Home খবর কলকাতা শতবর্ষে স্মরণ অভিনেতা সন্তোষ দত্তকে, কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে বিশেষ প্রদর্শনী

শতবর্ষে স্মরণ অভিনেতা সন্তোষ দত্তকে, কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে বিশেষ প্রদর্শনী

‘জটায়ু’-খ্যাত অভিনেতা সন্তোষ দত্তের জন্মশতবর্ষে কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে আয়োজিত হচ্ছে বিশেষ আলোকচিত্র প্রদর্শনী। নাতি পি রাজ জানিয়েছেন, প্রয়োজনে তিনি বিরল ছবি ও স্মারক সামগ্রী উৎসব আয়োজকদের সঙ্গে ভাগ করবেন।

Santosh Dutta

হাইইইলি সাসপিশাস…!’— ঠিক জটায়ুরই মতো বিস্ময়ের সুরে প্রশ্ন জাগে, কেন অভিনেতা সন্তোষ দত্ত-এর মতো এক অসাধারণ শিল্পী কোনও বড় পুরস্কার পাননি?
চলচ্চিত্রপ্রেমীদের সেই আক্ষেপ নিয়েই এবার শতবর্ষে স্মরণ করা হবে তাঁকে।

আসন্ন ৩১তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব (KIFF)-এ আয়োজন করা হচ্ছে ‘সন্তোষ দত্ত স্মরণে’ একটি বিশেষ আলোকচিত্র প্রদর্শনী। এই প্রদর্শনীটি অনুষ্ঠিত হবে গগনেন্দ্র শিল্প প্রদর্শশালায়, যেখানে আরও থাকবে প্রদীপ কুমার, গুরু দত্ত, রবার্ট অল্টম্যান, স্যাম পেকিনপা এবং রিচার্ড বার্টনের উপর প্রদর্শনীও।

একজন উৎসব সূত্রে জানা গিয়েছে, “আমরা সন্তোষ দত্ত সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য ও ছবি সংগ্রহ করছি। পরিচালক সন্দীপ রায় আমাদের কিছু মূল্যবান ছবি পাঠিয়েছেন, যেগুলি প্রদর্শনীতে ব্যবহার করা হবে।”

আইনজীবী থেকে অমর চরিত্রে

পেশায় একজন ক্রিমিনাল ল’য়ার হলেও সন্তোষ দত্তের নাম ইতিহাসে অমর হয়ে আছে ‘জটায়ু’ চরিত্রের মাধ্যমে। সত্যজিৎ রায়ের সোনার কেল্লাজয় বাবা ফেলুনাথ-এ তাঁর অভিনয় আজও দর্শকের মুখে মুখে ঘোরে।
তবে তাঁকে শুধুমাত্র কৌতুক অভিনেতা হিসেবে দেখলে তা হবে বড় ভুল— গুপি গাইন বাঘা বাইন-এ তাঁর অভিনয় প্রমাণ করে, কতটা বহুমাত্রিক ছিলেন তিনি।

জন্মশতবর্ষে নাতির স্মৃতিচারণা

১৯২৫ সালের ২ ডিসেম্বর কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন সন্তোষ দত্ত। ১৯৮৮ সালে তিনি প্রয়াত হন।
তাঁর নাতি পি রাজ জানিয়েছেন, “আমার দাদু কোনও গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় বা রাজ্য সম্মান পাননি, অথচ সকলেই স্বীকার করেন তিনিই ছিলেন সেরা জটায়ু। তাঁর মতো প্রতিভা যদি অন্য দেশে জন্মাত, আজ তাঁর সম্মান অন্য উচ্চতায় পৌঁছাত।”

পি রাজ আরও জানান, প্রয়োজনে তিনি তাঁর দাদুর কিছু দুর্লভ ছবি, ট্রফি, পোশাক এবং স্মোকিং পাইপ চলচ্চিত্র উৎসবের প্রদর্শনীর জন্য দিতে ইচ্ছুক।

থিয়েটারে হাসির ঝড় তুলেছিলেন

সন্তোষ দত্ত মঞ্চেও ছিলেন সমান জনপ্রিয়। নাটক কনে বিভ্রাট-এ তাঁর অভিনয় দর্শকদের হাসির বন্যায় ভাসিয়েছিল। রাজ বলেন, “আমি ছোটবেলায় ‘কনে বিভ্রাট’-এর মহড়ায় তাঁকে দেখেছি। নিজেও জ্ঞানেশ মুখোপাধ্যায়ের নির্দেশনায় থিয়েটারে অভিনয় করেছি। আমার চরিত্র নিয়েই ‘জয়জয়ন্তী’ নামে একটি নাটক দুই বছর ধরে রঙ্গনায় মঞ্চস্থ হয়েছিল।”

স্মৃতির ঠিকানা

সন্তোষ দত্তের অ্যামহার্স্ট রো-র বাড়িটি এখন আর নেই, বিক্রি হয়ে গেছে বহু বছর আগে। তবে পরিবারের কাছে এখনও অমূল্য স্মৃতিগুলি রয়ে গেছে। রাজ জানান, “দাদু আমাকে সৌভাগ্যের প্রতীক ভাবতেন। গুরুত্বপূর্ণ মামলার রায় ঘোষণার দিন আমাকে সঙ্গে নিয়ে আদালতে যেতেন।”

তিনি বর্তমানে পেশায় সংগীতশিল্পী। তবে কখনওই দাদুর নাম ব্যবহার করে কোনও সুযোগ নেননি।

KIFF-এ এক আবেগময় শ্রদ্ধা

চলচ্চিত্র উৎসবের এই বিশেষ প্রদর্শনী তাই শুধু একজন অভিনেতাকে নয়, এক প্রজন্মের সাংস্কৃতিক স্মৃতিকে ফিরিয়ে আনবে। সন্তোষ দত্ত—যিনি হাসির আড়ালে বাঙালির জীবনবোধ ও মানবিকতাকে ফুটিয়ে তুলেছিলেন, তাঁকে এবার নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরবে কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব।

📰 আমাদের পাশে থাকুন

নিরপেক্ষ ও সাহসী সাংবাদিকতা টিকিয়ে রাখতে খবর অনলাইন আপনার সহায়তা প্রয়োজন। আপনার ছোট্ট অনুদান আমাদের সত্য প্রকাশের পথে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।

💠 সহায়তা করুন / Support Us

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version