শঙ্কর দাস
বৃক্ষকুল পিতৃহারা! চিরতরে চলে গেলেন বৃক্ষনাথ কমল চক্রবর্তী। বৃক্ষপ্রেমী সাহিত্যিক আর নেই। পুরুলিয়ার ভালো পাহাড়ের মন ভালো নেই আজ। শুক্রবার প্রয়াত হলেন কমল চক্রবর্তী।
প্রথম আলাপ এবং আড্ডা ‘ভালো পাহাড়’-এই। শীতকালে দিনকয়েক সেখানে থাকার সময়। তার পর মাঝে মাঝে দেখা হত আমাদের পত্রিকা দফতরে সাহিত্য বিভাগে। বয়স যে শুধুমাত্র একটা সংখ্যা বই অন্য কিছু নয়, তা দেখেছি তাঁর জীবনে, যাপনে, পড়েছি তাঁর লেখায়!
ধুধু মাঠ সাবাড় করে ফলিয়েছো গাছ
কাঁটার আঘাতে বুঝিয়েছো জঙ্গলের অভিমান।

‘কৌরব’ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক কমল চক্রবর্তী। চাকরি করতেন জামশেদপুরে, টাটার কোম্পানিতে উচ্চপদে। একদিন হঠাৎ চাকরি ছেড়ে দিয়ে চলে এলেন পুরুলিয়া জেলার ঝাড়খণ্ড সীমান্তের কাছে প্রকৃতিময় পাহাড়-নদী-ঝরনাঘেরা নির্জন সাতঘুরণ নদী-পাহাড়ের কাছে আদিবাসী পল্লির পাশে এক নির্জন জায়গায়।
বৃক্ষপ্রেমী কমল চক্রবর্তী কয়েকজন সমমানসিকতার সঙ্গীসাথিকে নিয়ে সেখানে গড়ে তুললেন বৃক্ষঘেরা চমৎকার ‘ভালোপাহাড়’ প্রকল্প। বনসৃজনের পাশাপাশি আদিবাসীদের নিয়ে গড়ে তুললেন আদিবাসীদের দুঃস্থ ও অনাথ ছেলেমেয়েদের জন্য বিনা ব্যয়ের স্কুল, দাতব্য চিকিৎসালয়, পাঠাগার, অতিথিশালা, গোরু, হাঁস মুরগির পশুখামার। গড়ে তুললেন প্রায় একটি কমিউন।
এর সঙ্গে সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি কলকাতার সাহিত্যমহলে ছিল তাঁর নিত্যই আসা-যাওয়া। বহু সাহিত্যিক, বিভিন্ন ক্ষেত্রের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব-কর্মী, সাংবাদিক ও সেলিব্রেটিমহল উৎসাহ নিয়ে গিয়ে দেখে এবং থেকে এসেছেন মন ভালো করার ‘ভালো পাহাড়’-এ। আড্ডা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মেতেছেন সেখানে। সরল সোজা সাঁওতাল নারী-পুরুষের সঙ্গে সন্ধ্যায় সাঁওতালি নাচে পা-ও মিলিয়েছেন বহু শহুরে মানুষ। সবটাই ‘বৃক্ষনাথ’ কমল চক্রবর্তীর সৌজন্যে। সেই ‘ভালো পাহাড়’ আজ পিতৃহারা।
গত ১৫ আগস্ট তিনি কলকাতায় এসে পুরস্কার গ্রহণ করেন। তার পর ফিরে যান পুরুলিয়ার ‘ভালো পাহাড়’-এ। তার ঠিক পাঁচদিন পর অর্থাৎ নয়দিন আগে বুধবার বাথরুমে পড়ে গিয়ে তিনি মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পান। সংজ্ঞাহীন অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়। শেষে কোমায় চলে গিয়েছিলেন। আর জ্ঞান ফেরেনি।