ভূমিকম্পের সংজ্ঞা
ভূমিকম্প হলো পৃথিবীর অভ্যন্তরে সঞ্চিত শক্তি হঠাৎ মুক্তি পাওয়ার কারণে সৃষ্ট কম্পন। এই কম্পন স্থলপৃষ্ঠে অনুভূত হয় এবং কখনও কখনও বিশাল ক্ষতি ডেকে আনে। ভূমিকম্পের তীব্রতা মাপার জন্য রিখটার স্কেল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পদ্ধতি।
রিখটার স্কেল কী?
রিখটার স্কেল একটি লগারিদমিক স্কেল, যা ভূমিকম্পের তীব্রতা বা আকার মাপার জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি ১৯৩৫ সালে ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির ভূতাত্ত্বিক চার্লস এফ. রিখটার (Charles F. Richter) উদ্ভাবন করেন। এই স্কেল ভূমিকম্পের তরঙ্গমাত্রার ওপর ভিত্তি করে তার তীব্রতা নির্ধারণ করে।
রিখটার স্কেলের পরিমাপ
রিখটার স্কেল মূলত ১ থেকে ১০ পর্যন্ত সংখ্যায় ভূমিকম্পের মাত্রা প্রকাশ করে। এই স্কেল লগারিদমিক হওয়ায় প্রতি একক বৃদ্ধি মানে তীব্রতার দশ গুণ বৃদ্ধি। অর্থাৎ, ৫ মাত্রার ভূমিকম্প ৪ মাত্রার ভূমিকম্পের চেয়ে দশ গুণ বেশি শক্তিশালী।
তীব্রতার স্তর:
- ০-২ মাত্রা: সাধারণত অনুভূত হয় না।
- ৩-৪ মাত্রা: হালকা কম্পন, ক্ষতি সাধারণত হয় না।
- ৫-৬ মাত্রা: মাঝারি ক্ষতি, দুর্বল কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
- ৭-৮ মাত্রা: বড় ধরনের ক্ষতি, ভবন ধসে পড়ার সম্ভাবনা।
- ৯-১০ মাত্রা: মহা বিপর্যয়, ব্যাপক ক্ষতি এবং প্রাণহানি।
উদাহরণ
২০২৩ সালের তুরস্ক-সিরিয়া ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৭.৮ রিখটার স্কেল, যা ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ডেকে এনেছিল। এই মাত্রার ভূমিকম্পে বড় বড় ভবন ধসে পড়ে এবং হাজার হাজার মানুষ হতাহত হয়।
কেন রিখটার স্কেল গুরুত্বপূর্ণ?
রিখটার স্কেল ভূমিকম্পের তীব্রতা বোঝাতে অত্যন্ত কার্যকর। এই স্কেলের সাহায্যে ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল (Epicenter) এবং তীব্রতা দ্রুত নির্ধারণ করা যায়। ফলে দ্রুত উদ্ধারকাজ ও ক্ষয়ক্ষতি নিয়ন্ত্রণে সহায়তা পাওয়া যায়।
রিখটার স্কেল এবং আধুনিক পদ্ধতি
বর্তমানে মোমেন্ট ম্যাগ্নিচ্যুড স্কেল (Moment Magnitude Scale) রিখটার স্কেলের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে, রিখটার স্কেল এখনো জনপ্রিয় এবং সাধারণ মানুষের কাছে পরিচিত।
রিখটার স্কেল ভূমিকম্পের তীব্রতা নির্ধারণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পদ্ধতি। এটি পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্পের মাত্রা বোঝাতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। প্রকৃতির এই মহাশক্তির প্রভাব থেকে সুরক্ষিত থাকতে, ভূমিকম্পের পূর্বাভাস এবং প্রস্তুতির জন্য এই স্কেল ব্যবহারে আরও উন্নতি প্রয়োজন।