Home খবর দেশ কর্মসংস্থানের সঙ্কট! দুটি ইন্টার্নশিপ পদের জন্য ১,২০০ আবেদন

কর্মসংস্থানের সঙ্কট! দুটি ইন্টার্নশিপ পদের জন্য ১,২০০ আবেদন

মৃণাল সেনের কোরাস ছবির দৃশ্য। চাকরিপ্রার্থীদের লাইন।

ভারতে বেকারত্বের সংকট দিন দিন তীব্রতর হচ্ছে, বিশেষ করে শিক্ষিত যুবকদের মধ্যে। সম্প্রতি, আনম্যানড ডাইনামিক্সের সিইও এবং প্রধান বিজ্ঞানী শ্রীনাথ মল্লিকার্জুনান লিঙ্কডইনে এই বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি জানান, তার কোম্পানির ভারতীয় অফিসে মাত্র দুটি ইন্টার্নশিপ পদের জন্য ১,২০০ আবেদনপত্র জমা পড়েছে, যা বর্তমান কর্মসংস্থান পরিস্থিতির গুরুতর অবস্থা দেখিয়ে দিচ্ছে।

শিক্ষা ব্যবস্থার ত্রুটি: কর্মসংস্থানের অন্তরায়

মল্লিকার্জুনান ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থার কিছু মৌলিক সমস্যার দিকে ইঙ্গিত করেছেন, যা স্নাতকদের কর্মজীবনের জন্য প্রস্তুত করতে ব্যর্থ হচ্ছে:

  • প্রাথমিক প্রস্তুতির অভাব: অনেক আইআইটি শিক্ষার্থী জেইই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর পড়াশোনা বন্ধ করে দেন, ফলে তারা কর্মজীবনের জন্য প্রস্তুত হন না।
  • বেসরকারি কলেজের মানহীন শিক্ষা: অনেক বেসরকারি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় মানসম্মত শিক্ষা প্রদান করতে ব্যর্থ।
  • প্রায়োগিক জ্ঞানের অভাব: প্রথম প্রজন্মের স্নাতকরা ডিগ্রি অর্জন করলেও প্রায়োগিক জ্ঞান অর্জনে ব্যর্থ হন।
  • পুরনো সিলেবাস ও অযোগ্য শিক্ষক: পুরনো সিলেবাস, অকার্যকর পরীক্ষা পদ্ধতি এবং অযোগ্য শিক্ষকদের কারণে শিক্ষার্থীরা সঠিক দিকনির্দেশনা পান না।
  • স্বল্প দক্ষতার চাকরির ঝুঁকি: বেশিরভাগ স্নাতক শুধুমাত্র কল সেন্টার বা ক্লারিক্যাল কাজের জন্য উপযুক্ত, যা এখন এআই দ্বারা স্বয়ংক্রিয় হওয়ার ঝুঁকিতে।

তিনি সতর্ক করেছেন যে, “ভারত জনসংখ্যাগত লভ্যাংশের দিকে নয় পরিবর্তে একটি বিপর্যয়ের মুখোমুখি হচ্ছে।”

image 1

বিশেষজ্ঞদের মতামত ও সমাধান

অনেক পেশাজীবী মল্লিকার্জুনানের পোস্টের সাথে একমত পোষণ করেছেন। একজন ব্যবহারকারী স্কুল স্তরে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ চালুর প্রস্তাব দিয়েছেন, যাতে শিক্ষার্থীরা কর্মজীবনের জন্য প্রস্তুত হতে পারেন। অন্য একজন উল্লেখ করেছেন যে, হাজার হাজার আবেদনকারী একটি চাকরির জন্য আবেদন করছেন, যা সীমিত পদের জন্য চরম প্রতিযোগিতা ছবিটা স্পষ্ট করেছে।

মল্লিকার্জুনান শিক্ষার্থীদের নিজস্ব উদ্যোগে আন্তর্জাতিক বই পড়া, এনপিটিইএল কোর্স করা এবং স্বাধীন প্রকল্পে কাজ করার মাধ্যমে হাতে-কলমে অভিজ্ঞতা অর্জনের পরামর্শ দিয়েছেন।

স্টার্টআপ ও বিনিয়োগকারীদের ভূমিকা

কিছু মানুষ মনে করেন স্টার্টআপগুলি ভারতের চাকরির সংকটের সমাধান হতে পারে, তবে মল্লিকার্জুনান এ বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেছেন। তিনি মন্তব্য করেছেন, “ভাঙা শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য স্টার্টআপগুলি দ্রুত সমাধান প্রদান করা ক্যান্সারের জন্য প্যারাসিটামল নেওয়ার মতো।”

তিনি ভারতীয় বিনিয়োগকারীদেরও সমালোচনা করেছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন, “ভারতীয় ভেঞ্চার বিনিয়োগকারীরা কল্পনার দারিদ্র্যে ভুগছেন। তারা শুধুমাত্র পনজি স্কিম চালান, যেখানে ক্ষতি সরাসরি টার্নওভারের সাথে সম্পর্কিত। তারা প্রযুক্তির নিবিড় ব্যবহার সম্পর্কে কোনো ধারণা বা সাহস রাখেন না।”

বর্তমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ

ভারতে উচ্চশিক্ষার প্রসার সত্ত্বেও, অনেক স্নাতক বেকার রয়েছেন। উন্নয়নশীল দেশগুলিতে উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন যুবকদের বেকারত্বের হার ধনী দেশগুলির তুলনায় দুই থেকে তিন গুণ বেশি। এছাড়া, কর্পোরেট চাকরির উচ্চ চাপ এবং দীর্ঘ কর্মঘণ্টা কর্মীদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ভারতের কর্পোরেট সেক্টরে কর্মীরা গড়ে প্রায় ৪৭ ঘণ্টা সপ্তাহে কাজ করেন, যা বিশ্বে সর্বাধিকের মধ্যে অন্যতম। এই পরিস্থিতি কর্মীদের মধ্যে অতিরিক্ত চাপ এবং অসন্তোষ সৃষ্টি করছে।

উপরন্তু, এআই এবং স্বয়ংক্রিয়করণের উত্থান এবং প্রযুক্তির বাইরে সীমিত চাকরির সুযোগের কারণে, ভারতের বেকারত্ব সংকট আরও খারাপ হতে পারে যদি দ্রুত এবং কার্যকরী সংস্কার না করা হয়।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version