মোহনবাগান এসজি: ২ (কামিংস, সাহাল)
নর্থইস্ট ইউনাইটেড: ২ (আজারাই, গিলেরমো)
(টাইব্রেকারে ৪-৩ গোলে জয়ী নর্থইস্ট)
কলকাতা: বারবার তিনবার। না, হল না। তৃতীয়বার আর বিশাল-হাত কাজ করল না। টাইব্রেকারে হার মেনে এবারের ডুরান্ড কাপে রানার্স আপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হল মোহনবাগান সুপার জায়ান্টকে। কোয়ার্টার ফাইনালে ফয়সালা হয়েছিল টাইব্রেকারে। গোলকিপার বিশাল কায়েথের হাতে ভর করে মোহনবাগান পৌঁছে গিয়েছিল সেমিফাইনালে। সেখানেও টাইব্রেকার। আবার বাজিমাত করল বিশালের হাত। মোহনবাগান পৌঁছে গিয়েছিল ফাইনালে। শনিবার সেই ফাইনালের খেলায় নর্থইস্ট ইউনাইটেডের কাছে টাইব্রেকারে ৪-৩ গোলে হারল মোহনবাগান।
বিবেকানন্দ যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে আয়োজিত ফাইনালে ম্যাচে প্রথমার্ধে ২-০ গোলে এগিয়ে ছিল মোহনবাগান। তার পর সেই মোহনবাগানের ছন্নছাড়া ক্রীড়া প্রদর্শন দ্বিতীয়ার্ধে। তারই ফায়দা তুলে ম্যাচকে টাইব্রেকারে নিয়ে গেল নর্থইস্ট। আর এবার বিশালের জায়গা নিলেন নর্থইস্টের গোলকিপার গুরমিত সিং চাহাল। মোহনবাগানের লিস্টন কোলাসো এবং শুভাশিস বসুর শট বাঁচিয়ে এদিনের ম্যাচে নায়ক হলেন তিনি। তাঁর হাত ধরেই এই প্রথম নর্থইস্ট কোনো সর্বভারতীয় ট্রফির স্বাদ পেল।
প্রথমার্ধে ২-০ গোলে এগিয়ে মোহনবাগান
ম্যাচের শুরু থেকে বেশ আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলছিল নর্থইস্ট। বল অনেক বেশি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখছিল। বেশ কয়েকবার মোহনবাগানের বক্সে উঠেও আসে তারা। কিন্তু গোল পায়নি। তবে একটু একটু করে মোহনবাগানের প্রাধান্য বাড়তে থাকে। আর তারই ফলস্বরূপ ম্যাচের ১০ মিনিটেই গোল পেয়ে যায় তারা। গ্রেগ স্টুয়ার্ট ডান দিক বল ভাসিয়ে দেন সাহাল আবদুল সামাদের উদ্দেশে। সেই বল পেয়ে যখন সাহাল নর্থইস্টের গোল লক্ষ্য করে শট নিতে যাবেন, ঠিক সেইসময় তাঁকে জার্সি ধরে টেনে ফেলে দেন আশির আখতার। রেফারি পেনাল্টি দেন। পেনাল্টি থেকে গোল করতে কোনো ভুলচুক করেননি জেসন কামিংস। বাগান এগিয়ে যায় ১-০ গোলে।
নর্থইস্ট ইউনাইটেডের ঝুলিতে প্রথম সর্বভারতীয় ট্রফি। ছবি: সঞ্জয় হাজরা।
গোল করে মোহনবাগানের আক্রমণের ঝাঁঝ আরও বাড়ে। সেইসময় নর্থইস্ট একটু ঝিমিয়েই পড়েছিল। ১৯ মিনিটের মাথায় গোল করার সহজ সুযোগ নষ্ট করেন স্টুয়ার্ট। একাই বল নিয়ে বাঁ দিক থেকে ঢুকে পড়েছিলেন প্রতিপক্ষের বক্সে। সামনে গোলকিপার গুরমিত একা। কিন্তু বারের উপর দিয়ে বল উড়িয়ে দিলেন স্টুয়ার্ট। দু’মিনিট পরেই ম্যাচে সমতা ফেরানোর সুযোগ পেয়েছিল নর্থইস্ট। কিন্তু আলেইদ্দিন আজারাইয়ের ক্রস থেকে জিতিনের হেড বাঁচিয়ে দেন বিশাল। এর পর দু’দলের মধ্যেই আক্রমণ-প্রতি আক্রমণের খেলা চলতে থাকে।
