Home খবর কলকাতা দেদার শব্দবাজিতে আতঙ্ক কলকাতায়! দূষণ কম দাবি পুলিশের, কিন্তু তথ্য বলছে অন্য...

দেদার শব্দবাজিতে আতঙ্ক কলকাতায়! দূষণ কম দাবি পুলিশের, কিন্তু তথ্য বলছে অন্য কথা

খবর অনলাইন ডেস্ক: দীপাবলির রাতে আবারও দেদারে শব্দবাজি! আদালতের নির্দেশ, নির্ধারিত সময়সীমা, প্রশাসনিক নজরদারি—কোনও কিছুর তোয়াক্কা না করেই সোমবার গভীর রাত পর্যন্ত আকাশ ফাটানো শব্দবাজিতে ভরে উঠেছিল কলকাতা। কিন্তু সেই আবহেই শহরের পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মার গলায় শোনা গেল অন্য সুর—তিনি দাবি করলেন, “এ বছর কলকাতার পরিস্থিতি আগের তুলনায় অনেক ভাল, দূষণও কম।”

সিপির দাবি বনাম বাস্তব চিত্র

মঙ্গলবার সকালে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে মনোজ বর্মা বলেন, “শব্দ ৯০ ডেসিবলের থেকে কম ছিল, অর্থাৎ সীমার মধ্যেই। সেই সীমা ১২৫ ডেসিবল। সোমবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বায়ুদূষণের ওপর নজর রাখা হয়েছিল, তখন কলকাতা ভারতের অন্যান্য বড় শহরের তুলনায় দূষণে অনেক কম ছিল।”

তবে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের রাতের রিপোর্ট বলছে সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা। রাত ১২টার পর কলকাতার বালিগঞ্জ ও বিধাননগরের এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (AQI) ৪০০ ছাড়িয়ে যায়, যা ‘গুরুতর’ (Severe) মাত্রায় পড়ে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি দিল্লির থেকেও খারাপ অবস্থা নির্দেশ করে।

শব্দবাজির দাপটে অতিষ্ঠ শহরবাসী

দমদম, নিউটাউন, যাদবপুর, পার্ক স্ট্রিট, বিধাননগর—প্রায় সর্বত্রই গভীর রাত পর্যন্ত বাজি ফাটানো চলেছে দেদারে। কোথাও রাস্তায় তুবড়ি, চরকি, চকলেট বোমা, আবার কোথাও চলন্ত ট্রেনে ছোড়া হচ্ছে বাজি! আতঙ্কে সিঁটিয়ে ছিলেন শিশু, বয়স্ক ও অসুস্থ মানুষজন।

রাত ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত কেবল সবুজ বাজি পোড়ানোর অনুমতি থাকলেও, বহু জায়গায় রাত ২টা পর্যন্ত শব্দবাজির তাণ্ডব চলেছে।

দূষণ ও অভিযোগের পরিসংখ্যান

দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কন্ট্রোল রুমে সোমবার রাত ১২টা পর্যন্ত জমা পড়েছে ৪১টি অভিযোগ, যার বেশিরভাগই শব্দবাজি সংক্রান্ত।
সবচেয়ে বেশি অভিযোগ এসেছে কসবা, নিউ আলিপুর, সল্টলেক, শিয়ালদহ, যোধপুর পার্ক, ভবানীপুর ও বালিগঞ্জ এলাকা থেকে।

পুলিশের কাছেও এসেছে শতাধিক অভিযোগ।
কলকাতা পুলিশ জানিয়েছে—

গ্রেফতার: ১৮৩ জন (শব্দবাজি সংক্রান্ত অভিযোগে)

অন্যান্য অপরাধে গ্রেফতার: ৪৫১ জন

বাজেয়াপ্ত বেআইনি বাজি: ৮৫১.৪৫ কেজি

জুয়া খেলতে গিয়ে ধরা পড়েছেন: ৬ জন

ট্র্যাফিক আইন ভাঙায় শীর্ষে কলকাতাবাসী

দীপাবলির রাতে ট্র্যাফিক আইন ভাঙার সংখ্যাও চমকে দেওয়ার মতো—

মোট আইনভঙ্গের ঘটনা: ৮৮২

হেলমেট ছাড়া বাইক চালানো: ৫১৪

বেপরোয়া গাড়ি চালানো: ১১৬

মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালানো: ৯৯

অন্যান্য অপরাধ: ১৫৬

পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ বিশেষজ্ঞদের

পরিবেশবিদদের মতে, পুলিশের দাবি “পরিসংখ্যানগতভাবে আশাব্যঞ্জক হলেও বাস্তব ছবিটা ভয়াবহ। শব্দের মাত্রা কম বলা হলেও, ডেটা সংগ্রহের সময় ও এলাকার ওপর নির্ভর করে সেই গড় বের করা হয়েছে। কিন্তু নাগরিক জীবনের ওপর এর প্রভাব ছিল বিপুল,” মন্তব্য করেছেন এক পরিবেশ বিশেষজ্ঞ।

দীপাবলির রাতে কলকাতার চিত্র একদিকে আলো ও আনন্দের, অন্যদিকে শব্দ ও ধোঁয়ার দমবন্ধ করা বাস্তবতা। পুলিশের দাবি দূষণ কম, কিন্তু মানুষের অভিজ্ঞতা বলছে—আবারও ‘বাজি’ জিতেছে সচেতনতার বিরুদ্ধে।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version