লন্ডনে দীপাবলি উৎসবকে ঘিরে উত্তেজনা তুঙ্গে। কিন্তু সম্প্রতি মেয়র সাদিক খানের শেয়ার করা এক ভিডিও ঘিরে তীব্র বর্ণবিদ্বেষী প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এই ভিডিওটি লন্ডনের বিখ্যাত ট্রাফালগার স্কোয়ারে ২৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া “সবচেয়ে বড় দীপাবলি উৎসবের” প্রচার হিসেবে প্রকাশিত হয়েছিল। ওই ভিডিওটি প্রকাশের পরই কিছু মানুষের বর্ণবিদ্বেষী মন্তব্যে পরিস্থিতি তিক্ত হয়ে ওঠে।
ভিডিওতে গত বছরগুলোর দীপাবলি উদযাপনের আনন্দময় মুহূর্তগুলো দেখানো হয়েছে। নাচ, গান, রঙিন সাজসজ্জা—যা দীপাবলির খুশি এবং সকল সম্প্রদায়কে উৎসবে যোগদানের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। মেয়র খানের আন্তরিক বার্তা, “আমার পরিবার থেকে আপনাদের জন্য শুভ দীপাবলি,” সম্প্রীতির বার্তা দিতে চেয়েছিল। কিন্তু ভিডিওর মন্তব্য বিভাগে “ভারতে ফিরে যাও,” “আমাদের দেশে এ সব চাই না,”-র মতো বর্ণবিদ্বেষী মন্তব্যে মন্তব্যে ভরে উঠেছে।
লন্ডনের জনসংখ্যার ৭.৫ শতাংশ অংশ ভারতীয় সম্প্রদায় হলেও, এই ধরনের মন্তব্যে তারা নিজেদের অমর্যাদাকর অবস্থানে অনুভব করছেন। অনেকেই সামাজিক মাধ্যমে তাঁদের ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এক জন মন্তব্য করেন, কেন দীপাবলি উদযাপনে এতটা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, যা কিছু মানুষের কাছে সাম্প্রদায়িক অসম্মানের ইঙ্গিত দেয়।
ভারতীয় সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বর্ণবিদ্বেষের ইতিহাস
যুক্তরাজ্যে ভারতীয় সম্প্রদায়ের বর্ণবিদ্বেষের অভিজ্ঞতা বহু প্রাচীন। উপনিবেশিক যুগ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত দক্ষিণ এশীয়রা বিভিন্ন ধরনের স্টেরিওটাইপ এবং বর্ণবাদী আচরণের শিকার হয়ে আসছে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে তারা যুক্তরাজ্যকে তাদের নিজস্ব বাসস্থান হিসেবে গ্রহণ করলেও অনেক সময় তাদের ‘বহিরাগত’ হিসেবে দেখা হয়।
বর্ণবিদ্বেষী আক্রমণ কেবল কথোপকথনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় বরং গণমাধ্যম এবং রাজনীতির মতো ক্ষেত্রেও মাধ্যমেও স্পষ্ট হয়। সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাবে এই ধরনের বর্ণবিদ্বেষী মন্তব্য আরও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে, যেখানে অনেকেই নিজেকে আড়াল করে বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে।
ঐক্যের আহ্বান
এই বিতর্কের পর, ভারতীয় সম্প্রদায়ের অনেকেই ঐক্যের প্রয়োজনীয়তার কথা বলছেন। ভিডিওটির প্রাথমিক শেয়ারকারী কন্টেন্ট ক্রিয়েটর অক্ষয় ও দীপালি তাঁদের হতাশা প্রকাশ করে বলেছেন, দীপাবলির আনন্দ শুধু ভারতীয়দের জন্য নয়, বরং লন্ডনের সকলের জন্য একটি উদযাপন।
দীপাবলির মতো উৎসব ভারতীয় সম্প্রদায়ের শক্তি এবং ঐক্যের প্রতীক। যেখানে এই ধরনের মন্তব্য বিতর্কের সৃষ্টি তৈরি করে।
এমনকী মেয়র সাদিক খানের বার্তাও এই পরিস্থিতিতে আরও জরুরি, “দীপাবলি হল আনন্দ, ঐক্য এবং সম্প্রীতির সময়। লন্ডন যখন উৎসবের আলোতে সেজে উঠবে, তখন আশা করা যায় যে এই স্পিরিট ঘৃণার পরিবর্তে ভালবাসার বার্তা দেবে এবং সকলের আনন্দ উদযাপনের পরিবেশ তৈরি করবে”।