অজানা কত ইতিহাসের সাক্ষ্য দেয় আমাদের কলকাতা। এ শহরের সঙ্গে জড়িয়ে আছে গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। যার স্মৃতি বহন করছে আনন্দনগরী। ইতিহাস ঘাটলে জানা যায় এই শহর ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী হওয়ার আগে থেকে সুগঠিত ও সমৃদ্ধ নগর ছিল।
বাংলার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অনন্য সাক্ষী হতে চাইলে একবার ঘুরে আসুন বড়িশার সাবর্ণ রায় চৌধুরী পরিবারের বাড়ি থেকে। জমিদার লক্ষ্মীকান্ত গঙ্গোপাধ্যায় সাবর্ণ রায়চৌধুরীদের পূর্বসূরি ছিলেন। তাঁর আমলে আটখানি নিষ্কর পরগনার ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়।
সম্প্রতি বড়িশা সাবর্ণ রায়চৌধুরীদের বড়বাড়িতে শুরু হয়েছে ১৯তম কলকাতা আন্তর্জাতিক ইতিহাস উৎসব। আয়োজনে সাবর্ণ রায়চৌধুরীদের পরিবার পরিষদ। সাবর্ণ সংগ্রহশালা হল বাংলার গর্ব, যা প্রতিবছরই কোনো না কোনো ইতিহাস সৃষ্টি করে বিশেষ থিমের মাধ্যমে। যার মাহাত্ম্য অপরিসীম। থিম কান্ট্রি জার্মানি। জার্মানির ইতিহাস, ডাকটিকিট, সুইডেনে তৈরি দেশলাই, মুদ্রা ও পর্যটন নিয়ে বিশেষ উপস্থাপনা। জার্মানির সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক উপাদান ও ছবি গ্যালারিতে প্রদর্শিত হয়েছে। উৎসবের সহযোগিতায় থাকছে নিউ আলিপুর কলেজ এবং নলেজ পার্টনার বেহালা কলেজ।

এবারের বিশেষ আকর্ষণ ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতের গায়িকা গওহর জান, চলচ্চিত্র অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, ক্রীড়াবিদ ও ড্রিবলিংয়ের রাজা চুনী গোস্বামীকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করা হয়েছে। তাঁদের জীবনের অবদান, ব্যবহৃত সামগ্রী, তৈলচিত্র ও বহু পুরনো ছবি দিয়ে প্রদর্শনী সাজিয়ে তোলা হয়েছে।
শ্রেষ্ঠ শাস্ত্রীয় সংগীত শিল্পী গওহর জান সেকালের ব্রিটিশ সরকারের জুলুমের তোয়াক্কা না করে সবসময় সোচ্চার হয়েছেন। পিতৃতান্ত্রিক বাবু সমাজের মেহফিলে তাঁর ঠুমরি রাতকে করেছে আলো। গহর জানের ব্যাবহৃত নান্দনিক কাঠের আসবাব এই প্রদর্শনীর এক বিশেষ আকর্ষণীয়তা।
উনিশ শতকে দূরবর্তী স্থানে এনকোডিং ব্যাবহার করে বার্তা পাঠানোর ব্যবহৃত যন্ত্র টেলিগ্রাফ। সেকালে এ যেন তথ্যপ্রযুক্তির জয়। গ্যালারিতে টেলিগ্রাফ যন্ত্রটিও প্রদর্শিত হয়েছে।
৯ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে ১৯তম আন্তর্জাতিক ইতিহাস উৎসবের সূচনা হয়। চলবে ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। ১০ ফেব্রুয়ারি বাংলার ঐতিহ্য – বাংলার কৃষ্টি দিবস পালিত হবে। এবছর স্বামী যোগানন্দ স্মৃতি স্মারক সম্মান পাবেন নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী। প্রণব রায় স্মৃতি স্মারক সম্মান পাচ্ছেন অন্তরা চৌধুরী। সত্য চৌধুরী স্মৃতি স্মারক সম্মান পাবেন অন্বেষা দত্তগুপ্ত।
চারদিনের এই অনুষ্ঠানে থাকবে কুইজ, গানের অনুষ্ঠান, শ্রুতি নাটক, নৃত্যানুষ্ঠান সহ আরও অনেক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও শিল্পের এক প্রদর্শনীর সাক্ষী হতে চলে আসুন বড়িশা সাবর্ণ রায়চৌধুরীদের বড়বাড়িতে।