Home খবর রাজ্য রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের ১৭তম অধ্যক্ষ নির্বাচিত হলেন স্বামী গৌতমানন্দ, জানুন তাঁর...

রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের ১৭তম অধ্যক্ষ নির্বাচিত হলেন স্বামী গৌতমানন্দ, জানুন তাঁর বিস্তৃত কর্মকাণ্ডের ইতিহাস

0

কলকাতা: রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের অধ্যক্ষ নির্বাচিত হলেন স্বামী গৌতমানন্দ। এর আগে তিনি রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সহ-অধ্যক্ষ ছিলেন। স্বামী স্মরণানন্দজি মহারাজের দেহাবসানের পর অন্তর্বর্তীকালীন অধ্যক্ষর দায়িত্বভার যায় তাঁর উপর।

রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের ১৬তম অধ্যক্ষ স্মরণানন্দজি মহারাজের দেহাবসানের পর অধ্যক্ষের পদটি শূন্য হয়েছিল। মঠ ও মিশনের নিয়মানুযায়ী, ‘গণতান্ত্রিক’ পদ্ধতিতে স্থায়ী অধ্যক্ষ নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন অধ্যক্ষের নেতৃত্বে কাজকর্ম পরিচালিত হয়। সেইমতো মঠের অছি পরিষদের বৈঠকে স্বামী গৌতমানন্দের নাম অন্তর্বর্তীকালীন অধ্যক্ষ হিসেবে চূড়ান্ত হয়েছিল। স্মরণানন্দের প্রয়াণের পর থেকে তিনি অন্তর্বর্তীকালীন অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। এ বার স্থায়ী অধ্যক্ষপদে নির্বাচিত হলেন। সপ্তদশ অধ্যক্ষ বা প্রেসিডেন্ট মহারাজ পদে নির্বাচিত হলেন স্বামী গৌতমানন্দ।

স্বামী গৌতমানন্দজীর জন্ম কর্নাটকের বেঙ্গালুরুতে ১৯২৯ সালে, তবে তাঁর পূর্বপুরুষেরা তামিলনাড়ুতে বসবাস করতেন। যৌবনে তিনি রামকৃষ্ণ সঙ্ঘের অন্যতম সহ-সঙ্ঘাধ্যক্ষ এবং বেঙ্গালুরু মঠের তৎকালীন অধ্যক্ষ স্বামী যতীশ্বরানন্দজী মহারাজের সংস্পর্শে আসেন। ১৯৫৫ সালে স্বামী যতীশ্বরানন্দজীর কাছ থেকে তিনি মন্ত্রদীক্ষা লাভ করেন। পরের বছর নিজ গুরুর নির্দেশে তিনি রামকৃষ্ণ সঙ্মে যোগদান করেন দিল্লি আশ্রমে। দিল্লির রামকৃষ্ণ মিশন তিনি ছয় বছর অবস্থান করে বিভিন্ন সেবামূলক কাজে নিরত ছিলেন।

১৯৬২ সালে স্বামী বিশুদ্ধানন্দজী মহারাজের কাছ থেকে তিনি ব্রহ্মচর্য দীক্ষা লাভ করেন এবং ১৯৬৬ সালে রামকৃষ্ণ সঙ্ঘের দশম সঙ্ঘাধ্যক্ষ স্বামী বীরেশ্বরানন্দজী মহারাজের কাছ থেকে সন্ন্যাস-দীক্ষা লাভ করেন। ১৯৬৪ সালে তিনি দিল্লি থেকে সোহরা (পূর্বে চেরাপুঞ্জি) আশ্রমে প্রেরিত হন। কয়েক বছর সেখানে সেবা করার পর তাঁকে মুম্বই আশ্রমে পাঠানো হয়। এই কেন্দ্রগুলিতে থাকাকালীন তিনি নানা সেবাকাজে অংশগ্রহণ করেছেন।

১৯৭৬ সালে অরুণাচল প্রদেশের আদিবাসী অধ্যুষিত প্রত্যন্ত গ্রামে অবস্থিত আলো (পূর্বে আলং) কেন্দ্রের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন গৌতমানন্দজী। সুদীর্ঘ ১৩ বছর তিনি সেখানে আদিবাসীদের মধ্যে শিক্ষার প্রসারের কাজে নিযুক্ত ছিলেন ৷ তাঁর নেতৃত্বে আলং কেন্দ্রটি নানা দিক দিয়ে উন্নত হয়ে জাতীয় স্তরে খ্যাতি লাভ করে।
পরবর্তীকালে তিনি স্বল্পকাল ছত্তীসগঢ়ে রায়পুর ও নারায়ণপুর আশ্রমের সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। ১৯৯০ সালে গৌতমানন্দজী রামকৃষ্ণ মঠের অছি পরিষদ ও রামকৃষ্ণ মিশনের পরিচালন সমিতির সদস্য নিযুক্ত হন। প্রায় তিন বছর তিনি বেলুড় মঠের নিকটবর্তী কেন্দ্র সারদাপীঠের সম্পাদক ছিলেন।

১৯৯৫-এর এপ্রিল মাসে গৌতমানন্দজী তামিলনাড়ুতে অবস্থিত এতিহ্যমণ্ডিত চেন্নাই মঠের অধ্যক্ষের দায়িতৃভার গ্রহণ করেন। সুদীর্ঘ তিন দশক ধরে তিনি এ পদে আসীন ছিলেন এবং তাঁর নেতৃত্বে সেখানকার সেবাকাজের সম্প্রসারণ হয় এবং আশ্রমের প্রভূত উন্নতি হয়। এ ছাড়াও তামিলনাড়ুতে অবস্থিত রামকৃষ্ণ- বিবেকানন্দ ভাবপ্রচার পরিষদের অন্তর্গত বিভিন্ন আশ্রমগুলিকে তিনি নির্দেশাদি দিয়ে সাহায্য করেছেন।

তাঁর প্রেরণায় পণ্ডিচেরি (কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল), অন্ধ্রপ্রদেশে কাডাপা ও তিরুপতি, তামিলনাড়ুতে তাঞ্জাভুর, বিল্লুপুরম, চেজম, থিরুমাকুডল প্রভৃতি স্থানে মঠ ও মিশনের নতুন কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে।

রামকৃষ্ণ মঠের অছি পরিষদের অনুমোদনে ২০১২ সাল থেকে গৌতমানন্দজী মন্ত্রদীক্ষা দান করা শুরু করেন। এর কয়েক বছর পর ২০১৭ সালে তিনি রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশনের অন্যতম সহ-সঙ্ঘাধ্যক্ষ নির্বাচিত হন।

গৌতমানন্দজী বিভিন্ন সময়ে মঠ ও মিশনের বিভিন্ন কেন্দ্র ও অন্যান্য আশ্রমগুলি পরিদর্শন করেন এবং দেশে-বিদেশে নানা প্রান্তে রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দের ভাবধারা ও বেদান্তের বাণী অগণিত মানুষের মধ্যে প্রচার করেছেন। এ ছাড়াও তিনি বহু সংখ্যক অধ্যাত্বপিপাসুকে মন্ত্রদীক্ষা দান করেছেন। মঠ ও মিশনের পত্রিকাগুলিতে মহারাজের লেখা প্রবন্ধগুলি পড়লে তাঁর মননশীলতার পরিচয় পাওয়া যায়।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version