২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজা থেকে হামাসের আক্রমণের পর ইসরায়েল-হামাস সংঘাতের সূত্রপাত। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু হামাসকে ‘পৃথিবীর মানচিত্র থেকে মুছে ফেলার’ হুমকি দিয়েছিলেন। কিন্তু ১৫ মাসের যুদ্ধ ও লাগাতার বোমাবর্ষণের পরেও হামাস ধ্বংসের বদলে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছে।
হামাসের পুনর্গঠন ও শক্তি বৃদ্ধি
সাম্প্রতিক সময়ে হামাসের হাতে তিনজন ইজরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দিতে দেখা গেছে। সেই সময় হামাসের প্রচুর সশস্ত্র সদস্য একটি ভ্যান ঘিরে দাঁড়িয়ে ছিলেন, যা তাদের নিয়ন্ত্রণ ও সংগঠনের শক্তির ইঙ্গিত দেয়। তেল আভিভ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডায়ান সেন্টারের গবেষক মাইকেল মিলস্টেইন বলেছেন, “তাদের অবস্থা মোটেই খারাপ নয়। এটি বলা কঠিন, কারণ আমরা তাদের দুর্বল এবং ধ্বংসপ্রাপ্ত অবস্থায় দেখতে চেয়েছিলাম।”
গাজার ধ্বংসস্তূপের মধ্যেও হামাসের পুনর্গঠন
গাজায় ব্যাপক ধ্বংসের মধ্যে দিয়ে ৪৬,০০০ মানুষের মৃত্যু এবং ৯০% জনসংখ্যার বাস্তুচ্যুতি হয়েছে। তবে, হামাস এই সংঘাতকে একটি গৌরবময় অর্জন বলে বিবেচনা করছে।
হামাসের মুখপাত্র আবু ওবাইদা জানিয়েছেন, “যুদ্ধের সময় আমরা হাজার হাজার নতুন যোদ্ধা নিয়োগ করেছি, শক্তিশালী অস্ত্র তৈরি করেছি, এবং বিভিন্ন কৌশলগত প্রস্তুতি নিয়েছি।”
ইসরায়েলের সামরিক কৌশলের সীমাবদ্ধতা
ইজরায়েলি সামরিক বাহিনী দাবি করেছে যে তারা হামাসের ১০,০০০ সদস্যকে বিমান হামলায় এবং আরও ১,২০০ জনকে স্থল অভিযানে হত্যা করেছে। তবে, লন্ডন-ভিত্তিক আরবি সংবাদপত্র ‘আশারক আল-আওসাতের’ রিপোর্ট অনুযায়ী, হামাস তাদের নিহত যোদ্ধাদের সমান সংখ্যক নতুন যোদ্ধা নিয়োগ করেছে।
এছাড়া, গাজার ধ্বংসস্তূপে হামাসের সামরিক প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল পাওয়া গেছে, যাতে উন্নত অস্ত্র ও রকেট ব্যবহারের নির্দেশিকা রয়েছে।
যুদ্ধ পরবর্তী পরিস্থিতি
যুদ্ধবিরতির পরে হামাস গাজার বিভিন্ন এলাকায় হাজার হাজার পুলিশ অফিসার মোতায়েন করেছে এবং স্কুল পুনরায় চালুর পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। যদিও ৮৫% স্কুল ধ্বংসপ্রাপ্ত, তবুও হামাস তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে সফল হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ
মাইকেল মিলস্টেইনের মতে, ইসরায়েলের সামরিক কৌশল হামাসকে ধ্বংস করতে ব্যর্থ হয়েছে। তিনি বলেন, “একটি দীর্ঘমেয়াদী কৌশল প্রয়োজন, কারণ সামরিক ব্যবস্থা দিয়ে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।”