Homeপ্রবন্ধপরমাণু অস্ত্রবিরোধী সংগঠন নিহন হিদানক্যো কে শান্তির জন্য নোবেল, এতদিন বাদে কেন?

পরমাণু অস্ত্রবিরোধী সংগঠন নিহন হিদানক্যো কে শান্তির জন্য নোবেল, এতদিন বাদে কেন?

প্রকাশিত

২০২৪ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছে জাপানের পরমাণু অস্ত্রবিরোধী সংগঠন নিহন হিদানক্যো (Japan Confederation of A- and H-Bomb Sufferers Organisations), যা হিরোশিমা ও নাগাসাকির পারমাণবিক বোমা হামলার জীবিতদের সংগঠন হিসেবে পরিচিত। হিবাকুশা, অর্থাৎ ‘বোমার শিকার’ নামে পরিচিত এই বেঁচে থাকা মানুষগুলো গত প্রায় সাত দশক ধরে পরমাণু অস্ত্রের নিষিদ্ধকরণের জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। এই সংগঠনকে নোবেল পুরস্কার বহু আগেই দেওয়া উচিত ছিল, কিন্তু প্রশ্ন হলো, কেন এখন, কেন ২০২৪ সালে?

ইরান এবং পারমাণু উত্তেজনার সাম্প্রতিকতা
এই বছর পুরস্কার দেওয়ার একটি প্রেক্ষাপট হতে পারে ইরানের সাম্প্রতিক বক্তব্য। ২০২৪ সালের মে মাসে, ইরান ঘোষণা করেছে, “আমাদের পরমাণু বোমা তৈরির কোনো সিদ্ধান্ত নেই, তবে যদি আমাদের পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েলি হামলা হয়, তবে আমাদের প্রতিরোধ ব্যবস্থা পাল্টে যাবে।” এই মন্তব্যের মধ্য দিয়ে ইরান তাদের প্রতিরক্ষা নীতি সংশোধনের ইঙ্গিত দেয়, যা মধ্যপ্রাচ্যে পরমাণু অস্ত্র নিয়ে নতুন উত্তেজনা তৈরি করেছে। যদিও ইরান প্রকাশ্যে পরমাণু অস্ত্র তৈরি না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তবে তাদের বক্তব্য ইঙ্গিত করে যে আক্রমণের ক্ষেত্রে তারা পারমাণবিক প্রতিরোধক নীতি নিতে পারে। এ ধরনের হুমকি গোটা বিশ্বজুড়ে পারমাণু অস্ত্রের পুনরুত্থানের আশঙ্কা তৈরি করেছে।

জিওপলিটিক্সের প্রভাব
২০২৪ সালে এই পুরস্কার প্রদান মূলত বিশ্বব্যাপী পারমাণবিক উত্তেজনার মধ্যে শান্তির একটি বার্তা পাঠানোর প্রয়াস বলে মনে করা যেতে পারে। কারণ, ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার উত্তেজনা, উত্তর কোরিয়ার ক্রমবর্ধমান পারমাণবিক সক্ষমতা, এবং রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের প্রেক্ষাপটে পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ তীব্রতর হয়েছে। বিশ্বের নানা দেশই যখন প্রতিরক্ষার নামে পারমাণবিক অস্ত্র সংগ্রহ এবং এর মাধ্যমে শক্তির ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করছে, তখন নিহন হিদানক্যো-এর শান্তিপূর্ণ আন্দোলন এক আদর্শ প্রতিরূপ।

বিগত বছরগুলিতে আমরা যেমন দেখেছি, আমেরিকা ও চিনের মতো পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো ক্রমাগত তাদের পারমাণবিক অস্ত্র উন্নত করে চলেছে। কিন্তু এই নোবেল শান্তি পুরস্কার সেসব শক্তিধর রাষ্ট্রগুলির প্রতি একটি শক্তিশালী বার্তা, যে পারমাণবিক অস্ত্রের প্রকৃত শক্তি নয়, বরং শান্তি এবং নিষিদ্ধকরণই মানবতার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারে।

