খবর অনলাইন ডেস্ক: এক দশক আগের ঘটনা। উত্তরপ্রদেশের দাদরিতে গণপিটুনিতে প্রাণ হারিয়েছিলেন মহম্মদ আখলাক। ওই ঘটনার এক দশক পর অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে হত্যা-সহ সব অভিযোগ প্রত্যাহারে উদ্যোগী হয়েছে যোগী আদিত্যনাথের সরকার। ২০১৫ সালে সংঘটিত এই মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড ভারতের সাম্প্রতিক ইতিহাসে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ও গণপিটুনির এক অন্ধকার অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিল।
গৌতম বুদ্ধ নগরের উচ্চ দায়রা আদালতে দাখিল করা একটি আবেদনে রাজ্য সরকার ফৌজদারি কার্যবিধির ৩২১ ধারার অধীনে মামলাটি প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়েছে। ‘আউটলুক’-এর প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন স্থানীয় বিজেপি নেতা সঞ্জয় রানার ছেলে বিশাল রানা।
অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির (বর্তমানে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা) ৩০২ (খুন), ৩০৭ (খুনের চেষ্টা), ৩২৩ (স্বেচ্ছায় আঘাত), ৫০৪ (ইচ্ছাকৃত অপমান), এবং ৫০৬ (হুমকি)–সহ একাধিক গুরুতর ধারা প্রয়োগ করা হয়েছিল।
রাজ্য সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী গত ১৫ অক্টোবর গৌতম বুদ্ধ নগরের সহকারী জেলা সরকারি কৌঁসুলি ভাগ সিং আবেদনটি করেন। ওই নির্দেশের একটি চিঠি ২৬ আগস্ট তারিখে পাঠানো হয় বলে জানা গেছে। আবেদনে বলা হয়েছে যে, উত্তর প্রদেশের রাজ্যপাল অভিযোগ প্রত্যাহারের লিখিত অনুমোদন দিয়েছেন। এ ছাড়া সরকারের দাবি, আখলাকের বাড়ি থেকে যে মাংস উদ্ধার হয়েছিল তা সরকারি পরীক্ষাগারে ‘গরুর মাংস’ হিসেবে শনাক্ত হয়েছিল—এই যুক্তিও আবেদনে পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে।
২০১৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর রাতে বিসাদা গ্রামের বাসিন্দা ৫২ বছর বয়সি আখলাক ও তার ছেলে দানিশকে বাড়ি থেকে টেনে বের করে নির্মমভাবে প্রহার করে একদল জনতা। ঘটনাস্থলে মারা যান আখলাক, দানিশ গুরুতর আহত হন। অভিযোগ ছিল, আখলাক গরু জবাই করে বাড়িতে তার মাংস রেখেছিলেন। স্থানীয় মন্দিরের লাউডস্পিকারে এ সম্পর্কিত ঘোষণা শোনা যায় বলে গ্রামবাসীরা দাবি করে। ঘটনাস্থলেই মারা যান আখলাক, গুরুতর আহত হন দানিশ।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশ জুড়ে অসহিষ্ণুতা, গণপিটুনি, ও গরু-রাজনীতি নিয়ে বিস্তৃত জনমত সৃষ্টি হয়। ‘নট ইন মাই নেম’ আন্দোলন-সহ বিভিন্ন নাগরিক প্রতিবাদ গণচিত্তে ব্যাপক আলোড়ন তোলে। বর্তমানে মামলাটি আদালতের বিবেচনায় রয়েছে।
আদালতের সম্মতি ছাড়া অভিযোগ প্রত্যাহার করা যাবে না। সরকারের এই সিদ্ধান্ত নতুন বিতর্ক তৈরি করেছে—আইন, রাজনীতি ও নাগরিক অধিকার নিয়ে আলোচনার মধ্যেই দাদরি গণহত্যা আরও একবার আলোচনায় ফিরে এসেছে।
