মানবজীবন এখন নেটজালে আষ্টেপৃষ্টে বন্দি। ‘মন খুলে তো দ্যাখো দুনিয়া খুলে যাবে’ – বিজ্ঞাপনের এই ট্যাগলাইন এখন ঘোরতর বাস্তব আমাদের জীবনে। স্মার্টফোনের দৌলতে আমাদের জীবন এখন অনেক স্মার্ট। কিন্তু মুঠোফোনের দৌলতে একদিকে যেমন জীবনযাত্রা গতিশীল হয়েছে, সবকিছু হাতের মুঠোয় চলে এসেছে তেমনই ঘনিয়েছে বিপদও। সমানতালে বিশ্ব জুড়ে বাড়ছে সাইবার ক্রাইম।
এখন সিংহভাগ মানুষই স্মার্টফোনের মাধ্যমে ডিজিটাল লেনদেনে অভ্যস্ত। মোবাইল ব্যাঙ্কিংয়ের পাসওয়ার্ড-সহ যাবতীয় ব্যাঙ্কিংয়ের বিশদ তথ্য সব ফোনেই থাকে। সাইবার বিশেষজ্ঞরা সাবধান করে বলছেন, ‘হ্যাকিংয়ের ফাঁদ পাতা রয়েছে এই মোবাইল ব্যাঙ্কিংয়ের ভুবনে’। হ্যাকারদের সফট টার্গেট হলেন ভারতীয়রা।
সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা গেছে, গত ৬ মাসে ভারতে প্রতি সপ্তাহে গড়ে ২৯২৪টি হ্যাকিংয়ের ঘটনা ঘটেছে, যা গোটা বিশ্বে সাপ্তাহিক হ্যাকিংয়ের ঘটনার দ্বিগুণ। সাইবার সিক্যুরিটি সলিউশন সংস্থা চেকপয়েন্ট সফটওয়্যার টেকনোলজিসের তথ্য অনুযায়ী, ভারতে সবচেয়ে বেশি হ্যাকিংয়ের ঘটনা ঘটছে স্বাস্থ্যপরিষেবা ক্ষেত্রে। এর পরে রয়েছে শিক্ষা/গবেষণা, কনসাল্টিং, সরকারি বা সামরিক ক্ষেত্র। ৫৮.৬% ভাইরাসে ভরা ফাইল ইমেল মারফত, ৫৯% ভাইরাসে ভরা ফাইল পিডিএফ ফরম্যাটে হ্যাকাররা ওয়েবের মাধ্যমে ছড়িয়েছে। এমনকি প্রথম ৪ মাসে সাইবার জালিয়াতরা ১৭৫০ কোটি টাকা হাতিয়েছে বলে জানান ন্যাশনাল পেমেন্টস কর্পোরেশনের স্বাধীন অধিকর্তা অজয় কুমার চৌধুরী।
সতর্ক থেকে কীভাবে জব্দ করবেন তুখোড় বুদ্ধির হ্যাকারদের
সাইবার বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, মোবাইলে অবশ্যই ভালো দেখে অ্যান্টিভাইরাস লাগান। কেন না ম্যালওয়্যার আর স্পাইওয়্যার অজান্তেই মোবাইলে ইনস্টল হয়ে গিয়ে আপনার গোপন ইউজারনেম আর পাসওয়ার্ড চুরি করে নিতে পারে।
বন্ধু বা বিশ্বাসী পরিচিতদেরই মোবাইল নম্বর দেবেন। অচেনা কাউকে কোনোদিন নম্বর দেবেন না।
মোবাইল ফোন পাসওয়ার্ড দিয়ে লক করে রাখুন।
ব্লুটুথ ব্যবহার না করলে বন্ধ করে রাখুন। ওয়াইফাই বন্ধ করে রাখুন। রাস্তাঘাটে ফ্রি ওয়াইফাই বা হটস্পট ব্যবহার করবেন না।
সোশাল নেটওয়ার্কিং সাইট ব্যবহার করার সময় ফোনের জিপিএস ডিজেবল করে রাখুন। ক্যামেরার সেটিংসে গিয়েও জিও-ট্যাগিং ডিজেবল করে রাখুন।
অথেনটিক নয় এমন অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোড করবেন না।
