নিজস্ব প্রতিনিধি: উত্তরভারতীয় শাস্ত্রীয়সংগীতের প্রবাদপ্রতিম শিল্পী প্রভাতী মুখোপাধ্যায় সম্প্রতি পূর্ণ করলেন তাঁর সংগীতজীবনের ষাটটি উজ্জ্বল বসন্ত। এই উপলক্ষ্যে সম্প্রতি কলকাতার অহীন্দ্র মঞ্চে আয়োজন করা হয়েছিল ‘প্রভাতী-সন্ধ্যা’ নামে একটি মনোজ্ঞ সংগীত-সন্ধ্যার। বর্ষীয়ান শিল্পী আসরে বসে আবার প্রমাণ করে দিলেন যে তাঁর গলার তারুণ্যকে ছুঁতে পারেনি তাঁর বয়স।
এ দিন প্রভাতীর গানের নিবেদনে শ্রোতারা ফিরে গিয়েছিলেন ঠুমরি, গজল, দাদরার বোলবাটের যুগে, যার উৎসমুখে শিল্পী বহন করে চলেছেন একাধারে পাটিয়ালা ও কিরানা ঘরানার অতুল ঐশ্বর্য। ঈশ্বরের পরম করুণাকে নতমস্তকে স্বীকার করে শিল্পী তাঁর সংগীতজীবনের চলার পথের দু’ ধার ভরিয়ে থাকা শ্রোতৃমণ্ডলীকে জানান অন্তরের ভালোবাসা।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই মঞ্চে আসেন শিল্পীর কন্যা তনয়া ভাদুড়ি। বসন্তবাহারে আধারিত নিখুঁত উচ্চারণে ভজন পরিবেশন করে অনুষ্ঠানের সুর এক অনন্য উচ্চতায় তুলে দেন তনয়া।
এর পর আসরে বসেন প্রভাতী মুখোপাধ্যায়। অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে তিনি তাঁর সুদীর্ঘ সংগীতজীবনে যে সব প্রখ্যাত গীতিকার ও সুরকারের সুরে গান গেয়েছেন, তাঁদের একটি করে গান শোনান শ্রোতাদের, যা এ দিনের অনুষ্ঠানের এক বিরল প্রাপ্তি। তাঁর বেছে নেওয়া গীতিকার ও সুরকারদের মধ্যে ছিলেন জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ, রবি গুহমজুমদার, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, ভি বালসারা, তপন সিনহা, কল্যাণ সেনবরাট, অভিজিৎ বসু ও পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়। এই পর্বে গাওয়া গানগুলি ছিল, ‘বাঁশি মোরে’, ‘ছিল প্রয়োজন’, ‘মিছে এ ধরণী’, ‘না জানি এ কোন’, ‘কথায় কথায় বলো’, ‘কাঁটা বনে তুলতে গেলাম’ ও ‘ফুল করবী ঘোমটা খোলো’।
প্রথম পর্বের শেষে এই সব গীতিকার ও সুরকার ও সিনেমা নির্দেশকদের হাতে বা তাঁদের উত্তরসূরি ও প্রতিনিধিদের হাতে শিল্পী কৃতজ্ঞতাস্বরূপ তুলে দেন প্রীতিউপহার ও স্মারক।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে বর্ষীয়ান শিল্পী গেয়ে শোনান ঘরানা কেন্দ্রিক গান, যার অন্যতম ছিল ঠুমরি, গজল, দাদরা ইত্যাদি। এর মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য হল, ‘আয়ে না বালম’, ‘কিসসে পুছে হমনে’, ‘ইয়াদ পিয়া কি আয়ে’, ‘কোয়েলিয়া মত কর পুকার’, ‘জোছনা করেছে আড়ি’ ও ‘মোর বালামওয়া পরদেশিয়া’। শিল্পীকে এই পর্বে তবলায় সহযোগিতা করেন প্রখ্যাত তবলাবাদক দীপঙ্কর আচার্য। শিল্পী তাঁকেও বরণ করে নেন প্রীতিউপহার ও স্মারক দিয়ে। দ্বিতীয় পর্বের অনুষ্ঠানের শেষে দুটি ভোজপুরি গান পরিবেশন করেন শিল্পী যা তিনি রেকর্ড করেছিলেন ভি বালসারার সুর পরিচালনায়।
সমগ্র অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন মধুমিতা বসু। অনুষ্ঠানের নামকরণ থেকে শুরু করে সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিলেন বিপ্লব রায়। এই অনুষ্ঠানের সেরা প্রাপ্তি মঞ্চে একত্র বসে মা ও মেয়ের পারস্পরিক আদানপ্রদান ও কথাবার্তা। বহু দিন শ্রোতারা মনে রাখবেন এমন একটি অনুষ্ঠান।
আরও পড়ুন
অক্ষয় তৃতীয়ায় সোনা কেনার সময় সতর্ক থাকুন, কী ভাবে আসল সোনা চিনবেন
পান্তা ভাত কেন খাবেন? পান্তা ভাতের উপকারিতা কী? এই ৫ টি সুফল পেতে খেতে পারেন পান্তা ভাত