কলকাতার দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত এক আইন কলেজের চত্বরে ২৪ বছর বয়সি এক ছাত্রীর উপর গণধর্ষণের অভিযোগে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। ঘটনার দিন ছিল ২৫ জুন। অভিযুক্তরা কলেজেরই কর্মী এবং দুই ছাত্র। এই তিন জনেরই তৃণমূল-যোগ প্রকাশ্যে এসেছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযুক্তরা ছাত্রীর উপর শারীরিক নির্যাতন চালানোর সময় পুরো ঘটনার ভিডিও রেকর্ড করে। অভিযোগ, ভিডিও ফাঁস করার ভয় দেখিয়ে নির্যাতিতাকে ব্ল্যাকমেলও করা হয়। অভিযুক্ত প্রধান ব্যক্তি কলেজের এক স্টাফ, মনোজিৎ মিশ্র। বাকি দুই অভিযুক্ত প্রথম বর্ষের ছাত্র জ়াইব আহমেদ (১৯) এবং প্রমিত মুখার্জি (২০)।
পুলিশে দায়ের করা অভিযোগে নির্যাতিতা জানান, ঘটনার সময় তাঁকে হকির স্টিক দিয়ে মারধর করা হয়। তাঁর প্রেমিককে খুনের হুমকিও দেওয়া হয়। ছাত্রী জানিয়েছেন, তিনি বারবার কাঁদতে কাঁদতে ছেড়ে দেওয়ার জন্য বলেছিলেন। এমনকি, এক সময় অভিযুক্তের পা পর্যন্ত ধরে মিনতি করেন।
নির্যাতিতা বলেন, ‘‘তিনজন মিলে কলেজের গেট বন্ধ করে দেয়। আমি বেরোতে পারিনি। গার্ডও সাহায্য করেননি। আমি হাসপাতলে যেতে চাইছিলাম, কিন্তু ওরা কিছুতেই নিয়ে যেতে রাজি হয়নি।’’
পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তদের মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করে ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে গণধর্ষণ, শারীরিক নির্যাতন এবং ব্ল্যাকমেলের ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে।
ঘটনার তদন্তে উঠে এসেছে, ২৫ জুন সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিট থেকে রাত ১০টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত চলেছিল এই নির্যাতন। নির্যাতিতা বাড়ি ফিরে পরিবারের কাছে সমস্ত ঘটনা খুলে বলেন। এরপরই ২৬ জুন পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়।
এদিকে, অভিযুক্ত মনোজিৎ মিশ্রের আইনজীবী আজম খান দাবি করেছেন, ‘‘এটি সম্পূর্ণ মিথ্যে অভিযোগ। রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছেন আমার মক্কেল। তাঁকে ফাঁসানো হচ্ছে।’’
পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা জানান, নির্যাতিতার মেডিক্যাল পরীক্ষার রিপোর্টেও গণধর্ষণের ঘটনা প্রমাণিত হয়েছে। অভিযুক্ত তিনজনকেই আদালতে পেশ করা হয়েছে এবং চার দিনের পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
এই ঘটনা নতুন করে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে ইন্টার্নের উপর হওয়া নির্মম গণধর্ষণ ও খুনের স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছে।