ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ডঃ মনমোহন সিংহের প্রয়াণে সমাপ্ত হলো এক যুগান্তকারী অধ্যায়। বয়স হয়েছিল ৯২ বছর। বয়সজনিত নানা অসুস্থতায় ভুগছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার দিল্লির এইমসে তাঁকে ভর্তি করা হয়। রাতের দিকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তাঁর তিনি কেবল একজন রাজনীতিবিদের নয়, এক প্রজ্ঞাবান অর্থনীতিবিদের, যাঁর নেতৃত্বে উদারনীতি ভিত্তিক আর্থিক সংস্কারের পথে পা বাড়িয়ে ছিল ভারত।
ডঃ মনমোহন সিংহ ১৯৯১ সালে অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন এক গভীর সংকটের সময়ে। ভারত সেই সময় অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে ছিল। বৈদেশিক মুদ্রার ভাঁড়ারে কার্যত ফাঁকা অবস্থা, শিল্পক্ষেত্রে স্থবিরতা, এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ঋণদাতাদের চাপের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল দেশ। এই কঠিন সময়ে মনমোহন সিংহ অর্থনৈতিক উদারীকরণ, বেসরকারি খাতের বিকাশ, এবং বৈদেশিক বিনিয়োগের দরজা খোলা—তাঁর এই পদক্ষেপগুলো ভারতকে এক নতুন যুগে প্রবেশ করায়।
ডঃ মনমোহন সিংহের নেতৃত্বে ১৯৯১ সালে ভারতের অর্থনীতি যে নতুন পথে যাত্রা শুরু করেছিল, তা কেবলমাত্র একটি ইতিবাচক পরিবর্তনই নয়, বরং বহুল আলোচিত এবং সমালোচিত এক নীতি হিসেবেও দেখা হয়েছে। অর্থনৈতিক উদারীকরণ, বেসরকারি খাতের বিকাশ, এবং বৈদেশিক বিনিয়োগের দরজা খোলা—এই পদক্ষেপগুলিকে কেউ দেখেছেন ভারতের উন্নয়নের মাইলফলক হিসেবে, আবার কেউ দেখেছেন সেগুলির মধ্য দিয়ে বৈষম্য ও নির্ভরশীলতা বৃদ্ধির কারণ হিসেবে।
২০০৪ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর নেতৃত্বে ভারত বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বিকাশমান অর্থনীতিতে পরিণত হয়। তথ্যপ্রযুক্তি বিপ্লব থেকে শুরু করে গ্রামীণ কর্মসংস্থান গ্যারান্টি প্রকল্প এবং পরিকাঠামো উন্নয়নে তিনি অবিস্মরণীয় ভূমিকা পালন করেন। তাঁর জমানায় উদ্ভূত বিভিন্ন রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখেও তিনি শান্ত, স্থির এবং নীতিনিষ্ঠ থেকে দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ২০০৮ সালে বিশ্ব জুড়ে আর্থিক মন্দার সময়ও ভারতের গায়ে কিন্তু তেমন আঁচ লাগেনি।
তাঁর ব্যক্তিত্বের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য ছিল তাঁর নিরহংকার, সৎ এবং সংযমী জীবনধারা। রাজনৈতিক মহলে বিরোধীরা সমালোচনা করলেও, তাঁর সততা ও নিষ্ঠার প্রতি কখনও প্রশ্ন তোলা হয়নি। তিনি ছিলেন ‘সাইলেন্ট স্টেটসম্যান,’ যিনি কথার চেয়ে কাজে বেশি বিশ্বাস করতেন।