ইলিশ না থাকলে যেন বর্ষা অপূর্ণ! কিন্তু এ বছরও সেই আশঙ্কাই ক্রমশ ঘনীভূত হচ্ছে। গত কয়েক বছরের মতো এবারও বাঙালির পাতে রুপোলি শস্য উঠবে কি না, তা নিয়ে বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন তৈরি হয়েছে।
মৎসজীবী সংগঠন সূত্রে খবর, ইলিশের আকাল এ বছরও প্রায় নিশ্চিত। কারণ একাধিক। তার মধ্যে সবচেয়ে বড় হল, সমুদ্রে নামবে মাত্র ৫০ শতাংশ ট্রলার। বাকিরা পড়ে থাকবে উপকূলে।
কাকদ্বীপ মৎস্যজীবী উন্নয়ন সমিতির সম্পাদক বিজন মাইতির কথায়, ‘‘গত কয়েক বছর ধরে যে হারে ইলিশ কমছে, তাতে বিপুল ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে ট্রলার মালিকদের। কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করে ট্রলার মেরামত করে সমুদ্রে গিয়ে যদি মাছই না মেলে, তাহলে ক্ষতিপূরণ নেই। তাই এবছর মালিকরা ঝুঁকি নিতে নারাজ।’’
আগামী মাস থেকেই শুরু হচ্ছে ইলিশ এবং অন্যান্য সামুদ্রিক মাছ ধরার মরশুম। তবে সমিতির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রাথমিক পর্যায়ে ট্রলারগুলোর অর্ধেকই সমুদ্রে নামবে না। পরে পরিস্থিতি দেখে বাকিদের নামানো হবে কি না, তা ঠিক হবে।
এদিকে শুধু এ রাজ্যের উপকূলেই নয়, সমস্যার আর একটি দিক বাংলাদেশ। ইলিশের অন্যতম উৎস সেই দেশ থেকেও এ বছর পর্যাপ্ত সরবরাহ হবে কি না, তা নিয়েও রয়েছে অনিশ্চয়তা। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা ও জটিল পরিবেশ পরিস্থিতির জন্য সে দিক থেকেও তেমন আশা দেখছেন না ব্যবসায়ীরা।
তবে একটি আশার খবরও আছে। আগামী ১৯ মে থেকে ইসরোর প্রযুক্তিতে তৈরি অত্যাধুনিক ‘টু ওয়ে এমএসএস ট্রান্সপন্ডার’ যন্ত্র বসানো হবে ট্রলারগুলিতে। প্রথম দফায় ৫০০টি ট্রলারে এই যন্ত্র বসবে—যার মধ্যে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ৩০০টি এবং পূর্ব মেদিনীপুরের ২০০টি। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে সমুদ্রে বিপদে পড়লে মৎস্যজীবীরা সরাসরি বার্তা পাঠাতে পারবেন।
সব মিলিয়ে বলা যায়, বাঙালির ভাপা-ভাজা-ঝোলের রসনায় ইলিশ যদি ফের অধরাই থেকে যায়, তাতে আর অবাক হওয়ার কিছু নেই। এবছরও হয়তো ভরসা রাখতে হবে স্মৃতির স্বাদেই।
আরও পড়ুন: ডিজিটাল পরিকাঠামোর মান যাচাইয়ের উদ্যোগ ট্রাইয়ের, আবাসনের জন্য আসছে নতুন নির্দেশিকা