মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট: ১ (জেমি ম্যাকলারেন) ইস্টবেঙ্গল এফসি: ০
মহমেডান এসসি: ১ (মিরজালোল কুসিমোভ) বেঙ্গালুরু এফসি: ০
খবর অনলাইন ডেস্ক: যতই সে লিগ টেবিলে তলানির দিকে থাকুক, সে তো ইস্টবেঙ্গল। মোহনবাগানের কাছে বড়ো বাধা। চিন্তা একটা ছিল মোহনবাগানের, কী ভাবে লিগ টেবিলের শীর্ষ স্থানটা ধরে রাখা যায়। যাই হোক, সেই বাধা কাটল। জেমি ম্যাকলারেনের গোলে সেই বাধা কাটিয়ে ফের ডার্বি জিতল মোহনবাগান। এবং প্রধান প্রতিপক্ষ বেঙ্গালুরুর সঙ্গে পয়েন্টের ব্যবধান বাড়িয়ে শিল্ড জয়ের পথে আরও এগিয়ে গেল তারা।
ও দিকে এবারের আইএসএল-এ সেরা অঘটন ঘটাল মহমেডান এসসি। শনিবার প্রতিপক্ষেরই মাঠে তাদের ১-০ গোলে হারিয়ে বাজিমাত করল সাদা-কালো বাহিনী। চলতি লিগে দ্বিতীয় জয় পেল মহমেডান। লিগ টেবিলে উঠে এল এক ধাপ। এল দ্বাদশ স্থানে।
কী বললেন দুই কোচ
এ দিনের জয়ে নিশ্চিন্ত মোহনবাগানের কোচ খোসে মোলিনা। ম্যাচের পরে বলেছেন, “আজ হয়তো আমাদের সেরা দিন ছিল না, তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, আরও তিন পয়েন্ট টেবিলে যোগ হল। আমাদের মূল লক্ষ্য তো শিল্ড জেতা।” আর ইস্টবেঙ্গলের কোচ অস্কার ব্রুজোন শনিবার দলের লড়াই নিয়ে খুশি আর গর্বিত। বলেছেন, “আজ প্রমাণ হয়েছে সঠিক পথ ধরেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।” তবে কোচের কথার সঙ্গে দলের এ দিনের পারফরম্যান্স মেলে না। এমন নিষ্প্রভ ডার্বি ম্যাচ আইএসএল-এ খুব কমই দেখা গিয়েছে।
এই ডার্বি ম্যাচ স্বাভাবিক ভাবেই হওয়ার কথা ছিল সল্ট লেকের যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে। কিন্তু গঙ্গাসাগর মেলার জন্য রাজ্য সরকার যথেষ্ট পুলিশি ব্যবস্থা করতে অপারগ হওয়ায় ডার্বি ম্যাচের ব্যবস্থা করা হয় গুয়াহাটিতে। গুয়াহাটির ইন্দিরা গান্ধী স্টেডিয়ামে আয়োজিত ম্যাচে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট ১-০ গোলে হারাল ইস্টবেঙ্গল এফসিকে।
ম্যাচের দু’মিনিটেই জয়সূচক গোল
শনিবার ম্যাচের দু’মিনিটের মাথাতেই গোল পেয়ে যায় মোহনবাগান। মাঝমাঠের ডান দিক থেকে আশিস রাইয়ের লম্বা থ্রু পান জেমি ম্যাকলারেন। বল নিয়ে ঢুকে পড়েন লাল-হলুদের বক্সে। তাঁকে বাধা দিতে গিয়ে ব্যর্থ হন হেক্টর ইউস্তে। আর ডিফেন্ডার লালচুঙনুঙ্গা একেবারে নিষ্ক্রিয় ছিলেন। গোলকিপার প্রভসুখন গিলকে পরাস্ত করে বল প্রতিপক্ষের জালে জড়িয়ে দিতে কোনো ভুল করেননি অস্ট্রেলীয় বিশ্বকাপার।
