Home খবর দেশ ‘ভুল ব্যাখ্যা করেছিলাম’, রামমোহনকে‘ব্রিটিশ এজেন্ট’বলার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ক্ষমা চাইলেন মধ্যপ্রদেশের উচ্চশিক্ষা...

‘ভুল ব্যাখ্যা করেছিলাম’, রামমোহনকে‘ব্রিটিশ এজেন্ট’বলার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ক্ষমা চাইলেন মধ্যপ্রদেশের উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী

রাজা রামমোহন রায়কে ‘ব্রিটিশ এজেন্ট’ বলে বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে শেষ পর্যন্ত ক্ষমা চাইতে বাধ্য হলেন মধ্যপ্রদেশের উচ্চশিক্ষামন্ত্রী ইন্দর সিংহ পারমার। মন্তব্যের পর টানা ৪৮ ঘণ্টা ধরে ব্যাখ্যা দেওয়া এবং প্রতিক্রিয়ার মুখে রবিবার একটি ভিডিও বার্তায় তিনি জানান, বিরসা মুন্ডার জীবন নিয়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি রামমোহনকে “ভুলভাবে ব্যাখ্যা” করেছিলেন। তাঁর কথায়, “আমি গভীরভাবে দুঃখিত, অনিচ্ছাকৃতভাবে ভুল বক্তব্য বলে ফেলেছিলাম। রাজা রামমোহন রায় একজন খ্যাতিমান সমাজ সংস্কারক—তাঁর প্রতি আমার পূর্ণ শ্রদ্ধা রয়েছে।”

কিন্তু তার আগেই তুঙ্গে পৌঁছে যায় বিতর্ক। শনিবার অগর-মালওয়ায় বিরসা মুন্ডার জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে পারমার দাবি করেছিলেন, রামমোহন রায় নাকি ইংরেজদের হয়ে কাজ করতেন এবং ইংরেজি শিক্ষার মাধ্যমে ভারতীয় সমাজকে বিভক্ত করার কাজে সাহায্য করেছিলেন। তিনি অভিযোগ করেন, বাংলায় ইংরেজি শিক্ষার প্রচলন একটি “ধর্মান্তকরণের চক্র” তৈরি করেছিল এবং বিরসা মুন্ডাই নাকি সেই চক্র ভেঙে আদিবাসী সমাজকে রক্ষা করেছিলেন। তাঁর এই বক্তব্যেই শুরু হয় তীব্র প্রতিক্রিয়া।

কংগ্রেস তীব্র কটাক্ষ করে বলে, রামমোহনকে ‘ব্রিটিশ দালাল’ বলা লজ্জাজনক। দলের মুখপাত্র ভূপেন্দ্র গুপ্ত প্রশ্ন করেন, তবে কি সতীদাহ প্রথা বিলোপও ব্রিটিশদের হয়ে ‘ব্রোকারেজ’? তৃণমূল কংগ্রেসও বিজেপিকে ‘মহিলা-বিরোধী’ এবং ‘বাংলা-বিরোধী’ মানসিকতার দল বলে আক্রমণ শানিয়েছে। তাদের বক্তব্য, এ ধরনের মন্তব্য বিজেপির “অশালীন মানসিকতার প্রতিফলন” এবং বাংলার সংস্কৃতি ও কিংবদন্তিদের অপমান করার ধারাবাহিকতা।

তবে পারমারকে ঘিরে বিতর্ক নতুন নয়। অতীতেও ইতিহাস নিয়ে নানা বিতর্কিত মন্তব্য করে তিনি শোরগোল তুলেছিলেন। গত বছর তিনি দাবি করেছিলেন যে ভারত আবিষ্কার করেছিলেন ভাস্কো দা গামা নয়, বরং ‘চন্দন’ নামে এক ভারতীয় বণিক। এছাড়া তাঁর দপ্তর রাজ্যের কলেজগুলিকে ৮৮টি নির্দিষ্ট বই সংগ্রহের নির্দেশ দিয়েছিল—যার অনেকগুলির লেখক জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক সংঘের সঙ্গে যুক্ত। শিক্ষাবিদরা অভিযোগ তুলেছিলেন, এতে আদর্শগত পক্ষপাত ঢুকে পড়ছে শিক্ষাব্যবস্থায়। স্কুলশিক্ষামন্ত্রী থাকাকালীনও তিনি বলেছিলেন, “দেশে এতদিন শুধু মিথ্যে ইতিহাস পড়ানো হয়েছে” এবং ভারতের প্রকৃত ইতিহাস নাকি ‘বিকৃত’ করা হয়েছে বিদেশি গবেষকদের সুবিধা মতো।

অন্যদিকে, রামমোহন রায়ের ইতিহাস কোনওভাবেই বিতর্কিত নয়। ইংরেজ শাসনের অনেক আগেই তিনি নারী অধিকার, সতীদাহ প্রথা বন্ধ, বিধবা বিবাহ, যুক্তিবাদী চিন্তা ও আধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠার দাবি তুলেছিলেন। মিশনারিদের প্রভাবের বিরুদ্ধেও তিনি যুক্তি দেখিয়েছিলেন এবং প্রশাসনিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় ইংরেজ সরকারের বিরুদ্ধে বহুবার আবেদন করেছিলেন। তাঁর লড়াই ছিল যুক্তির মাধ্যমে সমাজ সংস্কারের।

বিরসা মুন্ডার কর্মজীবনও ইতিহাসের এক উজ্জ্বল অধ্যায়—ব্রিটিশ শাসন, জমিদারি শোষণ ও মিশনারি চাপের বিরুদ্ধে তিনি মুণ্ডা সমাজকে সংগঠিত করেছিলেন। সেই ইতিহাসে কোনও বিতর্ক নেই। কিন্তু সেই প্রসঙ্গ থেকে পারমারের হঠাৎ রামমোহন রায়ের দিকে ‘দোষ চাপানোই’ নতুন বিতর্ক তৈরি করেছে।

পারমার রবিবার বলেন, সবই ছিল “স্লিপ অব টাং”—কিন্তু তাঁর সেই মন্তব্য যথেষ্ট সময় ধরে টিকে থাকায় আবার নতুন করে সামনে এসেছে প্রশ্ন—ভারতের ইতিহাসের ব্যাখ্যা করার অধিকার কার?

আরও পড়ুন: দিল্লি বিস্ফোরণ: অবৈধ উপায়ে ২০ লক্ষ টাকা পেয়েছিলেন অভিযুক্ত উমর মহম্মদ, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে এফআইআর

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version