কোচবিহার: অসমের ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল কোর্ট থেকে ফের এক বাঙালি বাসিন্দাকে পাঠানো হল এনআরসি নোটিস। এ বার নিশানা কোচবিহারের মাথাভাঙা-২ ব্লকের ঘোকসাডাঙা লতাপাতা গ্রাম পঞ্চায়েতের কুশিয়াড় বাড়ি এলাকার ৭৫ বছর বয়সি নিশিকান্ত দাস। নোটিসে বলা হয়েছে, ১৯৬৬ থেকে ১৯৭১ সালের মধ্যে তিনি বাংলাদেশ থেকে ভারতে অবৈধভাবে প্রবেশ করেছিলেন।
অথচ নিশিকান্তবাবু জানাচ্ছেন, তিনি এক জন প্রকৃত ভারতীয় নাগরিক এবং তাঁর কাছে রয়েছে জমির দলিল, ভোটার কার্ড, আধার সহ একাধিক নথিপত্র। তা সত্ত্বেও ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল তাঁর নথিগুলি ‘গ্রাহ্য’ করেনি।
নিশিকান্ত জানান, ২৬ বছর আগে জীবিকার সন্ধানে অসমে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানেই একবার বাংলাদেশি সন্দেহে পুলিশ তাঁকে আটক করে। কিন্তু প্রয়োজনীয় পরিচয়পত্র জমা দেওয়ার পরে তিনি মুক্তি পান। এরপর কিছুদিন কাজ করে ফিরে আসেন কোচবিহারে। সেই ঘটনার এত বছর পর আবার তাঁকে বাংলাদেশি তকমা দেওয়া হল, যা নিয়ে ক্ষুব্ধ তিনি।
নোটিস পাওয়ার পরে ট্রাইব্যুনালে ভোটার কার্ড, আধার, জমির দলিল-সহ সমস্ত নথি জমা দিলেও, সেগুলি আমল পায়নি আদালত। এখন তাঁকে ভোটার তালিকায় পিতার নাম-সহ অতিরিক্ত প্রমাণ চাওয়া হয়েছে। নিশিকান্তবাবু জানিয়েছেন, তিনি আর ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের কাছে প্রমাণ দিতে চান না। তাঁর কথায়, “আমি ভারতীয়, সেটার জন্য আর প্রমাণ দিতে যাব না।”
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে এলাকায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, নিশিকান্ত দীর্ঘদিন ধরেই তাঁদের প্রতিবেশী। ছোটবেলা থেকেই তাঁকে তাঁরা চেনেন।
শনিবার নিশিকান্তবাবুর বাড়িতে গিয়ে তাঁকে আশ্বস্ত করেন কোচবিহার জেলা তৃণমূল সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক। তিনি বলেন, “এই সব করে বাংলার বাঙালিদের মধ্যে ভয় ধরানোর চেষ্টা করছে বিজেপি। এটা একেবারেই রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র।”
এর আগে দিনহাটার উত্তম ব্রজবাসী ও ফালাকাটার গৃহবধূ অঞ্জলি শীলকেও অনুপ্রবেশকারী সন্দেহে এনআরসি নোটিস পাঠানো হয়। সেই ঘটনা তুলে ২১ জুলাই ধর্মতলার সভা থেকেও বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার নিশিকান্ত দাসের ঘটনা ফের সেই বিতর্কে ঘি ঢালল।