কলকাতা: রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের (সিইও) দফতর এবার শুধু পদ নয়, কাঠামোগত স্বাধীনতার দিকেও এগোচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের সুপারিশে কলকাতার স্ট্র্যান্ড রোডে অবস্থিত বালমার লরি ভবন থেকে এই দফতর সরিয়ে অন্যত্র স্থানান্তরের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় সরকারের আওতায় থাকা কোনও ভবনে স্থানান্তরের প্রাথমিক ভাবনাচিন্তা চলছে। ইতিমধ্যেই রাজ্যের মুখ্যসচিবকে একটি চিঠি পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সেখানে বলা হয়েছে, বর্তমানে সিইও দফতর রাজ্যের অর্থ, স্বরাষ্ট্র ও পার্বত্য দফতরের আওতায় রয়েছে, যা জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের পরিপন্থী। এই দফতর একটি স্বশাসিত সাংবিধানিক সংস্থা হিসেবে স্বীকৃত হওয়া উচিত বলে জানানো হয়েছে।
পরিকাঠামোগত সমস্যা ও কর্মী সংখ্যা বৃদ্ধির বাস্তবতা
সিইও দফতরের এক আধিকারিক জানান, বর্তমানে অফিসে কর্মী সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় জায়গার অপ্রতুলতা এবং গাড়ি পার্কিংয়ের সমস্যা দেখা দিয়েছে। তাই একটি বড় ও উপযুক্ত ভবনে স্থানান্তরের জন্য অনেক দিন ধরেই ভাবনা চলছে। কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে, পুজোর আগেই এই স্থানান্তরের কাজ সম্পন্ন করার পরিকল্পনা রয়েছে।
প্রশাসনিক স্বাধীনতা ও নিয়ন্ত্রণ বদলের দাবি
নির্বাচন কমিশনের পাঠানো চিঠিতে স্পষ্ট বলা হয়েছে, মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক অতিরিক্ত মুখ্যসচিব (ACS) পর্যায়ের হলেও তিনি যেন রাজ্য সরকারের কোনও সচিব বা মুখ্যসচিবের অধীন না থাকেন। বরং, সম্পূর্ণভাবে ভারতের নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে স্বাধীনভাবে কাজ করুক এই দফতর— এটাই কমিশনের লক্ষ্য।
চলছে ভোটার তালিকা পর্যালোচনার প্রস্তুতি
এই আবহেই রাজ্যে শীঘ্রই শুরু হচ্ছে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সমীক্ষা (SIR)। ইতিমধ্যেই বুথ লেভেল অফিসার (BLO)-দের প্রশিক্ষণ শুরু হয়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজ্যের সিইও মনোজ আর শুক্রবার এক সাংবাদিক বৈঠকে।
নতুন পদ তৈরির সুপারিশ
বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যের সিইও দফতরে উপ, অতিরিক্ত ও যুগ্ম সিইও-র চারটি শূন্যপদ দ্রুত পূরণ করার নির্দেশও পাঠানো হয়েছে নবান্নে।
সংবিধান ও আইন যা বলছে
১৯৫০ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব আইন অনুযায়ী, মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতর কোনওভাবেই রাজ্য সরকারের আর্থিক বা প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণে থাকতে পারে না। এটি একটি স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, যা নির্বাচন কমিশনের সরাসরি তত্ত্বাবধানে কাজ করে।
এই প্রক্রিয়ায় সিইও দফতর আরও কার্যকর, স্বচ্ছ ও দায়িত্ববান হয়ে উঠবে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তবে ভবিষ্যতে এর বাস্তবায়ন কতটা দ্রুত হয়, তা সময়ই বলবে।
আরও পড়ুন: অসম থেকে ফের এনআরসি নোটিস, কোচবিহারের ৭৫ বছরের বৃদ্ধকে ‘বাংলাদেশি’ তকমা!