Home খবর দেশ বিহার ভোটের ফল প্রকাশের পর লালুর পরিবারে ভাঙন, কীভাবে চরমে পৌঁছল?

বিহার ভোটের ফল প্রকাশের পর লালুর পরিবারে ভাঙন, কীভাবে চরমে পৌঁছল?

বিহার নির্বাচনে খারাপ ফলাফলের পর রাষ্ট্রীয় জনতা দলের (আরজেডি) অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব যে চরমে পৌঁছেছে, তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ হিসেবে সামনে এসেছে রোহিনী আচার্যের বিস্ফোরক সিদ্ধান্ত। লালু প্রসাদ যাদবের মেয়ে রোহিনী আচার্য ঘোষণা করেছেন যে তিনি শুধু রাজনীতি নয়, পরিবারের সঙ্গে সম্পর্কও ত্যাগ করেছন। ভোটের ফল প্রকাশের পর দলের পর্যালোচনা বৈঠকে তেজস্বী যাদবের সঙ্গে তীব্র বিরোধই তাঁর এই সিদ্ধান্তের মূল কারণ বলে আরজেডি সূত্রের দাবি।

ফল ঘোষণার পরদিনই দলের শীর্ষ নেতারা বৈঠকে বসেন। সেখানেই তেজস্বী ও রোহিনীর মধ্যে তিক্ত বিতর্ক বাধে। রোহিনী জানান, আরজেডি কর্মীদের সঞ্জয় যাদবের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়ছে—এ বিষয়ে পদক্ষেপ করা উচিত। এই বক্তব্য তেজস্বীর পছন্দ হয়নি, বরং তিনি উত্তেজিত হয়ে বলেন, “তোমার কারণেই নির্বাচন হেরেছি। তুমি আমাদের অভিশাপ।” শুধু কথার লড়াই নয়, সূত্রের দাবি, তেজস্বী নাকি রাগের মাথায় তাঁর দিদির দিকে স্যান্ডেল ছুঁড়ে মারেন এবং তাকে অপমানজনক ভাষায় কথাও বলেন।

শনিবার রোহিনী আচার্য প্রকাশ্যে সঞ্জয় যাদব ও তেজস্বীর ক্রিকেটার বন্ধু রমিজ নেমত খানের নাম নিয়ে অভিযোগ করেন—এই দু’জনই তাঁকে দল ও পরিবার থেকে দূরে ঠেলে দিয়েছেন। কিডনি দান করে বাবাকে বাঁচানো সেই রোহিনী বলেন, “এটাই সঞ্জয় যাদব আমাকে করতে বলেছিল।”

নির্বাচনের আগেই তেজস্বী যাদব তাঁকে সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ডেকে পাঠিয়েছিলেন প্রচারে যোগ দেওয়ার জন্য। রাঘোপরের প্রচারে তাঁকে সামনে আনা হয়েছিল, যা নিয়ে তেজ প্রতাপ যাদবও অসন্তুষ্ট ছিলেন। রোহিনী চেয়েছিলেন শুধু শরন জেলার বিধানসভায় প্রচার করতে, কিন্তু তাঁকে শুধু রাঘোপরেই সীমাবদ্ধ রাখা হয়।

দলের ভেতরের দ্বন্দ্ব নতুন নয়। ২০২৩ সালে তেজস্বী তাঁকে শরন থেকে লোকসভা ভোটে দাঁড়াতে বলেন। রোহিনী প্রথমে পাটলিপুত্র চাইলে মিশা ভাটিয়াই আপত্তি জানান। শেষপর্যন্ত তিনি শরন থেকেই দাঁড়ান এবং বিজেপির রাজীব প্রতাপ রুডির কাছে পরাজিত হন। দলীয় সূত্রের মতে, তখন থেকেই তেজস্বীর ঘনিষ্ঠ সঞ্জয় যাদব বলে আসছিলেন যে রোহিনী ভবিষ্যতে তেজস্বীর জন্য ‘হুমকি’ হয়ে উঠতে পারেন। সঞ্জয় যাদব তাঁকে বহুবার অপমান করেছেন এবং সিঙ্গাপুরে ফিরে যেতে বলেছেন বলে অভিযোগ রোহিনীর ঘনিষ্ঠদের।

এছাড়া অভিযোগ উঠেছে—শরন প্রচারকে দুর্বল করার জন্য দলের ভেতরেরই একাংশ পরিকল্পিতভাবে বাধা তৈরি করেছিল। ওই ‘ষড়যন্ত্রকারীদের’ একজন শরন থেকে নিজেই প্রার্থী হতে চাইতেন এবং তিনি যাদব পরিবারে খুব ঘনিষ্ঠ বলেও জানানো হয়েছে। আরও ক্ষোভ বাড়ে যখন রোহিনীর হার নিয়ে কটাক্ষ করা দুই বিধায়ককে এই নির্বাচনে টিকিট দেওয়া হয়।

রোহিনী যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন, সেই রমিজ নেমত খান তেজস্বীর বহুদিনের বন্ধু, ক্রিকেট মাঠ থেকে রাজনীতি পর্যন্ত তিনি তেজস্বীর ‘কোর টিম’-এর অংশ। দলের সোশ্যাল মিডিয়া ও প্রচার-অভিযানের দেখভালও করেন তিনি।

বিহারের ফলের ক্ষোভ, দলের ভিতরের অন্তর্দ্বন্দ্ব, সঞ্জয় যাদব–রমিজ খানের ক্রমবর্ধমান প্রভাব—সব মিলিয়ে বহুদিনের জমে থাকা ক্ষোভই শেষ পর্যন্ত বিস্ফোরিত হয়েছে রোহিনী আচার্যের মুখে। একসময় যে পরিবার সমর্থন ও ঐক্যের প্রতীক ছিল, আজ সেই পরিবারই রাজনৈতিক ঝড়ে প্রবলভাবে নড়বড়ে।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version