Courtesy Photo | The library tower of the exhibit hall surrounded by destruction (William Brand Simpson Collection, USAICoE Document Collection)

নিহন হিদানক্যো এবং হিবাকুশা-র ভূমিকা
নিহন হিদানক্যো এবং হিবাকুশারা যারা পরমাণু অস্ত্রের বাস্তবিক ভয়াবহতা শিকার, তাঁরা বছরের পর বছর ধরে শান্তির জন্য নিরন্তর লড়াই করে আসছেন। তাঁদের কষ্টের কাহিনী শুধুমাত্র ইতিহাস নয়, বরং বর্তমান ও ভবিষ্যতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। পরমাণু অস্ত্রের ধ্বংসাত্মক শক্তি বিশ্বে কেমন বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে, সেটাই তারা আমাদের বারবার স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন।

এই পুরস্কার সেই শান্তির বার্তাকে তুলে ধরে, এবং বিশ্বকে আরও একবার মনে করিয়ে দেয় যে আমরা পরমাণু অস্ত্রবিরোধী আন্দোলনে এখনও অনেক পিছিয়ে আছি। ইরান বা অন্য কোনো দেশ যখন পরমাণু অস্ত্র নিয়ে প্রতিরোধের কথা বলে, তখন হিবাকুশারা তাদের নিজস্ব জীবনের কষ্ট দিয়ে প্রমাণ করেছেন, যে কোনো যুদ্ধ বা প্রতিরোধ শেষ পর্যন্ত মানবতার ধ্বংস ডেকে আনে।

বিশ্বব্যাপী প্রভাব এবং ভবিষ্যতের দৃষ্টিভঙ্গি
পরমাণু অস্ত্রবিরোধী আন্দোলন শুধুমাত্র জাপানের জন্য নয়, বিশ্বজুড়ে এক অতি প্রাসঙ্গিক বিষয়। ইরানের মতো দেশগুলো তাদের জাতীয় প্রতিরক্ষা শক্তি বাড়াতে পারমাণবিক ক্ষমতার দিকে ঝুঁকছে, যা বৈশ্বিক শান্তির জন্য হুমকি স্বরূপ। এক্ষেত্রে, বিশ্ব পরমাণু অস্ত্রের বিপদকে নতুন করে উপলব্ধি করছে, সেখানে নিহন হিদানক্যো-এর পুরস্কার একটি কূটনৈতিক বার্তা।

এই পুরস্কার পাওয়ার সময়টি কোনো কাকতালীয় ব্যাপার নয়। বরং এটি একটি জোরালো প্রতিধ্বনি যে, বর্তমান বিশ্বের পরমাণু উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে শান্তি ও নিরস্ত্রীকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইরান, উত্তর কোরিয়া, রাশিয়া এবং অন্যান্য দেশগুলোর প্রতি এই পুরস্কার একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত যে, পরমাণু অস্ত্রের মাধ্যমে প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়; বরং পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের মাধ্যমেই বিশ্ব শান্তি অর্জিত হতে পারে।নিহন হিদানক্যো-এর নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রাপ্তি এক দীর্ঘ প্রতীক্ষিত স্বীকৃতি। ইরানের মতো দেশগুলোর পারমাণবিক হুমকির প্রেক্ষাপটে এই পুরস্কার একটি শান্তির বার্তা, যা বিশ্বের রাষ্ট্রনায়কদের পরমাণু অস্ত্রবিরোধী প্রচেষ্টায় যোগ দেওয়ার জন্য আহ্বান জানায়। শান্তির জন্য এই পুরস্কার শুধুমাত্র একটি পুরস্কার নয়, বরং মানবতার অস্তিত্ব রক্ষার পথে একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ।

পরমাণু বোমায় বেঁচে যাওয়াদের সংগঠন ‘নিহন হিদানকিও’-কে এ বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কার  

আপনার প্রশ্ন, আমাদের উত্তর

সাম্প্রতিকতম

মোবাইল নম্বর নয়, এবার ইউজারনেম দিয়েই চ্যাট করা যাবে হোয়াটসঅ্যাপে! আসছে ইনস্টাগ্রাম-স্টাইল ফিচার

