ভিনরাজ্যে কাজ করতে গিয়ে বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর বাড়তে থাকা আক্রমণের আবহে বড় সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সরকার। বোলপুরে দলীয় কর্মসূচিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করলেন, ভিনরাজ্যে থাকা বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকদের রাজ্যে ফিরিয়ে আনার জন্য ইতিমধ্যেই একটি বিশেষ ‘স্কিম’ তৈরি করে ফেলেছে তাঁর সরকার।
সোমবার বোলপুরের সভা থেকে মমতা বলেন, “বলুন, কবে আসবেন? আমরা আপনাদের ট্রেনে করে নিয়ে আসব। যেমন কোভিডের সময় এনেছিলাম। চলে আসুন। বাইরে থাকার দরকার নেই। যারা আপনাদের ভালোবাসে না, তাদের কাছে থাকারও প্রয়োজন নেই।” তিনি আশ্বাস দেন, যারা ফিরবেন, তাদের রেশন কার্ড, স্বাস্থ্যসাথী কার্ড, এমনকি ছেলেমেয়েদের স্কুলে ভর্তি করে দেবে রাজ্য সরকার।
এই ঘোষণার আগে তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, ভিনরাজ্যে যেমন প্রায় ২২ লক্ষ বাঙালি শ্রমিক কাজ করছেন, তেমনই বাংলায়ও অন্যান্য রাজ্যের প্রায় দেড় কোটির মতো মানুষ বাস করেন। তিনি বলেন, “আমি সব ভাষাভাষীকে সম্মান করি, কিন্তু বাঙালিদের উপর বারবার আক্রমণ চলবে তা হতে পারে না।”
বোলপুরের সভা থেকে মমতা কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন অসম ও হরিয়ানার বিজেপি পরিচালিত সরকারগুলিকে। জানান, এই রাজ্যগুলিতেই বাংলা ভাষাভাষীদের উপর অত্যাচার বাড়ছে। একইসঙ্গে তিনি কটাক্ষ করেন নির্বাচন কমিশনকেও। ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়ার ঘটনায় ফের সরব হয়ে বলেন, “বাংলায় নাম কেটে দেখুন, ঢোল-কাঁসর বাজিয়ে দামামা বাজবে।”
তিনি আরও বলেন, “কমিশন ডবল ইঞ্জিন সরকারের হয়ে কাজ করছে। বিহারে যখন বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার সমীক্ষা হচ্ছে, তখন বাংলার মা-বোনেরা কি আপনারা যাবেন না? হেনস্থা হতে দেব না।”
সোমবার প্রশাসনিক বৈঠকে মমতা নির্দেশ দেন, ১০০ দিনের কাজে রাজ্যে ফিরতে চাওয়া পরিযায়ী শ্রমিকদের অবিলম্বে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। পরিযায়ীদের জন্য কাজের নিশ্চয়তা দিতে চায় রাজ্য সরকার।
এ দিন প্রশাসনিক বৈঠকের শেষে প্রায় তিন কিলোমিটার মিছিল করেন মুখ্যমন্ত্রী। মিছিলে পা মেলান আশ্রমিক থেকে দলের জেলা নেতারাও। সভায় মমতা স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “আমার ভাষা কেড়ে নিতে দেব না। দরকার হলে জীবন দেব।” রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিজেপির উদ্দেশে তোপ দেগে বলেন, “যাকে তাকে বাংলাদেশি, রোহিঙ্গা বলে পুশব্যাক করা হচ্ছে। অথচ এদের নথিপত্র সবই আছে। এত রোহিঙ্গা যদি থাকে, তারা কোথায়?”
বাংলা ও বাঙালির সম্মান রক্ষার ডাক দিয়ে সভা শেষ করেন মমতা। বলেন, “বাংলার মানুষ স্বাধীনতা আন্দোলনে পথ দেখিয়েছেন, জাতীয় সঙ্গীত রচয়িতা আমাদেরই মাটি থেকে এসেছেন। বাংলা বারবার অপমানিত হলে, প্রতিবাদে পথে নামতেই হবে।”
আরও পড়ুন: দিল্লিতে শিশু-সহ বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকের পরিবারকে মারধরের অভিযোগ, বিজেপিকে আক্রমণ মুখ্যমন্ত্রীর