চলতি বছরে সংসদের শীতকালীন অধিবেশন ২৫ নভেম্বর থেকে ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। শীতকালীন অধিবেশনে ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ প্রস্তাব এবং ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল, ২০২৪ নিয়ে আলোচনা জোরালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ একটি নির্বাচনী সভায় বলেছিলেন যে শীতকালীন অধিবেশনেই এই বিলটি পাস করা হবে।
এছাড়াও, ২৬ নভেম্বর, সংবিধান গৃহীত হওয়ার ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে লোকসভা এবং রাজ্যসভার একটি যৌথ অধিবেশন আহ্বান করা হয়েছে। এই বিশেষ অধিবেশনটি পুরনো সংসদ ভবনের সেন্ট্রাল হলে অনুষ্ঠিত হবে। এখানেই ২৬ নভেম্বর, ১৯৪৯ সালে ভারতের সংবিধান গৃহীত হয়েছিল। এই দিনটি সংবিধান দিবস হিসেবে পালিত হয় এবং ভারতের সংবিধান পূর্ণভাবে কার্যকর হয় ২৬ জানুয়ারি, ১৯৫০ থেকে।
বর্তমানে শাসক এবং বিরোধী, উভয় পক্ষই নিজেদের সংবিধানের রক্ষক হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করছে। একই সঙ্গে কংগ্রেস-সহ বিরোধীরা ও বিজেপি একে অপরকে সংবিধানের শত্রু হিসেবে তুলে ধরছে। চলতি বছরে অনুষ্ঠিত লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে বিরোধীরা বারবার অভিযোগ করছে যে মোদী সরকার পুনরায় ক্ষমতায় এলে সংবিধান বিপদের মুখে পড়বে। অন্যদিকে, এই বছরের জুলাইয়ে ২৫ জুনকে সংবিধান হত্যাদিবস পালনের ঘোষণা করে মোদী সরকার। যার জরুরি অবস্থার অন্ধকার দিনগুলির স্মৃতি ফিরিয়ে আনার উদ্দেশ্যে।
এই পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে আসন্ন সংসদ অধিবেশন এবং বিশেষ অধিবেশনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
এক দেশ, এক নির্বাচন
ভারতে বহু বছর ধরে কেন্দ্র ও রাজ্যের নির্বাচনের জন্য আলাদা আলাদা সময়ে ভোটগ্রহণ হয়। তবে “এক দেশ, এক নির্বাচন” ধারণাটি তুলে ধরে কেন্দ্রের বর্তমান শাসক দল বিজেপি নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার আনতে চাইছে। এই নীতির মাধ্যমে দেশের সব নির্বাচন, যেমন লোকসভা, রাজ্যসভা ও স্থানীয় প্রশাসনের নির্বাচন, একই সময়ে আয়োজন করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
কেন্দ্রের যুক্তি, “এক দেশ, এক নির্বাচন” চালুর মূল উদ্দেশ্য হল নির্বাচনের সময় ও খরচ কমানো। এই পদ্ধতিতে নির্বাচনগুলির খরচ কমবে, প্রশাসনিক কাজ সহজ হবে এবং ভোটারদের জন্যও সুবিধাজনক হবে। পাশাপাশি, বারবার নির্বাচনের জন্য প্রশাসনিক ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলির উপর যে চাপ পড়ে, তাও অনেকাংশে কমবে।
ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল, ২০২৪
ওয়াকফ বোর্ড পরিচালনাকারী আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী বিল নিয়ে বিতর্ক অব্যাহত রয়েছে। একদিকে বিরোধীদের অভিযোগ, এই বিলের মাধ্যমে ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতে চায় কেন্দ্র সরকার। অন্যদিকে, সরকার বলছে, প্রস্তাবিত সংশোধনী বিলের লক্ষ্য হলো ওয়াকফ সম্পত্তির সঠিক ব্যবহার এবং মুসলিম নারী ও বঞ্চিতদের কল্যাণ।
বিরোধীদের প্রবল আপত্তি ও হট্টগোলের মধ্যে গত ৮ আগস্ট লোকসভায় ওয়াকফ সংশোধনী বিল পেশ করেছিলেন কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু মন্ত্রী কিরেণ রিজিজু। বিলটি ‘অসংবিধানিক এবং মুসলিমদের ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপকারী’ বলে অভিযোগ তুলে বিরোধীরা একযোগে তা নিয়ে আপত্তি জানান। দীর্ঘ বিতর্কের শেষে ঐকমত্যের লক্ষ্যে বিলটি যৌথ সংসদীয় কমিটি বা জেপিসি-র কাছে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কেন্দ্র।
