Home খবর রাজ্য হাউ হাউ করে কাঁদছেন ভোটকর্মী, জীবন হাতে নিয়ে বাড়ি ফেরা

হাউ হাউ করে কাঁদছেন ভোটকর্মী, জীবন হাতে নিয়ে বাড়ি ফেরা

কলকাতা: শনিবার পঞ্চায়েত ভোটকে কেন্দ্র করে রাজ্যের একাধিক এলাকায় দিনভর গুলি-বোমা-রক্তপাত। শাসক-বিরোধী সংঘর্ষের মাঝে পড়ে চরম দুর্দশা পোহাতে হল ভোটকর্মীদের। অবাধ ও সুষ্ঠু ভোট করানো দূরের কথা, দুষ্কৃতীদের তাণ্ডব দেখে হাপুস নয়নে কেঁদেই ফেললেন ভোটকর্মীরা।

ভোটের দিন নিরাপত্তা নিয়ে আগাম সরব হয়েছিলেন ভোটকর্মীরা। এ ব্যাপারে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়েরও হয়। কিন্তু আদালতের নির্দেশ যেন রয়ে গেল খাতায়-কলমেই। বহু বুথে দেখা নেই কেন্দ্রীয় বাহিনীর, কোনো রকমে একজন রাজ্য পুলিশ এবং সিভিক দিয়েই রইল পলকা নিরাপত্তা।

ভোটের দিন আহত-নিহতের সংখ্যা নিয়ে জোর বিতর্ক চলছে। সেটা চলারই কথা। কোথাও কোথাও ভোটকর্মীদেরও হামলার শিকার হতে হয়েছে। যেমন, উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরের একটি বুথে আক্রান্ত হন মনোজ মজুমদার নামে প্রিসাইডিং অফিসার। হাসপাতালের বেডে শুয়ে তিনি জানান, “ভোট আধঘণ্টা হয়েছে, তার পরে হঠাৎ করে বুথের মধ্যে প্রায় দরজা ভেঙে ঢুকল সব। সব ঢুকে ব্যালট পেপার দিয়ে দিতে বলছে। তখন মারপিট শুরু করে দিয়েছে। একদম দাঙ্গার অবস্থা শুরু হয়ে গেছে। মারপিঠ শুরু করেছে, গায়ে লাথি, ঘুষি, এ রকম শুরু করেছে”।

আরও পড়ুন: পঞ্চায়েত নির্বাচন কতটা শান্তিপূর্ণ, ভোট শেষে জবাব তৃণমূলের

দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুর ব্লক-১ অন্নদাপ্রসাদ হাইস্কুলের একটি বুথে দুষ্কৃতী তাণ্ডবে ভয়ে কাঁটা প্রিসাইডিং অফিসার-সহ ভোট কর্মীরা। ফোনে পরিবারের লোকের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে চোখে জল। দুষ্কৃতীরা তুলে নিয়ে গিয়েছে ব্যালট বাক্স। ওই বুথের পোলিং অফিসার বলেন, “বড়ো বড়ো বাঁশ নিয়ে ঢুকল মুখোশ পরা সব। ঢুকেই দমাদ্দম পেটাত শুরু করল চেয়ার-টেবিলে। তার পর চোখের নিমেষে তিনটে ব্যালট বাক্স নিয়ে চলে গেল। নিরাপত্তা বলতে একজন রাজ্য পুলিশ। কোনো রকমে প্রাণ হাতে ডিসিআরসি-তে ফিরলাম”। সেখানে দাঁড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে জানালেন, “এত বার ভোটের কাজ করেছি, এমন পরিস্থিতি কোনো দিনই হয়নি। কোনো নিরাপত্তা নেই। পুলিশও পালিয়েছে, কে নিরাপত্তা দেবে”?

আরও পড়ুন: পঞ্চায়েত ভোটে রাস্তায় রাজ্যপাল! কী ‘আশা’ করেছিলেন, আর কী পেলেন সিভি আনন্দ বোস

আতঙ্ক এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, পরের বার ভোটের ডিউটি পড়লে যে কোনো ভাবে এড়িয়ে যেতে চান একাংশের ভোটকর্মী। যেমন বীরভূমের ময়ূরেশ্বরের রাজচন্দ্রপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৪৭ নম্বর বুথের প্রিসাইডিং অফিসার অঙ্গনা শেঠ বলেন, “এর পর ভোটের ডিউটি পড়লে যে ভাবেই হোক অব্যাহতি নেওয়ার চেষ্টা করব।’’ ঘটনায় প্রকাশ, আচমকা ১০-১৫ জনের বাইকবাহিনী এসে হাজির হয় ওই বুথে। তাদের মুখ কালো এবং সাদা কাপড় বাঁধা ছিল। অভিযোগ, বাইকবাহিনীর লোকেরা বুথে ব্যালট ছিনিয়ে নিয়ে অবাধে ছাপ্পা দিতে শুরু করে।

আরও পড়ুন: পঞ্চায়েত নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ বলা সম্ভব? জবাবে যা বললেন রাজীব সিনহা

মুর্শিদাবাদ জেলার খড়গ্রাম ব্লকের অন্তর্গত সাদল অঞ্চলের ১০৭ নম্বর বুথে সকালে কিছুটা ভোটগ্রহণ হয়েই বন্ধ হয়ে যায়। তবে দিনের শেষে জীবন হাতে নিয়ে খড়গ্রাম ব্লকের নগরে ডিসিআরসি সেন্টারে ফিরতে পারেন বলে জানান শঙ্করপুর গ্রামের ১০৭ নম্বর বুথে ভোট নিতে যাওয়া ভোটকর্মীরা। তাঁদের দাবি, “সকালে কিছু সংখ্যক ভোট হওয়ার পরেই ভোট গ্রহণ বন্ধ হয়ে যায় ভোটারদের জন্য। জীবন হাতে নিয়ে ফিরে এলাম”।

আরও পড়ুন: পঞ্চায়েতে প্রাণহানি, অধিকাংশ তৃণমূল কংগ্রেসের সমর্থক

দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগরে আক্রান্ত হন রাজাপুর করাবেগ গ্রাম পঞ্চায়েতের পোলিং অফিসার অমর্ত্য সেন। ঘটনায় প্রকাশ, তৃণমূল এবং নির্দল প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে জখম হন তিনি। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এমন ঘটনা শুধু এই কয়েকটি বুথে নয়। রাজ্যের নানা বুথেই দেখা গিয়েছে শনিবার। কোথাও ভয়ে কাঁদতে দেখা গিয়েছে ভোটকর্মীদের। কোথাও ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের শৌচালয়ে লুকিয়ে প্রাণ বাঁচিয়েছেন কেউ। এমন দৃশ্যের বর্ণনা দিতে দিতে এখনও কান্নায় গলা জড়িয়ে যাচ্ছে সেই সব ভোটকর্মীদের!

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version