বুধবার গভীর রাতে যন্তর মন্তরে ধর্নায় বসা কুস্তিগিরদের সঙ্গে সংঘাত দিল্লি পুলিশের কিছু কর্মীর! কুস্তিগিরদের অভিযোগ, দিল্লি পুলিশের কিছু কর্মী মদ্যপ অবস্থায় ধর্নাস্থলে পৌঁছেছিলেন এবং মহিলা কুস্তিগিরদের প্রতি অশালীন মন্তব্য করেছিলেন। যা নিয়ে পুলিশ এবং বিক্ষোভকারীদের মধ্যে শুরু হয় কথা কাটাকাটি। শেষ পর্যন্ত তা হাতাহাতিতে পৌঁছায়।
ভারতীয় কুস্তি সংস্থার সভাপতি ব্রিজভূষণ শরণ সিংহের গ্রেফতারি চেয়ে দিল্লির যন্তরমন্তরে চলছে কুস্তিগিরদের আন্দোলন। বিক্ষোভকারী কুস্তিগিরদের অভিযোগ, দিল্লি পুলিশের একটি দল মত্ত অবস্থায় বুধবার সন্ধ্যা থেকেই তাঁদের সঙ্গে অভব্য আচরণ করতে শুরু করেন। রাতে তাঁরা আচমকাই এসে মারধর করেন এবং মহিলা কুস্তিগিরদেরও গালিগালাজ করেন। তাঁদের দাবি, এতে দুই আন্দোলনকারী আহত হয়েছেন। এক জনকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে।
এক পুলিশকর্মীর একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। কুস্তিগিরদের অভিযোগ, কিছু দিল্লি পুলিশ কর্মী মদ্যপ অবস্থায় ধর্নাস্থলে পৌঁছে মহিলা কুস্তিগিরদের উদ্দেশে কী ভাবে অশালীন মন্তব্য করেছিলেন, তা ওই ভিডিয়োয় রয়েছে। ৩৫ সেকেন্ডের ভাইরাল ভিডিওতে একজন পুলিশকর্মীকে মাটিতে বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে। বিনেশ ফোগাটকেও গালিগালাজ করা হয়। ঘটনার খবর পাওয়া মাত্রই বিপুল সংখ্যক পুলিশ যন্তর মন্তরে পৌঁছায়, পরে বিষয়টি শান্ত হয়।
সংঘাতের ঘটনার পর মিডিয়ার সামনে মুখ খোলেন কুস্তিগিররা। সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় চোখে জল ঝরে পড়ে কুস্তিগির বিনেশ ফোগটের। তিনি বলেন, “সারা দিন বৃষ্টি হচ্ছে, আমাদের ঘুমানোর জায়গাও নেই। এরই মধ্যে পুলিশ এসে হামলা চালায়”। তিনি আরও বলেন, “আমরা কোনো দাগি আসামি নই যে পুলিশ আমাদের সঙ্গে এরকম আচরণ করবে। এই দিনটি দেখার জন্যই কি আমরা দেশের হয়ে এত পদক জিতলাম?”
অন্য দিকে, নয়াদিল্লির ডিসিপি প্রণব তায়াল বলেছেন, পুলিশকর্মীরা কোনো কুস্তিগিরকে আক্রমণ করেননি বা কারও সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেননি। তাঁর কথায়, “আসলে, সোমনাথ ভারতী (দিল্লির মন্ত্রী) অনুমতি ছাড়াই বিছানা নিয়ে যন্তর মন্তরে এসেছিলেন, তাই পুলিশকর্মীরা তাঁকে বাধা দেন এবং বিছানা পাততে নিষেধ করে। তখন তাঁর সমর্থক এবং কুস্তিগিররা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। কুস্তিগিররা পুলিশকর্মীদের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ আনতে শুরু করে”। ডিসিপি আরও জানান, সোমনাথ এবং তাঁর দুই সমর্থককে ঘটনাস্থল থেকে আটক করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে দিল্লি মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন স্বাতী মালিওয়ালকেও।
ঘটনায় প্রকাশ, দিল্লি সরকারের মন্ত্রী সোমনাথ ভারতী বুধবার গভীর রাতে বিনা অনুমতিতে বিছানা নিয়ে যন্তর মন্তরে পৌঁছান। সেগুলি নামানোর সময় পুলিশকর্মীরা বাধা দিতে গেলে কয়েকজন সমর্থক আহত হন। এর পর বাঁধে কুস্তিগির-পুলিশ সংঘর্ষ।
প্রসঙ্গত, ফের ধর্নায় বসেছেন দেশের নামী কুস্তিগিররা। চলতি বছরের শুরুতে ফেডারেশন প্রধান এবং অন্যান্য প্রশিক্ষকদের বিরুদ্ধে অনিয়মের প্রতিবাদে ধর্নায় বসেছিলেন তাঁরা। প্রায় মাসতিনেক পর মহিলা কুস্তিগিরদের যৌন নির্যাতনের অভিযোগ এনে দিল্লির যন্তর মন্তরে ফিরে এসেছেন তাঁরা৷ বিচার না পাওয়া পর্যন্ত তাঁরা এখানেই থাকবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন। দেশের শীর্ষ কুস্তিগির বজরং পুনিয়া ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন, “ব্রিজভূষণকে গ্রেফতার না করা পর্যন্ত আমরা এখান থেকে যাব না।”