Home রাজ্য দঃ ২৪ পরগনা সুন্দরবনের বাদাবনে এ বারে লাগানো হল সৌরবাতি, উপকৃত হবে গ্রামের মানুষ

সুন্দরবনের বাদাবনে এ বারে লাগানো হল সৌরবাতি, উপকৃত হবে গ্রামের মানুষ

0

উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায়, কুলতলি: ম্যানগ্রোভ ঘেরা সুন্দরবনের বাদাবনে সৌর আলোর ব্যবস্থা করতে এ বার এগিয়ে এলো কলকাতা সোসাইটি ফর কালচারাল হেরিরেজ ও সুপার শক্তি ফাউন্ডেশন। এদের এই কাজে সহায়তা করল দক্ষিণ ২৪ পরগনা বন দফতর।

সুন্দরবনের মানুষের জীবন কাটে প্রতিনিয়ত সংকটকে সামনে রেখে। গ্রামগুলি জঙ্গল ও নদী সংলগ্ন হওয়ায় গ্রামবাসীদের ঝুঁকির মাত্রা অনেকটাই বেশি। এখানকার অন্ধকার রাস্তা যেন গ্রামবাসীদের কাছে এক প্রকার মারণফাঁদ। আর তার প্রধান কারণ সাপের কামড়। দক্ষিণ ২৪ পরগনা বন বিভাগের সহযোগিতায় কলকাতা সোসাইটি ফর কালচারাল হেরিটেজ-এর সঙ্গে সুপার শক্তি ফাউন্ডেশন সেই সব এলাকায় ৩০টি সৌর বাতি বসানোর জন্য আগ্রহ দেখিয়ে এগিয়ে এসেছে।

ইতিমধ্যেই ৫টি সৌর খুঁটি বসানো হয়েছে। শুক্রবার এই প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। এর পর বাকিগুলো বিভিন্ন পর্যায়ে বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানানো হয়েছে।

সুন্দরবনের কুলতলির দেবীপুর গ্রামের প্রায় ৪১৩৬টি পরিবার এই রাস্তায় বসানো সৌর ল্যাম্পের সুবিধা ভোগ করতে পারবে। এই গ্রামগুলো সুন্দরবনের মূল এলাকা সংলগ্ন হওয়ায় অন্ধকারে চলার পথে গ্রামের মানুষ প্রায়শই সাপের কামড়ের শিকার হয়। এই এলাকাটি কুলতলি রেঞ্জ ডিরেক্টরেট ফরেস্টের, দক্ষিণ ২৪ পরগণা বন বিভাগের অধীনে পড়ে। এই এলাকা থেকে নিকটবর্তী সরকারি হাসপাতাল ৩৬ কিমি দূরে।

এ দিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনা বন বিভাগের ডিএফও মিলন মণ্ডল বলেন, “আমরা সকলেই জানি সুন্দরবন এমন একটি জায়গা, যেখানে প্রানীজগৎ এবং এখানে বসবাসকারী মানুষ সবসময় প্রকৃতির সংস্পর্শে আসে। মানব ও বন্য সংঘাত সুন্দরবন বন বিভাগের প্রধান উদ্বেগের কারণগুলির মধ্যে একটি। অধিকাংশ রাস্তা ইট দিয়ে তৈরি করা হয়েছে কিন্তু এখানে ‘বিদ্যুৎ’ একটি বিরল ব্যাপার। সুন্দরবন এলাকায় সাপের কামড় একটি সাধারণ সমস্যা। বিষাক্ত সাপের মধ্যে কেউটে জাতীয় সাপ এখানকার মানুষদের জন্য প্রধান ভয়ের এবং ক্ষতির কারণ। সাপের কামড়ের ফলে মৃত্যুর হার ৬৫ শতাংশের বেশি। এমনকি বাঘ গত পাঁচ বছরে দুইবার গ্রামে ঢুকেছে। তাই এখানে এই উদ্বেগের একমাত্র সমাধান হল সৌরশক্তি চালিত বাতি। গ্রামের প্রধান অংশগুলি চিহ্নিত করে আমরা এই বাতিগুলি স্থাপন করেছি ইতিমধ্যেই। এই প্রকল্পটি করার মাধ্যমে আমরা রিনিউয়েবল সবুজ শক্তির প্রচারও করেছি এবং কার্বনের মাত্রা কমাতে সক্ষম হচ্ছি প্রতিনিয়ত। এই সোলার লাইটগুলি প্রতি বছর ১৮২.৫ কিলোওয়াট সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে”।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত সাই গ্রুপের সিএসআর নোডাল অফিসার ইশান্ত জৈন বলেন, “প্রকল্পটি সুপার শক্তি ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়েছে, যা সিএসআর প্রকল্প-এ নিবন্ধিত। প্রকল্পটির পরিবেশগত স্থায়িত্ব এবং গ্রামীণ উন্নয়ন উভয়ই ক্ষেত্রেই একটা অনন্য ভূমিকা পালন করবে। আমরা খুশি সুন্দরবনের এই প্রত্যন্ত অঞ্চলে ৩০টি সৌরবাতি বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ফলে অন্তত চার হাজারের বেশি পরিবার সরাসরি উপকৃত হবে৷ প্রকল্পটি শুরু করার জন্য আমরা ইতিমধ্যেই ৫টি সৌর খুঁটি স্থাপন করেছি।বাকি গুলো ও বসানো হবে। “

কলকাতা সোসাইটি ফর কালচারাল হেরিটেজ এর প্রতিষ্ঠাতা এবং সেক্রেটারি গুঞ্জন কর্মকার বলেন, “কলকাতা সোসাইটি ফর কালচারাল হেরিটেজের মাধ্যমে আমরা গত ১৫ বছর ধরে সুন্দরবনে ম্যানগ্রোভ প্ল্যান্টেশন, নারীর ক্ষমতায়ন, বৃত্তিমূলক দক্ষতা উন্নয়ন এবং বন বিভাগের সঙ্গে একত্রে জীবিকা উন্নয়নের বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ করছি। এই সৌর আলো তাদের অন্ধকারে সব সময়ের জন্য আলো সরবরাহ করবে এবং গ্রামবাসীরা উপকৃত হবে। গ্রামবাসীরা দিনে গড়ে মাত্র ৪ ঘন্টা বিদ্যুৎ পায়। যেখানে আমরা সোলার লাইট বসিয়েছি সেসব নির্দিষ্ট জায়গা চিহ্নিত করেছে বন বিভাগ। বন বিভাগ খুঁটি পর্যবেক্ষণ এবং সৌর প্যানেল রক্ষণাবেক্ষণের জন্য গ্রামবাসীদের মধ্যে একটি সম্প্রদায় গঠন করেছে।”

আরও পড়ুন: যাত্রী সাথী: এ বার ট্যাক্সি বুকিং মোবাইল অ্যাপে, জানুন বিস্তারিত

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version