ম্যাচের শুরুতেই গোল খেয়ে যাওয়া। আর শেষের আধ ঘণ্টা শৌভিক চক্রবর্তীকে বাদ দিয়ে খেলতে গিয়ে ইস্টবেঙ্গল একেবারেই নিষ্প্রভ হয়ে যায়। ম্যাচের ৬৩ মিনিটে ইস্টবেঙ্গলের একটি কর্নার পাঞ্চ করে বার করে দেন সবুজ-মেরুন গোলকিপার বিশাল কায়েথ। বল পেয়ে যান মাঝমাঠের কাছাকাছি থাকা লিস্টন কোলাসো। ঢুকে পড়েন ইস্টবেঙ্গলের রক্ষণে। তখন সামনে মাত্র শৌভিক। কোলাসোকে বাধা দিতে গিয়ে ফাউল করে ফেলেন তিনি। দ্বিতীয় বার হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয় শৌভিককে।
এর পর ইস্টবেঙ্গল একদমই ঝিমিয়ে যায়। সারা ম্যাচে একটিও শট গোলের লক্ষ্যে রাখতে পারেননি ক্লেটন সিলভা, দিমিত্রিয়স দিয়ামান্তাকোসরা। ও দিকে মোহনবাগান মোট ১৪টি শট নিয়েছিল। তার মধ্যে চারটি গোলে রাখে এবং প্রথমটি থেকেই গোল পেয়ে যায়। এতেই স্পষ্ট দুই দলের পারফরম্যান্সে কতটা ফারাক ছিল।

গোল করার পরে উচ্ছ্বাস কুসিমোভের। ছবি Indian Super League ‘X’ থেকে নেওয়া।
বড়ো অঘটন ঘটাল মহমেডান
এ বারের আইএসএল-এ শিল্ড জয়ের অন্যতম দাবিদার বেঙ্গালুরুকে হারিয়ে দিল টেবিলের একেবারে নীচে থাকা মহমেডান। দক্ষিণ ভারত যে মহমেডান এসসি-র ক্ষেত্রে পয়া, তা শনিবার বোঝা গেল বেঙ্গালুরুর কান্তিরাভা স্টেডিয়ামে। একেবারে শেষ মুহূর্তের গোলে বেঙ্গালুরু এফসিকে হারিয়ে দিল মহমেডান।
ম্যাচের শেষ দিক। সমর্থকরা আশা করছিল, শেষ মুহূর্তে বেঙ্গালুরু গোল পাবে। সেই আশায় জল ঢেলে গোল পেয়ে গেল কলকাতার ক্লাব। ম্যাচের ৮৮ মিনিটের মাথায় বক্সের সামনে থেকে নেওয়া দুর্দান্ত এক ফ্রি কিকে বেঙ্গালুরুর জালে বল জড়িয়ে দিলেন মিরজালোল কুসিমোভ। তাঁর ডান পায়ের শট প্রথম পোস্টের ওপরের কোণ দিয়ে গোলে ঢুকে যায়। অভিজ্ঞ গোলকিপার গুরপ্রীতও তার নাগাল পাননি।
লিগ টেবিলে কে কোথায়
ডার্বি ম্যাচে ইস্টবেঙ্গলকে ১-০ গোলে হারিয়ে মোহনবাগান তাদের শীর্ষ স্থান আরও পাকা করল। এবং তা আরও শক্তপোক্ত হল তাদের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী বেঙ্গালুরুর পরাজয়ে। এ দিনের জয়ের ফলে ১৫ ম্যাচ থেকে মোহনবাগান সংগ্রহ করল ৩৫ পয়েন্ট। আর সমসংখ্যক খেলায় বেঙ্গালুরুর পয়েন্ট দাঁড়াল ২৭ পয়েন্ট। ৮ পয়েন্টে এগিয়ে থেকে শিল্ড জয়ের পথে অনেকটাই এগিয়ে গেল মোহনবাগান।
ও দিকে বেঙ্গালুরুকে ১-০ গোলে হারিয়ে মহমেডান উঠে এল দ্বাদশ স্থানে। ১৫ ম্যাচ থেকে তাদের সংগ্রহ ১০ পয়েন্ট। আর মোহনবাগানের কাছে হেরে যাওয়ার পরেও ইস্টবেঙ্গলের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি। ১৫ ম্যাচ থেকে ১৪ পয়েন্ট সংগ্রহ করে তারা থাকল একাদশ স্থানেই। টেবিলের একদম শেষে রয়েছে হায়দরাবাদ। তাদের সংগ্রহ ১৫ ম্যাচ থেকে ৯ পয়েন্ট।