ইডেন গার্ডেনে চলছে একটি পাইলট প্রকল্প, যেখানে মানবমূত্রকে সার হিসেবে ব্যবহার করে গাছের যত্ন নেওয়া হচ্ছে। ১৮৪০ সালে নির্মিত এই বিশাল উদ্যানের ৮৫০ বর্গফুট এলাকা জুড়ে শুরু হয়েছে এই অভিনব উদ্যোগ। প্রকল্প সফল হলে উদ্যানের পুরো এলাকা জুড়ে ১৫০টি গর্ত খুঁড়ে এই প্রযুক্তি প্রয়োগ করা হবে। পরে কলকাতা কর্পোরেশন (KMC) এবং কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (KMDA)-ও শহরের অন্যান্য পার্কে এটি বাস্তবায়িত করতে পারে।
কীভাবে কাজ করছে এই প্রকল্প?
ইডেন গার্ডেনের শৌচাগার থেকে সংগ্রহ করা মানবমূত্র এবং উদ্যানের ট্যাঙ্কের জল মিশিয়ে ৫০:১ অনুপাতে তৈরি হচ্ছে সার। ‘সবিতা’ নামে পরিচিত এই প্রাকৃতিক সারের মাধ্যমে গাছের গোড়ায় সরাসরি জলসেচ দেওয়া হচ্ছে। মাটির আর্দ্রতা পর্যবেক্ষণের জন্য রুয়েলিয়া গাছ লাগানো হয়েছে, যা মাটি শুকিয়ে গেলে ঝুঁকে যায়।
প্রকল্পের ধারণায় কারা
এই প্রকল্পের ধারণা দিয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী এবং বনাধিকারিকরা। উদ্যোগটির মূল কারিগর ক্যালকাটা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের প্রাক্তন ছাত্র এবং প্রাক্তন সেন্ট্রাল ফুয়েল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক কল্যাণ সেন। তাঁর কথায়, “মানবমূত্রে নাইট্রোজেন, ফসফরাস এবং পটাশ থাকে, যা মাঠ ও খামারে ব্যবহৃত সারের মূল উপাদান। সমস্যা ছিল কুসংস্কার ও দুর্গন্ধ। আমরা জল মিশিয়ে দুর্গন্ধের সমস্যা দূর করেছি। সাফল্যের পর কুসংস্কারও কেটে যাবে।”
প্রযুক্তিগত সহায়তা
জাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রনিকস এবং ইন্সট্রুমেন্টেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ সার সরবরাহের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে সেন্সরভিত্তিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা তৈরি করেছে। এছাড়া, সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর পরিকল্পনাও রয়েছে, যাতে সারের প্রবাহ পর্যবেক্ষণ করা যায়।
খরচ এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
এই প্রকল্পে খরচ বহন করছেন ৮০-ঊর্ধ্ব প্রবীণ নাগরিকরা, যাঁদের মধ্যে রয়েছেন প্রাক্তন বিজ্ঞানী পি কে রায়। তাঁদের আশা, এই মডেল সফল হলে, কমিউনিটি টয়লেট সংলগ্ন পার্কগুলিতে এটি চালু করা সম্ভব হবে।
সামাজিক বার্তা
ইডেন গার্ডেনের এই প্রকল্প পরিবেশবান্ধব এবং টেকসই উন্নয়নের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এটি শুধু শহরের পরিবেশ রক্ষাতেই নয়, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।