কলকাতা: শনিবার আরজি কর-কাণ্ডের তিন মাস পূর্ণ হল। সেই ঘটনার প্রতিবাদে এবং ন্যায়বিচারের দাবিতে জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনেরও তিন মাস হল। কিন্তু বিচার এখনও অধরা। সেই বিচার চেয়েই এ দিন তিনটি কর্মসূচি পালন করা হল – কলেজ স্কোয়্যার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিল, রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজগুলিতে ‘দ্রোহের গ্যালারি’ এবং ‘অভয়া মঞ্চ’-এর ডাকে ‘জনতার চার্জিশিট’।
এ দিন ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডাক্তার ফ্রন্টের (ডব্লুবিজেডিএফ) ডাকে মিছিল সংঘটিত হয় কলেজ স্কোয়্যার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত। ওই মিছিলে জুনিয়র ডাক্তাররা ছাড়াও সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে যোগ দেন। অনেকেরই হাতে ছিল প্ল্যাকার্ড, কারও হাতে জাতীয় পতাকা। শোনা গিয়েছে স্লোগান ‘বিচার চাই’।
‘অভয়া মঞ্চ’-এর ডাকে শামিল সাধারণ মানুষ। ছবি: শ্রয়ণ সেন।
আন্দোলনকারী চিকিৎসক দেবাশিস হালদার, স্নিগ্ধা হাজরা, পুলস্ত্য আচার্য, পরিচয় পণ্ডা, অনুষ্টুপ মুখোপাধ্যায়েরাও মিছিলে ছিলেন। স্নিগ্ধা, পরিচয়, পুলস্ত্য এবং অনুষ্টুপ ধর্মতলায় অনশন করেছিলেন। আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের হাতে প্ল্যাকার্ডের পাশাপাশি ছিল ভারতের সংবিধানও। সামনের সারিতে ন্যায়ের মূর্তি হাতে হাঁটতে দেখা যায় এক জুনিয়র ডাক্তারকে। অভিনেত্রী দেবলীনা দত্ত, চৈতি ঘোষালেরাও মিছিলে পা মেলান। মিছিল এসে পৌঁছোয় রানি রাসমণি অ্যাভেনিউয়ে যেখানে ‘অভয়া মঞ্চ’-এর ডাকে শনিবার পালিত হয় ‘জনতার চার্জশিট’।
আরজি কর হাসপাতালে ‘দ্রোহের গ্যালারি’। ছবি: রাজীব বসু।
শনিবার ধর্মতলায় রানি রাসমণি অ্যাভেনিউয়ে ‘জনতার চার্জশিট’ কর্মসূচি পালন করে ‘অভয়া মঞ্চ’। আরজি কর-কাণ্ডের বিচারের দাবিতে কয়েক সপ্তাহ আগে ৮০টিরও বেশি সংগঠন এক হয়ে তৈরি করেছে ‘অভয়া মঞ্চ’। এ দিন ‘জনতার চার্জশিট’ কর্মসূচিতে ছিল পথনাটক, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং বক্তৃতা। এ ভাবেই চলে প্রতিবাদ। আরজি কর হাসপাতালে ধর্ষণ এবং খুনের মামলায় চার্জ গঠন হয়েছে শিয়ালদহ আদালতে। সিবিআইয়ের চার্জশিট অনুযায়ী একমাত্র অভিযুক্ত ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ার। এই চার্জশিট নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে ‘অভয়া মঞ্চ’ এবং তারই প্রতিবাদে সংগঠনের সদস্যেরা নিজেদের মতো করে একটি চার্জশিট তৈরি করেছেন। ওই চার্জশিটে আরজি কর-কাণ্ডের তদন্ত এবং বিচার নিয়ে নানা প্রশ্ন, নানা অভিযোগ তোলা হয়েছে এবং সাধারণ মানুষ তাতে সই করেছেন।
শনিবার তৃতীয় কর্মসূচিটি ছিল ‘দ্রোহের গ্যালারি’। কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে এই কর্মসূচি পালনের ডাক দেয় জেডিএফ। জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের বিভিন্ন ছবি, পোস্টার, ব্যানার, কবিতা, স্থাপত্য ইত্যাদি প্রদর্শিত হয়েছে ওই গ্যালারিতে। জুনিয়র ডাক্তারেরাই আন্দোলনের ছবি পাঠানোর কথা বলেছিলেন। সেই ডাকেই সাড়া দিয়ে সাধারণ মানুষ ছবি তুলে পাঠিয়ে দেন। সেই সব ছবি প্রদর্শিত হয়েছে ‘দ্রোহের গ্যালারি’তে। প্রদর্শনী চলেছে আরজি কর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনেও। এই জরুরি বিভাগ সেই বিল্ডিংয়েই যার চারতলায় রয়েছে সেমিনার হল যেখানে গত ৯ অগস্ট উদ্ধার হয়েছিল ধর্ষিতা জুনিয়ার ডাক্তারের দেহ। মেয়েদের রাত দখলের কর্মসূচির সময় এখানেই ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছিল।
আন্দোলনকারী ডাক্তারদের দাবি, তিন মাস পেরিয়ে গেলেও বিচার অধরাই রয়েছে। তবে তাঁরা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা রাজপথেই থাকবেন। আন্দোলন ছেড়ে কোথাও যাবেন না।