বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সরাসরি বাণিজ্যিক এবং সামুদ্রিক সম্পর্ক সম্প্রসারণের ঘটনা ভারতীয় কূটনৈতিক মহলে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। করাচি থেকে সরাসরি চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্যবাহী জাহাজ আসার পাশাপাশি, দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করার উদ্যোগ নতুন জটিলতা তৈরি করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই প্রবণতা ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং সামগ্রিক নিরাপত্তা পরিস্থিতির ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
সম্প্রতি, পাকিস্তানের করাচি থেকে দ্বিতীয় কার্গো জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছেছে। ‘MV Yuan Xiang Fa Zhan’ নামের পণ্যবাহী জাহাজটি রবিবার বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশ করে। এই জাহাজে করাচি, দুবাই হয়ে প্রায় ৮১১টি কন্টেইনারে সোডা অ্যাশ, ডলোমাইট, মার্বেল ব্লক-সহ শিল্পজাত পণ্য এবং পোশাক শিল্পের কাঁচামাল, চিনি এবং ইলেকট্রনিক পণ্য আনা হয়েছে।
কী কারণে ভারতের উদ্বেগ
ইকনোমিক্স টাইমস-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের পাকিস্তান থেকে পণ্য আমদানি করতে “বাধ্য” করা হচ্ছে। আরও উদ্বেগের বিষয়, বাংলাদেশের জাহাজ মন্ত্রকের কিছু কর্মকর্তা ভারত-বাংলাদেশ শিপিং চুক্তি পুনর্মূল্যায়নের পরামর্শ দিয়েছেন। এই চুক্তির মাধ্যমে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরে প্রবেশাধিকার পেয়েছিল ভারত।
এমনিতে চট্টগ্রাম বন্দরের ভূ-কৌশলগত গুরুত্ব রয়েছে যথেষ্ট। ভারত দীর্ঘদিন ধরে শেখ হাসিনার সরকারের মাধ্যমে বন্দরের কাজকর্ম পর্যবেক্ষণ করেছে। তবে, সম্প্রতি পাকিস্তান থেকে আসা কার্গোর ওপর শারীরিক পরিদর্শনের প্রয়োজনীয়তা বাতিল করেছে বাংলাদেশ। এথে পাকিস্তানি জাহাজগুলির জন্য সমুদ্রপথ সহজ হয়ে গিয়েছে।
বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক
নতুন করে বলার নয়, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী প্রশাসনের প্রধান মহম্মদ ইউনুস পলাতক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নীতির বিরোধী। ক্ষমতায় আসার পর থেকে ইসলামাবাদের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার উপর জোর দিয়েছেন ইউনুস। ৫০ বছরের মধ্যে এই প্রথম বার পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে সরাসরি সামুদ্রিক যোগাযোগ চালু হয়েছে। যা দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ককে মজবুত করছে।
সম্প্রতি মিশরের কায়রোতে ডি-এইট সম্মেলনের সময় মহম্মদ ইউনুস পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। দুই নেতা ১৯৭১ সালের বিচ্ছিন্নতার দীর্ঘস্থায়ী সমস্যাগুলি সমাধানের প্রয়োজনীয়তা এবং কৌশলগত অংশীদারিত্বের মাধ্যমে বাণিজ্য, সংস্কৃতি, এবং ক্রীড়াক্ষেত্রে সম্পর্ক উন্নত করার বিষয়ে একমত হন।
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, পাক-বাংলাদেশের এই সম্পর্ক বৃদ্ধি এবং সরাসরি বাণিজ্য ভারতের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। বিশেষ করে সন্ত্রাসবাদ এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলির সম্ভাব্য সমর্থনের বিষয়টিও যথেষ্ট ভাবাচ্ছে।