শনিবার রাতে দিল্লি থেকে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব ঘোষণা করেছে, অধীর রঞ্জন চৌধুরীর স্থলাভিষিক্ত হয়ে পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের নতুন সভাপতি হলেন শুভঙ্কর সরকার। দীর্ঘদিন ধরে প্রদেশ কংগ্রেসের নেতৃত্বে থাকা অধীর চৌধুরী সম্প্রতি লোকসভা নির্বাচনে বহরমপুর থেকে পরাজিত হওয়ার পর এই পরিবর্তনের ইঙ্গিত মিলেছিল। কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই প্রদেশ কংগ্রেসগুলিতে রদবদলের সম্ভাবনা তৈরি হয়। দলীয় সংবিধান মেনেই এই রদবদল বলে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
অধীর রঞ্জন চৌধুরী তৃণমূল বিরোধী রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় থাকলেও, কংগ্রেস নেতৃত্ব এবার তার স্থানে অপেক্ষাকৃত ‘নরমপন্থী’ শুভঙ্কর সরকারকে দায়িত্ব দিয়েছে। অধীরের নেতৃত্বে কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্ক ছিল বৈরী, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল-বিরোধী ফ্রন্টে থাকার জন্য। তবে শুভঙ্কর সরকারকে সভাপতি করে কংগ্রেস কি তৃণমূলের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করার ইঙ্গিত দিচ্ছে, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে নানা গুঞ্জন চলছে।
অধীর চৌধুরীকে সরানোর বিষয়ে শনিবার রাতে জাতীয় কংগ্রেসের নেতা কেসি বেণুগোপাল তাকে ফোন করে জানিয়ে দেন। এই খবরে মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেসের মধ্যে প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে, বিশেষত অধীরের দলীয় কর্মীদের মধ্যে হতাশা ছড়িয়েছে। তবে অনেকেই মনে করছেন, শুভঙ্কর সরকারের নেতৃত্বে কংগ্রেস নতুন করে মাটি কামড়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবে এবং তৃণমূলের সঙ্গে সম্পর্কের এক নতুন পর্ব শুরু হবে।
এই পরিবর্তন পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ এবং কংগ্রেসের ভবিষ্যৎ কৌশল কী হবে তা নিয়ে রাজনৈতিক মহল গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
নতুন সভাপতির রাজনৈতিক জীবন
শুভঙ্কর সরকার এর আগে তিনি অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস কমিটির (AICC) সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন, যেখানে তিনি অরুণাচল প্রদেশ, মেঘালয়, এবং মিজোরাম প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির দায়িত্বে ছিলেন। দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন শুভঙ্কর সরকার এর আগে পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র পরিষদ এবং যুব কংগ্রেসের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন।
শুভঙ্করের সামনে চ্যালেঞ্জ
শুভঙ্কর সরকার পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির (WBPCC) সভাপতি হিসেবে নতুন দায়িত্ব নেওয়ার পর বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন:
তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্ক: অধীর রঞ্জন চৌধুরী তৃণমূল বিরোধী অবস্থান নিলেও শুভঙ্কর সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশনা অনুযায়ী তৃণমূলের সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা করা। তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার চাপ রয়েছে, বিশেষ করে বিজেপি বিরোধী মোর্চায় কংগ্রেসকে আরো কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।
দলীয় ঐক্য বজায় রাখা: পশ্চিমবঙ্গ কংগ্রেসের মধ্যে ভিন্নমত এবং গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নতুন নেতৃত্বের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষত, তৃণমূলের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে অভ্যন্তরীণ মতভেদ রয়েছে, যা শুভঙ্কর সরকারকে সমাধান করতে হবে।
রাজনৈতিক পুনরুদ্ধার: কংগ্রেসের সাম্প্রতিক নির্বাচনে খারাপ ফলাফল, বিশেষ করে লোকসভায় অধীর চৌধুরীর পরাজয়, দলের পুনরুজ্জীবনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের সমর্থনভিত্তি পুনর্গঠন এবং জনসমর্থন আদায় করা শুভঙ্কর সরকারের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য।
বাম-কংগ্রেস জোটের ভবিষ্যৎ: বামফ্রন্টের সঙ্গে কংগ্রেসের সম্পর্ক এবং এটির ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশ নতুন সভাপতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। কংগ্রেসকে একদিকে তৃণমূলের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি করতে হবে, অন্যদিকে বামফ্রন্টের সঙ্গে ঐক্য বজায় রাখতে হবে।
এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করে পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের ভবিষ্যৎ গড়তে শুভঙ্কর সরকারের নেতৃত্বের কৌশল কতটা কার্যকর হবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।