Home খবর বিদেশ ইয়েমেনে ভারতীয় নার্স নিমিষা প্রিয়ার মৃত্যুদণ্ড রদের ‘কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ব্যর্থ’, ভরসা শুধু...

ইয়েমেনে ভারতীয় নার্স নিমিষা প্রিয়ার মৃত্যুদণ্ড রদের ‘কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ব্যর্থ’, ভরসা শুধু ‘ব্লাড মানি’

nimisha priya

ইয়েমেনে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কেরলের নার্স নিমিষা প্রিয়াকে বাঁচাতে ভারত সরকারের কূটনৈতিক প্রয়াস ব্যর্থ হয়েছে। সোমবার সুপ্রিম কোর্টে এমনই জানালেন অ্যাটর্নি জেনারেল আর. ভেঙ্কটরামণি। তিনি বলেন, “যে পর্যায় পর্যন্ত ভারতের পক্ষে এগোনো সম্ভব, তা করা হয়েছে। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি। ইয়েমেন সরকারের কাছে আমাদের কোনও আবেদনই গুরুত্ব পায়নি।”

২০১৭ সালে ইয়েমেনের সানা শহরে এক ব্যবসায়ীর হত্যার অভিযোগে নিমিষাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে ২০২০ সালে তাঁর মৃত্যুদণ্ডের সাজা ঘোষণা করা হয়। সবরকম আপিল খারিজ হওয়ার পরে আগামী ১৬ জুলাই তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হতে পারে বলে আশঙ্কা।

সরকারি আইনজীবীর বক্তব্য, “আমরা এমনকি একজন প্রভাবশালী শেখের মাধ্যমেও চেষ্টা করেছি। কিন্তু কোনও ফল হয়নি। ইয়েমেনের পাবলিক প্রসিকিউটরকে বলেও সাড়া পাওয়া যায়নি। ওদের কাছে কিছুই গুরুত্ব পায় না।”

সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, নিমিষাকে বাঁচাতে তাঁর হয়ে যে পিটিশন দায়ের হয়েছে, সেই সংস্থা রক্তমূল্য (Blood Money) দিতে রাজি। ইতিমধ্যেই ১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ₹৮.৬ কোটি) দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তবে মৃত ব্যবসায়ীর পরিবার সেই অর্থ গ্রহণে অনিচ্ছুক বলে জানিয়েছে কেন্দ্র। তাদের বক্তব্য, “এটা সম্মানের প্রশ্ন।”

কে এই নিমিষা প্রিয়া?

কেরলের পালক্কাড় জেলার বাসিন্দা ৩৭ বছর বয়সী নার্স নিমিষা ২০০৮ সালে ইয়েমেন যান পরিবারকে আর্থিকভাবে সাহায্য করতে। সেখানকার নিয়ম অনুযায়ী বিদেশি নাগরিকদের ব্যবসা করতে স্থানীয় পার্টনার লাগে। সেই কারণে তিনি তালাল আব্দো মেহদি নামে এক ইয়েমেনি নাগরিকের সঙ্গে যৌথভাবে ক্লিনিক চালু করেন।

কিন্তু অভিযোগ, তালাল প্রায়ই তাঁকে হয়রানি করত এবং তাঁর পাসপোর্টও বাজেয়াপ্ত করে রাখে। পাসপোর্ট ফেরত পাওয়ার জন্য ২০১৭ সালে তালালকে ঘুমের ইনজেকশন দেন নিমিষা। কিন্তু অতিরিক্ত ওষুধ প্রয়োগে তাঁর মৃত্যু হয়। দেশ ছাড়ার আগেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।

আইন ও মানবিকতার লড়াই

‘Save Nimisha Priya International Action Council’ নামক একটি সংস্থা সুপ্রিম কোর্টে পিটিশন করে জানায়, গৃহযুদ্ধ কবলিত ইয়েমেনে নিমিষার যথাযথ আইনি সহায়তা মেলেনি। তাঁর কাছ থেকে জোর করে আরবি ভাষায় স্বীকারোক্তি সই করিয়ে নেওয়া হয়েছিল বলেও অভিযোগ।

কেন্দ্র জানিয়েছে, ইয়েমেনের সঙ্গে ভারতের কোনও কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। এমনকি সেখানে ভারতের স্থায়ী দূতাবাসও নেই, ফলে আলোচনার পরিসর খুবই সীমিত। তবে সেই পথেও আপাতত অগ্রগতি নেই।

ভরসা—‘ব্লাড মানি’ মীমাংসা

ইসলামিক শরিয়ত আইনে নির্দিষ্ট কিছু অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি যদি নিহত ব্যক্তির পরিবারের কাছে ‘ব্লাড মানি’ বা মৃত্যুরজন্য ক্ষতিপূরণ দেয় এবং পরিবার তা গ্রহণ করে, তবে মৃত্যুদণ্ড মকুব হতে পারে। নিমিষার মামলাতেও এই নিয়ম প্রযোজ্য।

নিমিষার পরিবার মৃত তালাল মাহদির পরিবারকে ইতিমধ্যেই প্রায় ₹৮.৬ কোটি (১ মিলিয়ন ডলার) ‘ব্লাড মানি’ ইসলামিক শরিয়ত আইনে নির্দিষ্ট কিছু অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি যদি নিহত ব্যক্তির পরিবারের কাছে ‘ব্লাড মানি’ বা মৃত্যুরজন্য ক্ষতিপূরণ দেয় এবং পরিবার তা গ্রহণ করে, তবে মৃত্যুদণ্ড মকুব হতে পারে। নিমিষার মামলাতেও এই নিয়ম প্রযোজ্য।

ল্য দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু তালালের পরিবার এখনো তা নিতে অস্বীকার করেছে। তাঁদের দাবি, এটা ‘সম্মানের প্রশ্ন’। এই অবস্থায়, নিমিষার একমাত্র রক্ষা পাওয়ার পথ এই ‘ব্লাড মানি’ মীমাংসা—যদি কখনও নিহতের পরিবার তাদের অবস্থান পরিবর্তন করে।

এই মুহূর্তে কোনও রাষ্ট্রীয় বা কূটনৈতিক চ্যানেল কাজ করছে না। ফলে ‘ব্লাড মানি’ দিয়ে মীমাংসা করাটাই এখন তাঁর প্রাণ বাঁচানোর একমাত্র সম্ভাব্য পথ বলে জানিয়েছেন সরকারি আইনজীবী।

সুপ্রিম কোর্ট মামলার পরবর্তী শুনানির দিন রেখেছে ১৮ জুলাই।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version