হোয়াটসঅ্যাপে আসছে ইনস্টাগ্রাম-স্টাইল ইউজারনেম ফিচার। মোবাইল নম্বর শেয়ার না করেই চ্যাট করা যাবে। নতুন এই ফিচার দেখা গেছে হোয়াটসঅ্যাপের বিটা ভার্সন ২.২৫.২৮.১২ তে। ইউজারনেম সেট করতে থাকবে কিছু নিয়মও।

সতর্ক থাকুন! পেঁপের সঙ্গে এই খাবারগুলো খেলেই বাড়বে বিপদ

ভিটামিন ও ফাইবারে ভরপুর পেঁপে যতটা উপকারী, ভুল খাবারের সঙ্গে খেলে ততটাই ক্ষতিকর। কমলালেবু, শশা, টমেটো, দই বা মধুর সঙ্গে পেঁপে খাওয়া হজমে সমস্যা, অ্যাসিডিটি ও অ্যালার্জির কারণ হতে পারে।

রাজ্যে শুরু টোটোর রেজিস্ট্রেশন, প্রথম দুই দিনে মাত্র ৯৫০ গাড়ি নথিভুক্ত ! দীপাবলির পর বাড়বে সাড়া আশা পরিবহণ দফতরের

রাজ্যে ব্যাটারি চালিত টোটো ও ই-রিকশার রেজিস্ট্রেশন শুরু হয়েছে। প্রথম দুই দিনে মাত্র ৯৫০টি গাড়ি নথিভুক্ত হয়েছে। পরিবহণ দফতর আশা করছে দীপাবলির পর এই সংখ্যা দ্রুত বাড়বে। রাজ্যে আনুমানিক টোটোর সংখ্যা ১০ লক্ষেরও বেশি।

২০০২ বনাম ২০২৫! ৭ জেলার ভোটার তালিকায় ৫১% থেকে ৬৫% মিল, কোথায় সবচেয়ে কম জানেন?

রাজ্যের সাতটি জেলায় ২০০২ ও ২০২৫ সালের ভোটার তালিকার মধ্যে ৫১% থেকে ৬৫% নামের মিল পাওয়া গিয়েছে। সর্বাধিক মিল কালিম্পংয়ে, সর্বনিম্ন ঝাড়গ্রামে। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে নতুনভাবে বিশেষ ভোটার তালিকা সংশোধন (SIR) শুরু করতে চলেছে নির্বাচন কমিশন।

আরও পড়ুন

স্বাধীনতা আন্দোলনের অলিখিত ইতিহাস: ভুলে গিয়েছি অগ্নিস্নাত বিপ্লবী হেমচন্দ্র ঘোষকে  

পঙ্কজ চট্টোপাধ্যায় মহাত্মা গান্ধী, জওহরলাল নেহরুর সঙ্গে হ্যান্ডশেক করেননি। বিধানচন্দ্র রায়কে আশীর্বাদও করেননি। বল্লভভাই পটেলের...

স্বাধীনতা আন্দোলনের অলিখিত ইতিহাস: ‘এবার তবে আসি মা!’

পঙ্কজ চট্টোপাধ্যায় একটা সুবৃহৎ দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস এত পক্ষপাতিত্ব করে লেখা হয়েছে, যার উদাহরণ...

স্বাধীনতা আন্দোলনের অলিখিত ইতিহাস: জালিয়ানওয়ালাবাগ ও উধম সিং

সে দিন ব্রিটিশ শাসক অসংখ্য নিরপরাধ ভারতীয় নরনারীকে বুলেটের বন্যায় ধরাশায়ী করেই ক্ষান্ত হয়নি, শহরের গণ্যমান্য নাগরিকদের ঘর থেকে বাইরে টেনে টেনে এনে রাস্তায় হামাগুড়ি দিতে বাধ্য করেছিল। প্রকাশ্য দিবালোকে রাজপথে ভারতীয়দের নাকে খত দিতে বাধ্য করেছিল ব্রিটিশ শাসক সে দিন।