খবর অনলাইন ডেস্ক: শুক্রবার ২৫ বৈশাখের দিন বেলঘরিয়ার ‘আনন্দম’-এর তিমির মঞ্চে এক বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল বালার্ক নাট্যপত্র ও প্রকাশনা এবং বালার্ক থিয়েটার গ্রুপ। সদ্যপ্রয়াত নাট্যজন হরিমাধব মুখোপাধ্যায়কে স্মরণে রেখে এই সামগ্রিক অনুষ্ঠানটিকে সাজিয়ে তোলা হয়েছিল।
সাধারণভাবে ২৫ বৈশাখে রবীন্দ্রনাথকে ‘ঠাকুর’ হিসেবে পূজা করার প্রবণতা দেখা যায়, কিন্তু বালার্ক গত কয়েক বছর ধরে কবির আদর্শ ও শিক্ষাচিন্তাকে পাথেয় করে ভিন্ন আঙ্গিকে রবীন্দ্রজয়ন্তী পালন করে আসছে। গত বছর যেমন জীবন্ত কিংবদন্তি ‘চপলরানি’ ওরফে চপল ভাদুড়িকে জীবনকৃতী সম্মান জানানো হয়েছিল ‘বালার্ক’র তরফে, তেমনই এবার স্মরণ করা হল বাংলা থিয়েটারের এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হরিমাধব মুখোপাধ্যায়কে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে হরিমাধব মুখোপাধ্যায়ের জীবন ও উত্তরবঙ্গের নাট্যচর্চা নিয়ে এক আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়েছিল। এই আলোচনাসভায় নিজেদের মতামত ব্যক্ত করেন পশ্চিমবঙ্গ নাট্য আকাদেমির জীবনকৃতী সম্মানে সম্মানিত ‘মালদা মালঞ্চ’-র নির্দেশক পরিমল ত্রিবেদী, প্রখ্যাত গবেষক ও সমালোচক ড. আশিস গোস্বামী এবং স্যাস নাট্যপত্রের সম্পাদক-লেখক সত্য ভাদুড়ী মহাশয়।

আলোচনাসভার শেষে বালার্ক নাট্যপত্র ও প্রকাশনার উদ্যোগে একটি গুরুত্বপূর্ণ বই প্রকাশিত হয়। নবীন গবেষক এবং লেখক নীলাঞ্জন হালদারের দ্বিতীয় গবেষণাধর্মী বই ‘দিনাজপুর জেলার নাট্যচৰ্চায় হরিমাধব মুখোপাধ্যায়’ শীর্ষক বইটি নিয়ে আলোচনা করেন বিশিষ্ট চিকিৎসক এবং নাট্য-অভিনেতা মানবেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়। আশিস গোস্বামী বইটির ভূমিকায় লিখেছেন – “নীলাঞ্জন আড়াই হাজার বছরের ইতিহাস লিখবার চেষ্টা করেনি কিন্তু স্পর্শ করে করে গেছে ইতিহাসের নানা বাঁকগুলি। মূলত দিনাজপুর তথা বালুরঘাটের নাট্যচর্চার ইতিহাসের খুব সংক্ষিপ্ত এক বুননের মাধ্যমে শ্রদ্ধা জানাতে চেয়েছে সদ্যপ্রয়াত নাট্যজন হরিমাধব মুখোপাধ্যায়কে। তাঁর নাট্যচর্চার পিছনে যে নাট্যধারার সুদীর্ঘ জলপথ রয়েছে, যে জলপথে কখনো ডিঙা ভাসিয়েছেন মন্মথ রায় (১৮৯৯-১৯৮৮), যে ডিঙা নোঙর বেঁধেছিল ১৯০৪-এ ডায়মন্ড জুবিলী ক্লাবে, ১৯১৩ সালে দিনাজপুর নাট্য সমিতিতে বা ১৯০৪-এ বালুরঘাট থিয়েট্রিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন হয়ে ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্টে বালুরঘাট নাট্যমন্দিরে। এই দীর্ঘ পথ চলতে নির্দেশিকা জারি করে দিল নীলাঞ্জন আমাদের।” এ ছাড়াও একই মঞ্চে প্রকাশ পায় নাট্যদল ‘অবেক্ষণ’-এর সুবর্ণজয়ন্তী স্মারক পত্রিকা।
সন্ধ্যা ৬টা থেকে শুরু হওয়া এই অনুষ্ঠানটির সাংস্কৃতিক পর্বে অবেক্ষণ নাট্যদল পরিবেশন করে তাদের নাটক ‘বালাই ৬০’। বালার্ক থিয়েটার গ্রুপের সদস্যরা সমবেত মূকাভিনয় প্রদর্শন করেন। সমগ্র অনুষ্ঠান জুড়ে ছিল সমবেত সংগীতের মাধ্যমে কবিপ্রণামের আয়োজন।