দক্ষিণ কলকাতা ল’ কলেজের ছাত্রীর উপর গণধর্ষণের ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে রাজ্যের কলেজ ক্যাম্পাসে। বারবার প্রশ্ন উঠছে, আদৌ কতটা সুরক্ষিত মহিলারা কলেজে? শিক্ষক থেকে শিক্ষার্থী, সকলের মনেই তৈরি হচ্ছে নিরাপত্তাহীনতার বোধ।
কলেজগুলিতে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকা বহিরাগতদের অবাধ আনাগোনা নতুন কিছু নয়। অভিযোগ, অনেকেই সাবেক ছাত্র, কারও আবার কলেজের সঙ্গে কোনও প্রশাসনিক বা একাডেমিক যোগ নেই। তবু দিনের পর দিন তাঁরা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করছেন, রাজনৈতিক পরিচয়ের জোরে।
নিরাপত্তার অভাব, আতঙ্কে মহিলারা
নদিয়ার এক কলেজের শিক্ষিকা জানিয়েছেন, নিরাপত্তার অভাবে তিনি সন্ধ্যার পর কলেজে থাকতে ভয় পান। বড় ক্যাম্পাস হলেও নিরাপত্তার দায়িত্ব সামলান মাত্র দু’জন নিরাপত্তারক্ষী। সিসিটিভি ক্যামেরা থাকলেও তা পর্যাপ্ত নয়।
শহরের একাধিক কলেজের শিক্ষিকারাও জানিয়েছেন, পরীক্ষা চলাকালীন অন্য কলেজের ছাত্ররা এসে invigilation চলাকালীন মহিলাদের নিশানা করছেন। কেউ কাগজ ছুড়ে দিচ্ছেন, কেউ পরীক্ষার নিয়ম মানতে বললে বিরূপ আচরণ করছেন।
দক্ষিণ কলকাতা ল’ কলেজের পরিস্থিতি
যে কলেজে সম্প্রতি নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে, সেখানে মাত্র একজন স্থায়ী নিরাপত্তারক্ষী রয়েছেন। সেই নিরাপত্তারক্ষীও ঘটনার দিন অসুস্থতার কারণে কাজে অনুপস্থিত ছিলেন। কলেজের উপ-প্রধান নয়না চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, নিরাপত্তার অভাব রয়েছে। এখন বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থার কর্মীদের দিয়ে কাজ চালাতে হচ্ছে।
রাজনৈতিক প্রভাবেই সমস্যার শিকড়
শিক্ষকদের মতে, শুধুমাত্র নিরাপত্তারক্ষীর অভাবই নয়, বড় সমস্যা রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ। স্থানীয় নেতাদের পরিচিত মুখগুলি বারবার অবাধে ক্যাম্পাসে ঢুকে পড়ছে। নিরাপত্তারক্ষীরাও বাধা দিতে ভয় পান।
নদিয়ার শিক্ষিকার কথায়, ‘‘ছাত্রদের আইডি কার্ড দেখতে বলা হলেও রাজনৈতিক পরিচিতদের জন্য কোনও বাধা নেই। তাঁরা দিব্যি ক্যাম্পাসে ঢুকে বেড়ান।’’ উত্তর কলকাতা, বিরাটি এবং কাসবা এলাকার কলেজের শিক্ষিকারা একই অভিযোগ তুলেছেন।
শিক্ষকদের প্রস্তাব: রাজনৈতিক প্রভাব দূর হোক
বহু শিক্ষকের দাবি, যদি রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ না থাকত, তাহলে কলেজ প্রশাসন নিয়ম মানার সাহস পেত। সুরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করা যেত।
শিক্ষা দফতরের বক্তব্য
রাজ্য উচ্চশিক্ষা দফতরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, সরকার সাহায্য করতে প্রস্তুত। সরকার অনুমোদিত কলেজগুলি তাদের গভার্নিং বডির মাধ্যমে নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগের প্রস্তাব দিতে পারে। প্রয়োজনে দফতরের কাছে তহবিলের আবেদন জানানো যেতে পারে।
অন্য এক আধিকারিক জানিয়েছেন, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ইতিমধ্যেই ৩৭ জন অতিরিক্ত নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগের আবেদন করেছে। সেই আবেদন বিবেচনা করা হচ্ছে। সরকারি কলেজগুলির জন্য সরাসরি তহবিল বরাদ্দ করা হয় বলেও জানিয়েছেন তিনি।
বর্তমানে রাজ্যের কলেজ ক্যাম্পাসে মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বেড়েই চলেছে। শিক্ষক-শিক্ষিকারা চাইছেন, দ্রুত প্রশাসনিক উদ্যোগ নিয়ে ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা জোরদার করা হোক এবং রাজনৈতিক প্রভাব মুক্ত হোক শিক্ষাঙ্গন।