খবর অনলাইন ডেস্ক: দিল্লির আদালতে বড়ো ধাক্কা খেলেন ভারতের কুস্তি ফেডারেশনের প্রাক্তন প্রধান ব্রিজভূষণ শরণ সিং। তাঁর বিরুদ্ধে মহিলা কুস্তিগিররা যৌন হেনস্থার যে অভিযোগ এনেছেন, সে ব্যাপারে চার্জ গঠন করার নির্দেশ দিল আদালত। আদালত বলেছে, চার্জ গঠন করার যথেষ্ট প্রমাণ আছে। এই নির্দেশের ফলে ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করার পথ প্রশস্ত হল।
ব্রিজভূষণ শরণ সিং একজন সাংসদও। উত্তরপ্রদেশের কায়সেরগঞ্জ লোকসভা কেন্দ্র থেকে বিজেপির টিকিটে টানা নির্বাচিত হয়ে এসেছেন তিনি। এবার আর বিজেপি তাঁকে প্রার্থী করেনি। পরিবর্তে তাঁর পুত্র করণ ভূষণ সিংকে দাঁড় করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। বিজেপি এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার দিনকয়েক পরেই শুক্রবার দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ আদালত ব্রিজভূষণ শরণ সিংয়ের বিরুদ্ধে এই নির্দেশ জারি করল।
ভারতীয় দণ্ডবিধির (আইপিসি) ৩৫৪ (মহিলার সম্ভ্রমহানির উদ্দেশ্যে নিগ্রহ করা), ৩৫৪এ (যৌন হেনস্থা) এবং ৫০৬ (অপরাধমূলক হুমকি) ধারামতে চার্জ গঠনের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। গত বছরের ১৫ জুন দিল্লি পুলিশ এই ধারাগুলি এবং ভারতীয় দণ্ডবিধির আরও একটি ধারা ৩৫৪ডি (চুপিচুপি নজর রাখা) ধারায় চার্জশিট পেশ করেছিল।
অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটান ম্যাজিস্ট্রেট প্রিয়ঙ্কা রাজপুত বলেন, পাঁচ কুস্তিগিরকে যৌন হেনস্থা করার অভিযোগে ব্রিজভূষণ শরণ সিংয়ের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হবে এবং ষষ্ঠ জন যে অভিযোগ দায়ের করেছেন তা থেকে তাঁকে (ব্রিজভূষণ) অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
এ দিন আদালত জানিয়েছে, ফেডারেশনের প্রাক্তন অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি বিনোদ তোমারের বিরুদ্ধেও ভারতীয় দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারায় চার্জ গঠন করা হবে। পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য হয়েছে ২১ মে।
ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে পদকজয়ী কুস্তিগিরদের অভিযোগ
কুস্তিগিরদের যৌন হেনস্থা করার ইস্যুটি নিয়ে গত বছর থেকে ব্যাপক রাজনৈতিক ঝড় ওঠে। ওই ঝড়ের কেন্দ্রে ছিলেন ছ’ বারের বিজেপি সাংসদ ব্রিজভূষণ শরণ সিং। অলিম্পিকে পদকজয়ী সাক্ষী মালিক, বজরং পুনিয়া এবং এশিয়ান গেমস ও কমনওয়েলথ গেমসে পদকজয়ী বিনেশ ফোগতের মতো দেশের প্রথম সারির কুস্তিগিরেরা তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন। দীর্ঘদিন দিল্লি পুলিশ এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ না করায় যন্তর মন্তরে ধর্নাও দিয়েছিলেন বজরং, সাক্ষীরা। শেষ পর্যন্ত দিল্লি পুলিশ চার্জশিট পেশ করে এবং ২০ জুলাই শর্তসাপেক্ষে ব্রিজভূষণের জামিনের আবেদন মঞ্জুর করে আদালত।
গত ডিসেম্বরে ব্রিজভূষণের এক সহযোগী কুস্তি ফেডারেশনের নির্বাচনে জয়ী হলে সাক্ষী মালিক তাঁর বুটজোড়া খুলে রাখেন। বলেন, তিনি খেলা ছেড়ে দিচ্ছেন। ক্রীড়া মন্ত্রক অবশ্য পরে কুস্তি ফেডারেশনের নতুন পরিচালন কমিটিকে সাসপেন্ড করে দেয়। ব্রিজভূষণ অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে সমস্ত অভিযোগ বরাবর অস্বীকার করে এসেছেন।
দিল্লি আদালতের রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন প্রতিবাদী কুস্তিগিরেরা। সাক্ষী মালিক বলেছেন, ‘‘এটা আমাদের লড়াইয়ের জয়। ছোটো ছোটো মেয়েরাও এবার প্রতিবাদ করার সাহস পাবে। আমরা একটা উদাহরণ তৈরি করতে পেরেছি। আশা করি অভিযুক্ত উপযুক্ত শাস্তি পাবেন। আমাদের যথেষ্ট কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। আমরা কিন্তু নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করছি না। আমরা শেষ পর্যন্ত লড়াই করব।’’ স্বস্তি প্রকাশ করেছেন বজরং পুনিয়াও।
আরও পড়ুন
“কেউ কি সূর্যকুমার যাদবের ডিএনএ টেস্ট করেছে?”, কেন এ কথা বললেন দক্ষিণ আফ্রিকার ফাস্ট বোলার