পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দফতর নিজের হাতে রেখেছেন। সোমবার আলিপুরের ধনধান্য প্রেক্ষাগৃহে চিকিৎসকদের সম্মেলনে তিনি এই সিদ্ধান্তের কারণ ব্যাখ্যা করেন। মুখ্যমন্ত্রীর মতে, স্বাস্থ্য দফতরের কাজের পরিসর অত্যন্ত বৃহৎ এবং এর উন্নয়ন ও নজরদারি এক জন ‘রাজ্যমন্ত্রী’র পক্ষে সম্ভব নয়। তাই তিনি নিজেই এই দফতর পরিচালনা করছেন।
সম্মেলনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বামফ্রন্ট সরকারের সময়কালের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সঙ্গে বর্তমান সরকারের কাজের তুলনা করেন। তিনি অভিযোগ করেন, বাম জমানায় স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে অবহেলা করা হত এবং এক জন রাজ্যমন্ত্রী দফতরটি চালাতেন, যার ফলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা টিমটিমিয়ে চলত। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর হাসপাতালের গেট বড় করা, রং করা, রোগীর পরিজনদের জন্য নাইট শেল্টার তৈরি, টেলিমেডিসিন পরিষেবা এবং ‘স্বাস্থ্যসাথী’ প্রকল্পের মতো বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করা হয়েছে।
মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে ‘রিঙ্গার্স ল্যাকটেট’ স্যালাইন নিয়ে বিতর্কিত ঘটনার প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী জানান, সেখানে গাফিলতি ছিল এবং তদন্ত চলছে। তিনি আরও জানান, ওই ঘটনায় নিলম্বিত জুনিয়র ডাক্তারদের পুনর্বহাল করা হবে, কারণ সিনিয়রদের উচিত ছিল দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করা। মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ও স্যালাইন যাতে কোনও হাসপাতালে না থাকে, সে জন্য তিন মাস অন্তর যাচাই করার নির্দেশ দেন তিনি।
চিকিৎসকদের রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে মানবতার সেবায় কাজ করার আহ্বান জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “চিকিৎসকদের একটিই রং— মানবতা এবং সেবা।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, “স্বাস্থ্যের আর এক নাম সেবা। মানুষ বিপদে পড়লে আপনাদের কাছেই ছুটে যান।”
রাজ্যের ওবিসি শংসাপত্র সংক্রান্ত একটি মামলা সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন থাকার কারণে চিকিৎসক, নার্স, শিক্ষকসহ বিভিন্ন সরকারি কাজে নিয়োগ থমকে রয়েছে বলেও মুখ্যমন্ত্রী জানান। তিনি প্রস্তাব দেন, বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া জেলা হাসপাতালগুলি থেকে রোগীদের কলকাতার হাসপাতালে না পাঠানো উচিত।
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় দোষীর উপযুক্ত শাস্তির পক্ষে সওয়াল করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমাদের সরকার রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে ডাক্তারদের সম্মান করে।” তিনি আরও জানান, হাসপাতালের নিরাপত্তা বাড়াতে রাজ্য পুলিশের ডিজি এবং কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
হাসপাতালগুলির পরিকাঠামোগত উন্নয়নে সরকারের উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী জানান, আরজি কর, এসএসকেএম এবং মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে হোস্টেল তৈরি করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, “আমাদের আমলে দেশের সেরা সরকারি স্বাস্থ্য পরিকাঠামো এই রাজ্যে।” সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ৩৮টি মেডিক্যাল কলেজ, ৪২টি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল এবং ১৩,৫০০-র বেশি সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।