Home খবর দেশ উত্তরপ্রদেশে নেকড়ের হানায় একের পর এক মৃত্যু, কেন মানববসতিতে ঢুকে আক্রমণ?

উত্তরপ্রদেশে নেকড়ের হানায় একের পর এক মৃত্যু, কেন মানববসতিতে ঢুকে আক্রমণ?

উত্তরপ্রদেশের বেহরাইচে নেকড়ের হামলায় ১০ জনের মৃত্যুর ঘটনা আতঙ্ক ছড়িয়েছে এলাকাজুড়ে। কিন্তু কেন নেকড়েরা মানুষের উপর আক্রমণ করছে? স্থানীয় বন বিভাগের এক শীর্ষ আধিকারিক জানিয়েছেন, নেকড়েরা প্রতিশোধ নিতে পারে, বিশেষ করে তাদের বাসস্থান বা শাবকদের ক্ষতি হলে। একের পর এক হামলার পর এই তত্ত্ব উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

বন কর্পোরেশনের জেনারেল ম্যানেজার সঞ্জয় পাঠক সংবাদমাধ্যমকে জানান, নেকড়েরা সাধারণত শান্ত স্বভাবের প্রাণী। কিন্তু সম্প্রতি ঘটে যাওয়া শিশুদের উপর একের পর এক হামলা বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞদের বিস্মিত করেছে। পাঠক বলেন, “নেকড়েদের মধ্যে প্রতিশোধ নেওয়ার প্রবণতা রয়েছে। যদি কেউ তাদের বাসা বা সন্তানদের ক্ষতি করে, তারা মানুষের উপর প্রতিশোধ নেয়।”

স্থানীয় গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, একটি আখখেতের ভেতর প্রায় ২ কিমি গভীরে নেকড়ের শাবক দেখা গিয়েছিল। তবে অতিবৃষ্টির কারণে সেই জায়গাটি প্লাবিত হয়, এবং গ্রামবাসীদের ধারণা, শাবকরা সেই জলে ডুবে মারা গেছে। এর পর থেকেই নেকড়ের আক্রমণ শুরু হয়।

যদিও অন্য একটি যুক্তি উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। বনপ্রাণ বিশেষজ্ঞদের মতে, জঙ্গলে বাসস্থান হারিয়ে তারা মানব বসতির দিকে যাচ্ছে। সেই সময় সামনে কেউ পড়লে তাকে আক্রমণ করছে।

১৯৯৬ সালেও একই ধরনের ঘটনা ঘটে প্রয়াগরাজে, যেখানে ১০ জন শিশু নেকড়ের শিকার হয়েছিল। তখনও নেকড়ের শাবককে আক্রমণ করার প্রতিশোধ যুক্তি উঠে এসেছে।

এখন পর্যন্ত ৬টি নেকড়ের মধ্যে ৪টি ধরা পড়েছে। আতঙ্কে সন্ধ্যার পর গ্রামবাসীরা লাঠি এবং লোহার রড নিয়ে বাইরে বের হচ্ছেন। সরকার ১০ সদস্যের একটি দল গঠন করেছে বাকি দুটি নেকড়েকে ধরার জন্য। বনমন্ত্রী অরুণ সাক্সেনা জানিয়েছেন, নেকড়েগুলিকে শান্ত করার জন্য প্রথমে তাদের ট্রাঙ্কুলাইজ করার চেষ্টা হবে। তবে সেটি সম্ভব না হলে, মারার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।

নেকড়েদের কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য:

সমাজবদ্ধ জীবন: নেকড়েরা দলবদ্ধ হয়ে শিকার করে এবং একসঙ্গে বসবাস করে। এদের দলকে প্যাক বলা হয়, যেখানে একটি আলফা পুরুষ এবং আলফা নারী নেতৃত্ব দেয়।

খাদ্যাভ্যাস: নেকড়েরা মাংসাশী প্রাণী। তারা প্রধানত বড় হরিণ, বাইসন, মোষ এবং অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীদের শিকার করে। তবে, খাদ্য সংকট হলে তারা ছোট প্রাণী বা পাখিও শিকার করে।

প্রতিশোধ নেওয়ার প্রবণতা: নেকড়েরা তাদের পরিবার বা শাবকদের সুরক্ষার জন্য প্রতিশোধপরায়ণ হতে পারে। গবেষণা বলছে, শাবক বা আবাসস্থলের ক্ষতি হলে নেকড়েরা আক্রমণাত্মক হয়ে উঠতে পারে, যা কখনো কখনো মানুষের ওপর হামলার কারণ হতে পারে।

সুন্দর শিকার দক্ষতা: নেকড়েরা দলগত ভাবে শিকার করে এবং একটি নির্দিষ্ট শিকারকে লক্ষ্য করে ঘিরে ধরে। এদের শক্তিশালী দাঁত এবং চোয়ালের জন্য এরা শিকারে খুবই দক্ষ।

বুদ্ধিমত্তা: নেকড়েরা খুবই বুদ্ধিমান প্রাণী। এদের যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক শক্তিশালী। তারা ডাক, গর্জন এবং শরীরের অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে দলের অন্যান্য সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করে।

বিপদগ্রস্ত অবস্থা: মানববসতির বিস্তার, বনাঞ্চলের উজাড়, এবং শিকারির দ্বারা আক্রমণের কারণে নেকড়ের সংখ্যা বিশ্বব্যাপী কমছে। অনেক এলাকায় এরা বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

আরও পড়ন: ‘সেদিন যখন আমাদের রাস্তায় টেনে নামানো হয়েছিল…’, কংগ্রেসে যোগ দিলেন কুস্তিগীর বিনেশ ফোগাট এবং বজরং পুনিয়া

    NO COMMENTS

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

    Exit mobile version