Home খবর বিদেশ বিশ্ব রাজনীতির অস্থিরতার মাঝে করুণার কণ্ঠস্বর: এক দশক ধরে পোপ ফ্রান্সিসের প্রগতিশীল...

বিশ্ব রাজনীতির অস্থিরতার মাঝে করুণার কণ্ঠস্বর: এক দশক ধরে পোপ ফ্রান্সিসের প্রগতিশীল পদচারণা

মারা গেলেন পোপ ফ্রান্সিস। সোমবার ভ্যাটিকানের একটি ভিডিয়ো বার্তায় তাঁর মৃত্যুর কথা জানানো হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন রোমান ক্যাথলিক গির্জার প্রধান। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর।

দশ বছর আগে সেন্ট পিটার্স স্কোয়ারে দাঁড়িয়ে যখন পোপ ফ্রান্সিস প্রথমবার জনসাধারণের উদ্দেশে কথা বলেছিলেন, তখন তিনি মজার ছলে বলেছিলেন— “প্রায় পৃথিবীর প্রান্ত থেকে আমাকে খুঁজে আনা হয়েছে।” আর্জেন্টিনার এই কার্ডিনালের এই বক্তব্য ছিল আত্মপ্রত্যয়ী এবং অনন্য। তখনই স্পষ্ট হয়েছিল, এ পোপ হবেন একদম অন্য ধরণের— একেবারে প্রান্তিকের কণ্ঠস্বর।

গত এক দশকে পোপ ফ্রান্সিস শুধু ক্যাথলিক গির্জার নয়, গোটা বিশ্বের এক প্রয়োজনীয় নৈতিক কণ্ঠে পরিণত হয়েছেন। শরণার্থী সংকট, জলবায়ু পরিবর্তন, এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক বৈষম্যের মতো বিষয়গুলিতে তিনি দৃঢ় এবং মানবিক অবস্থান নিয়েছেন।

প্রবাস ও শরণার্থীদের পক্ষে স্পষ্ট বার্তা

২০১৬ সালে গ্রিসের লেসবস দ্বীপে সফরের সময় পোপ বলেছিলেন— “ইউরোপ মানবাধিকারের ভূমি, এখানে পা রাখলেই তা অনুভব করার সুযোগ থাকা উচিত।” ইউরোপ যখন আরও বেশি করে ‘ফর্ট্রেস ইউরোপ’ হয়ে উঠছে, তখন এই বক্তব্য যেন আরও বেশি তাৎপর্যপূর্ণ।

জলবায়ু ও অর্থনৈতিক ন্যায়ের সপক্ষে অবস্থান

২০১৫ সালে প্রকাশিত পোপের এনসাইক্লিক্যাল Laudato Si’ ছিল এক যুগান্তকারী পরিবেশ বার্তা। তিনি দেখিয়েছেন কীভাবে জলবায়ু সংকট ও দারিদ্র্য একই সুত্রে গাঁথা। তাঁর মতে, পৃথিবীর ক্ষমতাবান অঞ্চলগুলির উচিত প্রান্তিক ও দুর্বলদের পাশে থাকা।

গির্জার অন্দরেও পরিবর্তনের চেষ্টা

রোমান কুরিয়াকে একাধিকবার বিনয় ও আত্মসমালোচনার পাঠ দিয়েছেন তিনি। সাম্প্রতিক “Synod on Synodality” — বিশ্বের ক্যাথলিকদের মতামতভিত্তিক পরামর্শ প্রক্রিয়া — গির্জার এককেন্দ্রিক আধিপত্যের ধারণা দুর্বল করার লক্ষ্যেই চালু করেছেন পোপ।

সহানুভূতি ও মানবিকতার বার্তা

সমকামী সম্পর্ক, বিবাহ বিচ্ছিন্নদের গির্জায় গ্রহণযোগ্যতা ইত্যাদি বিষয়ে তিনি কড়াকড়ির চেয়ে সহানুভূতিকে গুরুত্ব দিয়েছেন। সবচেয়ে বিখ্যাতভাবে তিনি একবার বলেছিলেন, “আমি কে যে বিচার করব?”

সমালোচনাও এসেছে

তবে পোপ ফ্রান্সিসের পথচলা সবসময় মসৃণ ছিল না। শিশু যৌন নিপীড়ন কাণ্ডে কিছু ভুল স্বীকার করেছেন তিনি। নারী ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে আরও অগ্রগতির দাবি এখনও রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কিছু রক্ষণশীল বিশপ তাঁর নীতিকে তীব্রভাবে আক্রমণও করেছেন।

যখন বিশ্ব রাজনীতিতে বিচ্ছিন্নতাবাদ ও সংকীর্ণতা বাড়ছে, তখন পোপ ফ্রান্সিসের বার্তা— “সমবেদনা, সংহতি এবং অন্তর্ভুক্তির” — এক বিকল্প মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে। দশ বছর পরে তিনি প্রমাণ করেছেন, ‘প্রান্ত থেকে আসা’ একজন মানুষও কতটা বিশ্বজনীন হতে পারেন।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version