কলকাতা: আজ ছটপুজো। প্রথা অনুযায়ী আজ সন্ধ্যায় এবং কাল শুক্রবার সকাল পালিত হবে পুজো। সমস্ত শক্তির উৎস সূর্যদেবের আরাধনাই ছটপুজো বলে পরিচিত। নানা আচার-অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সূর্যদেবকে অর্ঘ্য প্রদান করা হয়। এই অর্ঘ্য প্রদানের সবচেয়ে কাম্য জায়গাটি হল মা গঙ্গা। কিন্তু গঙ্গা তো আর সর্বত্র বয় না। তাই গঙ্গার বদলে অন্য কোনো নদী বা সরোবর বা নিকটবর্তী কোনো জলাশয়ে অর্ঘ্য নিবেদন করতে হয়। এই অর্ঘ্য নিবেদন থেকে হয় জলদূষণ। সেই দূষণ রোধে নানা ব্যবস্থা নেয় স্থানীয় প্রশাসন।
কলকাতা শহরে যাঁরা ছটপুজো করেন তাঁদের অনেকেই গঙ্গার সুবিধা পান। কিন্তু সকলের বাড়ি থেকে গঙ্গা তো কাছে নয়। তাই এত দিন ছটপুজোর অনেকেই বেছে নিতেন শহরের দুটি সরোবর – দক্ষিণের রবীন্দ্র সরোবর এবং উত্তরপূর্বের সুভাষ সরোবর। কিন্তু এই ছটপুজোর আচারবিধি পালন করতে গিয়ে মাত্রাতিরিক্ত ভাবে দূষিত হয় দুটি সরোবর। সরোবরদুটি রক্ষা করতে আওয়াজ তোলেন পরিবেশবিদরা। তাঁদের সঙ্গে শামিল হন সাধারণ মানুষও। ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইবুনাল দুটি সরোবরে ছটপুজো পালন নিষিদ্ধ করে দেয়। ফলে কয়েক বছর ধরে ছটপুজোর সময় বন্ধ করে দেওয়া হয় দুটি সরোবর। এ বারেও তার অন্যথা হয়নি।
২০১৮-এর ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে তা সুনিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নিয়েছে কেএমডিএ (কলকাতা মেট্রো পলিটান ডেভেলপমেন্ট অথরিটি)। বুধবার রাত থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে দুই সরোবরের ফটক। ২৫ ফুট লম্বা বাঁশের ব্যারিকেড দিয়ে রবীন্দ্র সরোবরের ৮টা গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সরোবরের মধ্যে যে ছ’টি ক্লাব আছে, তারাও বুধবার রাত ৯টা থেকে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত ক্লাব বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দুটি সরোবরের গেটেই পুলিশ মোতায়েন করার ব্যবস্থা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা জারি করা সত্ত্বেও ২০১৮-য় তা অমান্য করে হাজার হাজার পুণ্যার্থী দুটি সরোবরে ছটপুজো পালন করে সরোবরের জল ও পরিবেশ মারাত্মক ভাবে দূষিত করে। সেই ঘটনা থেকেই শিক্ষা নিয়েছে কেএমডিএ এবং পুরসভা।
মনোহরপুকুরে তৈরি হয়েছে কৃত্রিম জলাশয়। ছবি: রাজীব বসু।
কৃত্রিম জলাশয়ের ব্যবস্থা
দুটি সরোবর বন্ধ, গঙ্গাতেও নানা নিষেধাজ্ঞা। তা হলে পুণ্যার্থীরা যাবেন কোথায়? দক্ষিণ কলকাতায় ৬টা কৃত্রিম জলাশয় তৈরি করে সেগুলিতে ১৫ লক্ষ লিটার জল ভরে দিয়েছে কলকাতা পুরসভা। বালিগঞ্জের পন্ডিতিয়া রোড ও জামির লেন, টালিগঞ্জের দেশপ্রাণ শাসমল রোড ও ঝালদার মাঠে ওই জলাশয় তৈরি করা হয়েছে। ওই জলাশয়ে জল ভরার জন্য ৩০০ ট্যাঙ্কারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিটি ট্যাঙ্কারের ক্ষমতা ৫০০০ লিটার। কৃত্রিম জলাশয় তৈরি করা হয়েছে মনোহরপুকুর আর ভবানীপুরের নর্দার্ন পার্কেও।
৬টি কৃত্রিম জলাশয় ছাড়াও উত্তর কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় এবং বেলেঘাটা ও নারকেলডাঙাতে অস্থায়ী জলশায় তৈরি হয়েছে। ছটপুজোর আচার-অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়ে যাওয়ার পর ওই সব জলাশয় ভেঙে ফেলা হবে।