উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায়, কুলতলি: সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল বাঁচাতে এ বারে এগিয়ে এলেন সুন্দরবনের মহিলারা।
স্বামীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সুন্দরবনের নদীতে নৌকা করে কাঁকড়া-মাছ ধরে সারাবছর জীবন চলে জবা, সোনালি, বর্ণালি, সুপর্ণা, সন্তোষী, বীণা, দেবীর মতো মহিলাদের। এঁরা সুন্দরবনের ঝড়-ঝঞ্ঝা, বিপদকে মাথায় নিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন নিজেদের জীবনযাত্রা। আর এ বার নিজেদের সুন্দরবনকে বাঁচাতে নিজেরাই ম্যানগ্রোভ নার্সারি তৈরিতে নেমেছেন। সুন্দরবনের কুলতলির মৈপীঠে তাঁদের তৈরি গাছের চারা পরবর্তীতে বসানো হচ্ছে সুন্দরবনের বিভিন্ন নদীর পাড়ে।
মৈপীঠের নিম্নবিত্ত পরিবারে বাস জবা, বর্ণালি, সুপর্ণাদের। নুন আনতে পান্তা ফুরনোর অবস্থা। স্বামীর সঙ্গে তাঁরাও গভীর নদীতে নৌকা বা ডিঙা নিয়ে চলে যান মাছ-কাঁকড়ার সন্ধানে। প্রতি পদে পদে যেখানে জঙ্গল থেকে বাঘ বেরিয়ে আক্রমণ হানতে পারে তাঁদের উপর। এই মাছ-কাঁকড়া ধরার ফাঁকে ফাঁকে এ বার এঁরা নেমেছেন ম্যানগ্রোভের নার্সারি তৈরিতে।
চিতুরি বনদফতরের অফিসের সামনেই নদীর পাড়ে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলে তাঁদের কাজ। তারপর ঘরে ফিরে হেঁসেল সামলে ছেলে-মেয়েকে নিয়ে চলে জীবনসংগ্রাম। কারও বাড়ির চাল মাটির। কেউ বা থাকেন নদীর বাঁধের পাড়ে, এক টুকরো খড়ের ছাউনির ঘরে। সংসারে অভাবের ছাপ স্পষ্ট।
মৈপীঠের মৎস্যজীবী এক গৃহবধূ জানান, “১৫ কাঠা জমিতে নার্সারি তৈরি হচ্ছে। সুন্দরী, কাতরা, গরান, বকুল, গর্জন, কেওড়া গাছের নার্সারি তৈরি হচ্ছে। তিনমাস পর গাছের চারা বড়ো হয়ে গেলে নদীর পাড়ে পাড়ে বসানো হবে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা বনদফতর আমাদের এই কাজ দিয়েছে”।
পাশাপাশি আরও বলেন, “সুন্দরবনের বাঘ দেখা আমাদের নিত্যকার ঘটনা। বাঘের আতঙ্ককে সঙ্গে নিয়েই আমরা মাছ-কাঁকড়া ধরতে বেরোই। মেয়েকে কলেজে ভর্তি করেছি এই কাজ করেই। আমাদের এই সুন্দরবনকে বাঁচাতেই চাই আরও ম্যানগ্রোভ। ম্যানগ্রোভ বাঁচলে সুন্দরবন থাকবে। আর সুন্দরবন থাকলেই আমরাই বাঁচব। তাই আমরাই উদ্যোগ নিয়েছি সুন্দরবন বঞ্চাচল বাঁচাতে”।
আরও পড়ুন: ২০০০ টাকার নোট বদলাতে আরবিআই অফিসের বাইরে লম্বা লাইন