Home খবর দেশ ‘পাকিস্তানের অংশ হবে না’ জম্মু ও কাশ্মীর, কড়া বার্তা ফারুক আবদুল্লার

‘পাকিস্তানের অংশ হবে না’ জম্মু ও কাশ্মীর, কড়া বার্তা ফারুক আবদুল্লার

0

কাশ্মীরের বারামুল্লা জেলার কাছে বৃহস্পতিবার ঘটে যাওয়া জঙ্গি হামলায় শহিদ হয়েছেন দুই সেনা এবং দুই মালবাহক। আহত হয়েছেন আরও একজন সেনা এবং এক মাবাহক। এই ঘটনার পর প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং ন্যাশনাল কনফারেন্সের সভাপতি ফারুক আবদুল্লা কাশ্মীরের চলমান সন্ত্রাসের প্রেক্ষিতে নতুন করে শান্তির আবেদন করেছেন। পাশাপাশি কড়া বার্তাও শুনিয়ে দিলেন পাকিস্তানকে।

শুক্রবার শ্রীনগরে সাংবাদিকদের সামনে ফারুক আবদুল্লা বলেন, ‘‘এমন হামলা এই রাজ্যে ঘটে আসছে, এবং তা অব্যাহত থাকবে যতক্ষণ না ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বন্ধুত্বের পথ খুঁজে পাওয়া যায়।’’ তাঁর মতে, ভারত ও পাকিস্তান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করতে পারলে জম্মু ও কাশ্মীরের সমস্যা দীর্ঘমেয়াদে মিটে যেতে পারে।

সন্ত্রাসের কবলে কাশ্মীর

বিগত কয়েক দশক ধরে কাশ্মীরের ভূখণ্ডে বারবার জঙ্গি হামলা সংঘটিত হয়ে আসছে। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলিতে নিরাপত্তা বাহিনীকে প্রায়ই নিশানা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবারের হামলায় শোকার্ত ফারুক আবদুল্লা বলেন, ‘‘গত ৩০ বছর ধরে আমি এমন ঘটনার সাক্ষী হয়েছি। নিরীহ মানুষরা প্রাণ হারাচ্ছেন। এমন ঘটনা কাশ্মীরে অনেকবার হয়েছে এবং এগুলি অব্যাহত থাকবে যদি না সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসার কোনো পথ খুঁজে পাওয়া যায়।’’

ফারুক আবদুল্লার মতে, কাশ্মীর কখনও পাকিস্তানের অংশ হবে না। তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘‘তাহলে কেন এই সহিংসতা চালানো হচ্ছে? আমাদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করার জন্য? আমাদেরকে আরও দরিদ্র করে তোলার জন্য?’’ আবদুল্লার মতে, কাশ্মীরের মানুষ শান্তি ও উন্নয়ন চায়, হিংসা নয়।

পাকিস্তানের প্রতি কড়া বার্তা

কাশ্মীর সমস্যায় পাকিস্তানের ভূমিকা নিয়ে কড়া সমালোচনা করেন ফারুক আবদুল্লা। তিনি বলেন, ‘‘পাকিস্তান নিজেই ধ্বংসের পথে হাঁটছে এবং আমাদেরও ধ্বংসের পথে নিয়ে চলেছে। কাশ্মীরে অশান্তি উস্কে না দিয়ে, পাকিস্তানের উচিত নিজের দেশের সমস্যার দিকে মনোযোগ দেওয়া”।

কাশ্মীরের শান্তিরক্ষায় পাকিস্তানের সঙ্গে ভারত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুললে পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হতে পারে বলে বিশ্বাস করেন আবদুল্লা। তিনি পাকিস্তানের প্রতি হিংসা বন্ধ করে বন্ধুত্বের পথে এগিয়ে আসার আবেদন করেন। তিনি সতর্কবার্তা দিয়ে বলেন, ‘‘পাকিস্তান যদি বন্ধুত্বের পথ না খোঁজে, তবে ভবিষ্যৎ খুব কঠিন হতে চলেছে।’’

শহীদ সেনাদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য

ফারুক আবদুল্লা তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করে বলেন, ‘‘যারা এই হামলায় শহিদ হয়েছেন, তাঁদের আমি শ্রদ্ধা জানাই। তাঁদের পরিবারের প্রতি আমি আন্তরিকভাবে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।’’

পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়ার আশা

জম্মু ও কাশ্মীরের সাম্প্রতিক নির্বাচন এবং উল্লেখযোগ্য ভোটার উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে আবদুল্লা কোনো অনুমানের পথে হাঁটেননি। তিনি বলেন, ‘‘আমি জানি না কী ঘটেছে। মানুষ নির্বাচন করেছে এবং এখন বিধানসভা জনগণের জন্য কাজ করবে। আমরা আশা করছি কেন্দ্র জম্মু ও কাশ্মীরকে পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেবে, যাতে রাজ্য সরকার জনগণের জন্য আরও কার্যকরভাবে কাজ করতে পারে।’’

কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে সমন্বয়ের গুরুত্ব

সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লার দিল্লি সফর এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে গিয়ে ফারুক আবদুল্লা রাজ্য ও কেন্দ্রের মধ্যে সমন্বয়ের গুরুত্বের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি যখন মুখ্যমন্ত্রী ছিলাম, আমি সব সময় বলতাম যে সমন্বয় একটা ভালো জিনিস, কারণ সব কিছু তাদের হাতে।’’

অতীত থেকে শিক্ষা, ভবিষ্যতের আশঙ্কা

ফারুক আবদুল্লা মনে করেন, কাশ্মীরের বর্তমান পরিস্থিতি এবং হিংসার ঘটনাগুলি পাকিস্তান এবং ভারতের মধ্যে দীর্ঘদিনের শত্রুতা এবং রাজনৈতিক সংকটের ফলাফল। একাধিকবার কাশ্মীরের নিরীহ মানুষকে এমন পরিস্থিতির শিকার হতে হয়েছে। এই অবস্থায় ভারত এবং পাকিস্তান যদি নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থের বাইরে এসে বন্ধুত্বের পথে হাঁটে, তবে সাধারণ কাশ্মীরিদের জীবন আরও সহজ হতে পারে।

কাশ্মীরের পরিস্থিতি যেভাবে হিংসায় জর্জরিত হয়ে উঠেছে, তাতে কাশ্মীরের সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে যুব সম্প্রদায় গভীর উদ্বেগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। সামান্য ভুল পদক্ষেপ বা শত্রুতামূলক মনোভাব থেকে ঘটে যাওয়া হামলা কাশ্মীরিদের শান্তি ও স্থিতিশীলতা কেড়ে নিচ্ছে।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version