২০২৩–২৪ অর্থবর্ষে পশ্চিমবঙ্গ রেকর্ড সংখ্যক বিদেশি পর্যটক টেনেছে রাজ্যে। রাজ্য বিধানসভায় এই তথ্য জানিয়ে পর্যটনমন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন বলেন, গত বছরে বাংলায় পা রেখেছেন ৩২ লক্ষ বিদেশি পর্যটক, যা দেশের মধ্যে তৃতীয় সর্বোচ্চ। একমাত্র মহারাষ্ট্র ও গুজরাত এই তালিকায় বাংলার আগে রয়েছে।
এই সংখ্যা ২০২২–২৩ সালে ছিল ২৭.১ লক্ষ, আর ২০২১–২২ সালে মাত্র ১০.৪ লক্ষ। অর্থাৎ, কোভিড পরবর্তী সময়ে পর্যটনে বাংলা উল্লেখযোগ্যভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
মন্ত্রী জানান, ২০২৩–২৪ সালে দেশের মোট বিদেশি পর্যটক আগমনের ১৪.৮ শতাংশ ছিল পশ্চিমবঙ্গে। “এটা অত্যন্ত গর্বের বিষয়। আন্তর্জাতিক পর্যটনের মানচিত্রে বাংলা এখন দৃঢ় জায়গা করে নিয়েছে,” বিধানসভায় বলেন মন্ত্রী।
বাংলাদেশ নয়, ইউরোপ-অস্ট্রেলিয়ার পর্যটকই বেশি
রাজ্যে বিদেশি পর্যটকের বড় অংশ বাংলাদেশ থেকে আসে—এই ধারণা খণ্ডন করে ইন্দ্রনীল বলেন, “৩২ লক্ষ পর্যটকের মধ্যে মাত্র ১.৮ লক্ষ বাংলাদেশ থেকে। বাকি ২৭ লক্ষের বেশি পর্যটক এসেছেন ইউরোপ, রাশিয়া, ও অস্ট্রেলিয়া থেকে।”
বিশ্বনাথ করক (বিজেপি বিধায়ক)-এর প্রশ্নের উত্তরে এই তথ্য দেন মন্ত্রী।
দুর্গাপুজোই আন্তর্জাতিক আকর্ষণ
বিশেষ করে ইউনেসকো স্বীকৃত কলকাতার দুর্গাপুজো এখন অন্যতম আন্তর্জাতিক আকর্ষণ। ২০২৩ সালের মহালয়া থেকে দীপাবলি পর্যন্ত শহরে এসেছিলেন ৫ লক্ষেরও বেশি বিদেশি পর্যটক, যার মধ্যে কেবল পুজোর পাঁচ দিনে এসেছিলেন ২০ হাজারেরও বেশি আন্তর্জাতিক পর্যটক, জানান ট্রাভেল এজেন্টরা।
কানাডা, স্পেন, ইউরোপ, যুক্তরাজ্য থেকে পুজোর আগাম বুকিং শুরু হয়ে গিয়েছে বলেও জানান ট্রাভেল এজেন্টস ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া-র অনিল পাঞ্জাবি।
হিমালয় নয়, পাহাড় মানেই এখন দার্জিলিং-কার্সিয়াং
দার্জিলিং ও কার্সিয়াং-এ বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। জনপ্রিয় হয়ে উঠছে টি ট্যুরিজম।
মানব সোনি, ট্রাভেল এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য বলেন, “দার্জিলিং এখন শিমলা-মানালির থেকেও বেশি প্রেফারড ডেস্টিনেশন বিদেশিদের কাছে।”
পুরুলিয়া-বাঁকুড়ায় ইকো ট্যুরিজমের জোয়ার
একসময় বাংলার পর্যটন মানচিত্রে প্রান্তিক পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া এখন পর্যটন কেন্দ্র হয়ে উঠছে। অযোধ্যা পাহাড়ে সম্প্রতি চালু হওয়া ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার ইতিমধ্যেই ৮৭% বুকিং পেয়েছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী। এর সঙ্গে গঠিত হয়েছে পুরুলিয়া ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিল।
পেশাদার ট্যুর গাইডেও বাংলা শীর্ষে
পর্যটনকে পেশাগত দৃষ্টিভঙ্গিতে এগিয়ে নিতে ১,০২২ জন প্রশিক্ষিত ট্যুর গাইড তৈরি করেছে রাজ্য, যা দেশের মধ্যে সর্বাধিক।
নর্থইস্টের গেটওয়ে হিসেবে বাংলার গুরুত্ব
সিকিম, অসম, মেঘালয়ের মতো রাজ্যে যাওয়া বিদেশি পর্যটকদের জন্য বেঙ্গল এখন ট্রানজিট হাব। এছাড়াও, দীঘায় নির্মীয়মাণ জগন্নাথ মন্দির-এর মতো নতুন ধর্মীয় কেন্দ্রও পর্যটনের অন্যতম আকর্ষণ হয়ে উঠছে।