ওয়াকফ বিল নিয়ে মঙ্গলবার যৌথ সংসদীয় কমিটির (জেপিসি) বৈঠকে ব্যাপক উত্তেজনা। কাচের বোতল ভেঙে হাত রক্তাক্ত হল তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের। ঘটনাটি ঘটে যখন বিজেপি সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এবং কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় চলছিল।
সূত্র অনুযায়ী, বৈঠকের সময় কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় উত্তেজিত হয়ে কাচের বোতল টেবিলে আঘাত করেন, যার ফলে তাঁর হাতে গুরুতর চোট লাগে। আহত অবস্থায় তাঁর হাতে চারটি সেলাই করা হয়। পরে তাঁকে মিটিং রুমে ফিরে যেতে সহায়তা করেন এআইএমআইএম প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়াইসি এবং আপ নেতা সঞ্জয় সিং।
এই ঘটনার ফলে বৈঠকটি কিছু সময়ের জন্য স্থগিত করতে হয়। বিজেপি সাংসদ জগদম্বিকা পালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এবং আইনজীবীদের মতামত শোনার সময় এই উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। বিরোধী সদস্যরা তাঁদের অংশগ্রহণ নিয়ে প্রশ্ন তুললে বিতর্ক শুরু হয়।
সূত্র জানিয়েছে, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় নির্ধারিত সময়ের বাইরে কথা বলতে গেলে বিজেপি সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় আপত্তি জানান। এরপর দুজনের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় ঘটে এবং তৃণমূল সাংসদ অসমীচীন ভাষা ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ।
বৈঠকে বিজেপি এবং বিরোধী সাংসদদের মধ্যে বিতর্ক ও বিরোধের ঘটনা আগেও ঘটেছে। গত সপ্তাহেও কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে, দিলীপ সইকিয়া এবং অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের মধ্যে বিতর্ক হয়। বিরোধী সাংসদরা অভিযোগ তোলেন যে, বিজেপি সাংসদরা অশোভন ভাষা ব্যবহার করেছেন এবং তাঁরা বৈঠক থেকে ওয়াকআউট করেন।
বিরোধী পক্ষ আরও অভিযোগ করেছে যে, জগদম্বিকা পাল বৈঠকের নিয়ম অনুযায়ী কাজ করছেন না এবং বিজেপি সাংসদদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। অন্য দিকে, বিজেপি নেতা তেজস্বী সূর্য লোকসভার স্পিকারের কাছে অভিযোগ করেছেন যে কিছু বিরোধী সদস্য জেপিসি চেয়ারপার্সনকে হুমকি দিয়েছেন এবং বৈঠকে নথিপত্র ছিঁড়েছেন।
উল্লেখ্য, ওয়াকফ (সংশোধনী) বিলটি ২৮ জুলাই সংসদে পেশ করে কেন্দ্রীয় সরকার। বিরোধী দলের তীব্র আপত্তির পর, বিলটি ৮ আগস্ট যৌথ সংসদীয় কমিটিতে (জেপিসি) প্রেরণ করা হয়। প্রস্তাবিত এই বিলের মাধ্যমে ওয়াকফ বোর্ডগুলির ক্ষমতা সীমিত করার উদ্দেশ্য রয়েছে, যাতে তারা কোনো সম্পত্তিকে ‘ওয়াকফ সম্পত্তি’ হিসেবে ঘোষণা করতে না পারে।
এ দিকে, কংগ্রেস, তৃণমূল, ডিএমকে, এসপি, আপ, মিম-সহ প্রায় সব ক’টি বিরোধী দলের বক্তব্য হল, ওই বিল সংবিধান-বিরোধী। ওই বিল এক দিকে যেমন মুসলিমদের ধর্মীয় স্বাধীনতা কেড়ে নেবে, তেমনই যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোতেও আঘাত করবে। বিলে বলা রয়েছে, আগামী দিনে কোনও সম্পত্তি ওয়াকফ হিসাবে ঘোষণা করার অধিকার ওয়াকফ বোর্ডের হাতে থাকবে না। ওই ক্ষমতা তুলে দেওয়া হবে জেলাশাসকদের হাতে।
