতিবিদ্যার ইতিহাসে জেন গুডলের নাম আজীবন স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তাঁর জীবন, গবেষণা ও সংগ্রাম আগামীর প্রজন্মকে পথ দেখাবে।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version