প্রথমার্ধের অতিরিক্ত সময়ে ব্যবধান বাড়ায় মোহনবাগান। দ্বিতীয় গোল সাহাল করলেও কৃতিত্ব পুরোটাই লিস্টন কোলাসোর। বাঁ প্রান্ত ধরে দৌড়ে নর্থইস্টের ডিফেন্ডারদের কাটিয়ে তাদের বক্সে ঢুকে পড়েন তিনি। এরপর নিখুঁত পাস বাড়ান সাহালকে। চলতি বলে আলতো টোকা দিয়ে নর্থইস্টের জালে বল জড়িয়ে দেন সাহাল। মোহনবাগান এগিয়ে যায় ২-০ গোলে।
দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচ ২-২
দ্বিতীয়ার্ধে দুটি দলের চরিত্র একেবারে পালটে যায়। গোল খেয়ে নর্থইস্ট যেন আহত বাঘের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে আর মোহনবাগান সেই আক্রমণের মুখে দিশাহারা হয়ে যায়। এই অর্ধে মোহনবাগানের খেলায় কোনো ছন্দ ছিল না, কোনো বুদ্ধিমত্তার পরিচয় ছিল না, কোনো প্ল্যানিং ছিল না। দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই দাপটের সঙ্গে খেলতে থাকে নর্থইস্ট। পরের পর আক্রমণ চালিয়ে যেতে থাকে তারা। এবং তার ফলও পেয়ে যায়। ম্যাচের ৫৫ মিনিটের মাথায় প্রথম গোল শোধ করেন মরক্কোর খেলোয়াড় আলেইদ্দিন আজারাই। মোহনবাগানের বক্সের ঠিক বাইরে বল পেয়ে যান জিতিন। তিনি বাঁ দিকে থাকা আজারাইকে বল পাস করেন। প্রথম পোস্টের সঠিক জায়গায় শট করে গোল করেন আজারাই। ম্যাচের ফল দাঁড়ায় মোহনবাগানের পক্ষে ২-১।
তিন মিনিট পরে আবার গোল। ম্যাচে সমতা ফেরায় নর্থইস্ট। বাঁ প্রান্তে বল পেয়ে আজারাই সেটি ভাসিয়ে দেন ডান দিকে থাকা গিলেরমো ফের্নান্দেসকে লক্ষ্য করে। চলতি বলে জোরালো শটে গোল করেন ফের্নান্দেস। বিশাল কিছু করার সুযোগই পাননি। ম্যাচে ২-২ সমতা এনে আরও তেড়েফুঁড়ে ওঠে নর্থইস্ট। আপ্রাণ চেষ্টা করে আরও গোল করে ম্যাচের নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই ফয়সালা করে নিতে। কিন্তু তা আর হল না। ম্যাচ গড়াল টাইব্রেকারে।
এই জয়ে খুশি নর্থইস্টের কর্ণধার তথা অভিনেতা জন আব্রাহাম। পাশে দলের কোচ খুয়ান পেদ্রো বেনালি। ছবি: সঞ্জয় হাজরা।
টাইব্রেকারে ফল নর্থইস্টের পক্ষে ৪-৩
প্রথম শট। কামিংসের শট নর্থইস্টের বারের উপর দিয়ে চলে যায়। কিন্ত নর্থইস্টের গোলকিপার গুরমিত এগিয়ে আসায় রেফারি কামিংসকে আবার শট মারার নির্দেশ দেন। এবার আর কামিংস ভুল করেননি। নর্থইস্টের হয়ে গোল করেন গিয়েলমোর। ফল ১-১।
মোহনবাগানের হয়ে গোল করেন মনবীর সিং আর নর্থইস্টের হয়ে গোল করেন জাবাকো। ফল ২-২।
তৃতীয় শুট-আউট। মোহনবাগানের কোলাসোর শট বাঁচিয়ে দেন গুরমিত। আর নর্থইস্টের হয়ে গোল করেন পার্থিব গগৈ। ফল মোহনবাগানের পক্ষে ২-৩।
চতুর্থ শুট-আউট। মোহনবাগানের হয়ে গোল করেন দিমিত্রি পেত্রাতোস আর নর্থইস্টের হয়ে গোল করেন আজারাই। ফল মোহনবাগানের পক্ষে ৩-৪।
পঞ্চম শুট-আউট। মোহনবাগানের শুভাশিস বসুর শট বাঁচিয়ে দেন গুরমিত। নর্থইস্টকে আর শট নিতে হয়নি। মোহনবাগানকে ৪-৩ গোলে হারিয়ে নর্থইস্ট ইউনাইটেড জিতে নিল প্রথম সর্বভারতীয় ট্রফি।
আরও পড়ুন
ইউএস ওপেন ২০২৪: আবার অঘটন, এবার বিদায় নিলেন জোকোভিচ, চতুর্থ রাউন্ডে গেলেন অ্যালেক্সি পপিরিন