Home খবর দেশ কাঞ্চনজঙ্ঘা অভিযান বন্ধের দাবি সিকিমের মুখ্যমন্ত্রীর, অমিত শাহকে চিঠি

কাঞ্চনজঙ্ঘা অভিযান বন্ধের দাবি সিকিমের মুখ্যমন্ত্রীর, অমিত শাহকে চিঠি

কাঞ্চনজঙ্ঘা

ভারত-নেপাল সীমান্তে অবস্থিত বিশ্বের তৃতীয় উচ্চতম শৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা এবার বিতর্কের কেন্দ্রে। সেই বিতর্ক আরও উসকে দিলেন সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী প্রেম সিং তামাং। সম্প্রতি তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ-কে চিঠি লিখে অনুরোধ করেছেন, কাঞ্চনজঙ্ঘা অভিযানের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হোক এবং নেপালের সঙ্গেও আলোচনায় বসা হোক এই বিষয়ে।

সিকিম সরকারের তরফে বহুদিন ধরেই দাবি করা হয়ে আসছে, ৮,৫৮৬ মিটার উচ্চতার এই শৃঙ্গ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে একটি পবিত্র স্থান। সিকিমবাসীর কাছে এটি শুধুই একটি পাহাড় নয়, বরং তাঁদের আধ্যাত্মিক ও ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতীক। তাই রাজ্যের তরফে এই শৃঙ্গে আরোহণ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ, যা ‘স্যাক্রেড প্লেসেস অব ওয়ারশিপ (স্পেশ্যাল প্রভিশনস) অ্যাক্ট, ১৯৯১’ অনুযায়ী রক্ষিত।

তবুও সম্প্রতি বিতর্ক শুরু হয়েছে, যখন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মাউন্টেনিয়ারিং অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস (NIMAS)-এর একটি দল ‘হর শিখর তিরঙ্গা’ কর্মসূচির আওতায় নেপালের দিক দিয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা শৃঙ্গ জয় করে। সরকারি এই অভিযানে শৃঙ্গজয়ের পরেই বিষয়টি নিয়ে সিকিমে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।

মুখ্যমন্ত্রী তাঁর চিঠিতে লিখেছেন, “এই অভিযান শুধুই আইন লঙ্ঘন নয়, বরং সিকিমের মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাস ও ভাবাবেগেরও পরিপন্থী।” তিনি আরও জানিয়েছেন, গুরু পদ্মসম্ভব (গুরু রিনপোচে) এই পথ ধরেই সিকিমে প্রবেশ করেছিলেন এবং কাঞ্চনজঙ্ঘাকে তিনি সিকিমের প্রধান দেবতার আবাসভূমি হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন।

এদিকে অভিযানে অংশ নেওয়া পর্বতারোহীরা জানান, নেপালের দিক দিয়ে অভিযানে কোনও নিষেধাজ্ঞা ছিল না, তাই তারাই পরিচিত পথ ধরেই শৃঙ্গ জয় করেছেন। নেপালের সংগঠনগুলিও এই চিঠির বিষয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছে।

বিশিষ্ট পর্বতারোহী বসন্ত সিংহরায়, যিনি ২০১১ সালে কাঞ্চনজঙ্ঘা জয় করেন, বলেন, “ব্যক্তিগত অভিযানের সঙ্গে সরকারি অভিযানের ফারাক আছে। মুখ্যমন্ত্রী যদি রাজ্যের মানুষের আবেগের কথা ভেবে আবেদন করেন, তবে তা গুরুত্ব সহকারে দেখা উচিত।”
একইসঙ্গে আরেক এভারেস্টজয়ী ও ইন্ডিয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ফাউন্ডেশন–ইস্ট জোনের চেয়ারম্যান দেবরাজ দত্ত বলেন, “প্রত্যেকটা পিক খোলা থাকা উচিত অভিযানের জন্য, তবে স্থানীয় জনতার ভাবাবেগও অবশ্যই মান্যতা পাওয়া উচিত।”

এই ঘটনার পর প্রশ্ন উঠেছে—যে দেশে একটি শৃঙ্গকে পবিত্র বলে আইন করা হয়, সেই দেশেরই এক সরকারি সংস্থা কীভাবে সেই শৃঙ্গে অভিযান চালাতে পারে? এখন দেখার বিষয়, কেন্দ্রীয় সরকার এবং নেপাল সরকার এই আবেদনে কী প্রতিক্রিয়া জানায়।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version