দীর্ঘ ছায়া যুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে সরাসরি যুদ্ধে জড়াল ইরান ও ইজরায়েল। শুক্রবার (১৩ জুন) ভোররাতে ইজরায়েল একযোগে হামলা চালায় ইরানের উপর। মূল নিশানা ছিল পরমাণু কেন্দ্র ও সামরিক পরিকাঠামো। ধ্বংস করা হয় ইরানের সামরিক নেতৃত্বের শৃঙ্খল, বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি।
এই হামলার পাল্টা জবাব দিতে গিয়েই ইরান ও ইজরায়েল সরাসরি লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়ে — যা ইতিহাসে মাত্র তৃতীয় বার ঘটল, তবে এ বার সংঘাত সবচেয়ে তীব্র।
দীর্ঘ শত্রুতার শিকড়: ১৯৭৯ সালের ইসলামিক বিপ্লব
ইরান-ইজরায়েল দ্বন্দ্বের শুরু ইসলামিক বিপ্লবের পর।
১৯৭৯ সালের আগে ইজরায়েলের সঙ্গে গভীর অর্থনৈতিক, প্রতিরক্ষা ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল ইরানের। তখনকার শাহ রেজা পহলবির সঙ্গে ইজরায়েলের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। কিন্তু ইসলামিক বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন আয়াতোল্লাহ খোমেইনি। তিনি ইজরায়েলকে ‘শয়তান রাষ্ট্র’ বলে ঘোষণা করে, তাকে ধ্বংস করা শাসনের মূল মতাদর্শ করে তোলেন।
ছায়া যুদ্ধ: ১৯৮০-২০২০
প্রতিবেশী দেশগুলিতে প্রভাব বিস্তার করে একে অপরকে ঘায়েল করতে শুরু করে ইরান ও ইজরায়েল।
- হেজবুল্লাহকে মদত দেয় ইরান (১৯৯২), যারা দক্ষিণ লেবাননে শক্ত ঘাঁটি তৈরি করে।
- হামাস-কেও সমর্থন দেয় ইরান, যাদের লক্ষ্য ইজরায়েলের ধ্বংস।
- পরমাণু কর্মসূচি ২০০২ সালে প্রকাশ্যে আসে, ২০০৬-এ ফের চালু হয়।
- ২০১০-২০২০: একের পর এক ইরানি পরমাণু বিজ্ঞানীকে হত্যা করে ইজরায়েল।
- ২০২০: কুদস ফোর্স প্রধান কাসেম সোলাইমানিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হত্যা করে, ইজরায়েলের সহায়তায়।
২০২৪-এর সরাসরি যুদ্ধ: ধাপে ধাপে সংঘাতের বিস্তার
- এপ্রিল ২০২৪: ইজরায়েল সিরিয়ার দামাস্কাসে ইরানি দূতাবাস লক্ষ্য করে হামলা চালায়। নিহত হয় আইআরজিসি-র একাধিক শীর্ষ অফিসার।
- ইরান প্রতিক্রিয়া দেয় শত শত ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার মাধ্যমে।
একটি প্রতিরক্ষা জোট গঠন করে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরশাহী ও জর্ডন। - জুলাই ৩১:
তেহরানে হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়েহ নিহত হন — আইআরজিসি অতিথি ভবনে বিস্ফোরণে
বেইরুটে হেজবুল্লাহ সেনাপ্রধান ফুয়াদ শোকারও নিহত হন ইজরায়েলি হামলায় - অক্টোবর: ইরান ফের শত শত ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ছোঁড়ে, ইজরায়েলও পাল্টা এয়ারস্ট্রাইক চালায়। উভয়পক্ষই তখনও সংঘর্ষে পরেও ফেরত যাওয়ার পথ রেখে দিয়েছিল।
২০২৫: এবার কোনও “অফর্যাম্প” নেই
এই বার, প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু স্পষ্ট জানিয়ে দেন— আর কোনও ছাড় নয়। শুক্রবারের হামলায়:
- ইরানের পরমাণু পরিকাঠামোর বড় অংশ ধ্বংস হয়েছে
- সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে ধাক্কা
- বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে ফেলা হয়েছে
এনিয়ে জোট বাহিনী ফের সক্রিয় — মার্কিন প্রেসিডেন্টের নেতৃত্বে গঠিত প্রতিরক্ষা জোট ইজরায়েলের পাশে রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্য এক বিপজ্জনক যুদ্ধের পথে হাঁটছে বলেই আশঙ্কা আন্তর্জাতিক মহলের।