পুরস্কার জিতেছেন এমন লোভে পা দেবেন না। এসএমএসের জবাব দেবেন না।
প্রত্যেক ফোনে সিক্যুরিটি ওয়াইপ ফিচার (রেস্টর ফ্যাক্টরি ডিফল্ট সেটিংস) থাকে। পুরোনো ফোন বিক্রি করার আগে তা ব্যবহার করুন, যাতে আপনার ব্যক্তিগত গোপন তথ্য চুরি না যায়। পুরোনো ফোন বিক্রি করার আগে ইমেল, হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট, কনট্যাক্টস সব মুছে দিন।
ফোন সারাতে দেওয়ার আগে মেমোরি কার্ড, সিম কার্ড, ব্যাটারি খুলে ফেলুন। ফোনের মেমোরিতে থাকা ব্যক্তিগত তথ্য মেমোরি কার্ডে সরিয়ে ফেলুন।
স্প্যাম বা জাঙ্ক ইমেলের জবাব দেবেন না। ইমেলের পাসওয়ার্ড কারও সঙ্গে শেয়ার করবেন না। একই ইমেল অনেককে পাঠালে bcc অপশন ব্যবহার করুন যাতে ইমেল আইডি অন্যের সঙ্গে শেয়ার না হয়।
জেনুইন অপারেটিং সিস্টেম আর অ্যান্টিভাইরাসযুক্ত কম্পিউটার বা মোবাইল থেকেই অনলাইন শপিং বা ব্যাঙ্কিং করবেন। পাবলিক নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে অনলাইন শপিং বা লেনদেন করবেন না। নেট বা মোবাইল ব্যাঙ্কিংয়ের পাসওয়ার্ড কারও সঙ্গে শেয়ার করবেন না। এটিএম কার্ডের তথ্য কাউকে ফোন, এসএমএস বা ইমেলে জানাবেন না। রেজিস্টার্ড মোবাইল নম্বর বদলালে সঙ্গে সঙ্গে ব্যাঙ্কে জানান। প্রতিটি এটিএম কার্ড আর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের এসএমএস অ্যালার্ট ফেসিলিটি সক্রিয় রাখুন।
অনলাইন শপিং বা লেনদেন করলে পাসওয়ার্ড বা পিন নম্বর টাইপ করার সময় ভার্চুয়াল কিবোর্ড ব্যবহার করুন।
বিশ্বাসযোগ্য সাইট থেকে অ্যাপ ডাউনলোড করুন। সব সময় মোবাইলের অ্যান্টিভাইরাস আপডেট করে রাখুন। অচেনা নম্বর থেকে পাঠানো সন্দেহজনক মেসেজ বা লিঙ্ক খুলবেন না, ডাউনলোডও করবেন না। হোয়াটসঅ্যাপে কখনও ব্যাঙ্কের গোপন তথ্য শেয়ার করবেন না। ওপেন ওয়াইফাই হ্যাকারদের স্বর্গরাজ্য। তাই ওপেন ওয়াইফাই নেটওয়ার্কে কখনও হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুকের মতো সোশাল নেটওয়ার্কিং সাইট ব্যবহার করবেন না। সন্দেহজনক সাইট থেকে কখনও গান, ভিডিও বা ফ্রি সফটওয়্যার ডাউনলোড করবেন না।
হ্যাকাররা আপনার ফেসবুক বন্ধুর অ্যাকাউন্টও হ্যাক করতে পারেন। তাই বন্ধুর পাঠানো সন্দেহজনক লিঙ্কে ক্লিক করবেন না। ফেসবুকের সেটিংসে গিয়ে মোবাইল নম্বর, ইমেল ‘ভিজিবল টু ওনলি মি’ করে রাখুন। হোয়াটসঅ্যাপের অটোমেটিক ডাউনলোড অপশন ডিজেবল করে রাখুন।
আরও পড়ুন
শরীর কেমন আছে বলে দেবে টুথপেস্ট থেকে তৈরি এডিবল ট্রানজিস্টর