খবর অনলাইন ডেস্ক: কেরল পিরাভি দিবসের দিনেই ইতিহাস গড়ল রাজ্য সরকার। শুক্রবার (১ নভেম্বর) মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন রাজ্য বিধানসভায় ঘোষণা করলেন, কেরল এখন ভারতের প্রথম রাজ্য, যেখানে চরম দারিদ্র্য সম্পূর্ণ নির্মূল হয়েছে। রাজ্য প্রতিষ্ঠার ৬৯তম বার্ষিকীতে এই সাফল্যকে তিনি ‘কেরলের অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের এক ঐতিহাসিক মাইলফলক’ বলে উল্লেখ করেন।
বিজয়ন জানান, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে দেওয়া অন্যতম প্রধান প্রতিশ্রুতি পূরণ করেছে সরকার। বর্তমান মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকেই চরম দারিদ্র্য দূরীকরণকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছিল। এর পর মাত্র দু’মাসের মধ্যেই রাজ্য জুড়ে শুরু হয় দরিদ্রতম পরিবারগুলোকে শনাক্ত করার প্রক্রিয়া।
কেরল ইনস্টিটিউট অব লোকাল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (KILA) তত্ত্বাবধানে শনাক্তকরণ কার্যক্রমে যোগ দেয় স্থানীয় স্বশাসিত সংস্থাগুলি, কুডুম্বশ্রী কর্মীরা এবং স্বেচ্ছাসেবকরা। দীর্ঘ জরিপ ও সমাজভিত্তিক পর্যালোচনার পর রাজ্যের ৬৪,০০৬টি পরিবারকে (মোট ১,০৩,০৯৯ জন) চরম দারিদ্র্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
মুখ্যমন্ত্রী জানান, খাদ্য, স্বাস্থ্য, বাসস্থান ও আয়ের ঘাটতি—এই চারটি প্রধান মানদণ্ডে পরিবারগুলির অবস্থা মূল্যায়ন করা হয়। প্রতিটি পরিবারের জন্য পৃথক মাইক্রো-প্ল্যান তৈরি করা হয়। এখন পর্যন্ত এই কর্মসূচিতে ব্যয় হয়েছে ১,০০০ কোটিরও বেশি টাকা, যার মধ্যে ২০২৩–২৪ এবং ২০২৪–২৫ অর্থবর্ষে ৫০ কোটি টাকা করে এবং ২০২৫–২৬ সালে ৬০ কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ করা হয়েছে।
এই উদ্যোগের আওতায় ৪,৬৭৭টি পরিবার লাইফ মিশনের মাধ্যমে নতুন ঘর পেয়েছে, আরও ২,৭১৩টি পরিবারকে জমি ও ঘর নির্মাণে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। হাজার হাজার পরিবারকে দেওয়া হয়েছে রেশন কার্ড, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষাসহায়তা এবং জীবিকা প্রশিক্ষণ।
নীতি আয়োগের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান উদ্ধৃত করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কেরলের বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের হার মাত্র ০.৪৮%, যেখানে জাতীয় গড় ১১.২৮%। তিনি বলেন, “এটি এক অসাধারণ সাফল্য। ভূমি সংস্কার, সামাজিক কল্যাণনীতি, জনস্বাস্থ্য ও শিক্ষাক্ষেত্রে দশকের পর দশক ধরে চলা প্রচেষ্টার ফল এটি।”
বিজয়ন আরও যোগ করেন, “কেরলের এই পথচলা—উচ্চ দারিদ্র্য থেকে চরম দারিদ্র্যমুক্তির দিকে—আমাদের জনগণের সম্মিলিত ইচ্ছাশক্তির প্রতিফলন।”
