আইআইটি খড়্গপুরে তিন ভাষায় সাইনবোর্ড! বাংলার মর্যাদা রক্ষায় অভিনব সিদ্ধান্ত নির্দেশকের
খড়্গপুর আইআইটির ক্যাম্পাস জুড়ে এবার থেকে ইংরেজি ও হিন্দির পাশাপাশি বাংলাতেও লেখা থাকবে সমস্ত নামফলক, দিক্নির্দেশ এবং সাইনবোর্ড। এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করছেন প্রতিষ্ঠানটির নতুন নির্দেশক সুমন চক্রবর্তী। তিনি জানিয়েছেন, বহু অশিক্ষক কর্মী শুধুমাত্র বাংলা ভাষা বুঝতে এবং লিখতে পারেন। তাঁদের কথা ভেবেই নেওয়া হয়েছে এই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
নির্দেশক সুমন চক্রবর্তী বলেন, “আমাদের সংস্কৃতির রূপান্তর, আমাদের ভাবনাচিন্তার পরিবর্তন তুলে ধরতেই প্রতীকী ভাবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” তিনি আরও জানিয়েছেন, জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০ অনুযায়ী শিক্ষায় তিন ভাষা ব্যবহারের বিষয়টি মাথায় রেখেই ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ বিভাগগুলিতে তিন ভাষায় লেখা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে রাজভাষা বিভাগের প্রফেসর-ইন-চার্জকে।
আইআইটি খড়্গপুরের মতো আন্তর্জাতিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাংলার মাটিতে অবস্থিত হলেও, এতদিন বাংলা ভাষা সেখানে প্রায় ব্রাত্য ছিল বলেই মনে করছেন সুমন। তাঁর মতে, ভাষাগত বৈচিত্রকে সম্মান জানিয়ে আঞ্চলিক ভাষার মর্যাদা রক্ষার এ এক সাহসী পদক্ষেপ।
বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে হিজলি ডিটেনশন ক্যাম্পের প্রসঙ্গ। স্বাধীনতা আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন এই ক্যাম্পে বিপ্লবীদের কৃতিত্ব এতদিন শুধুমাত্র ইংরেজি ও হিন্দিতে লেখা ছিল। এবার সেখানে বাংলাতেও ফলক বসবে। সুমনের মতে, “এটা অদ্ভুত যে বাংলার বুকে থাকা ঐতিহাসিক স্থানে এতদিন বাংলায় কিছুই লেখা ছিল না।”
১৮ অগস্ট আইআইটির প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে যে পরিকাঠামোর শিলান্যাস হবে, সেই ফলকেও তিন ভাষায় তথ্য লেখা থাকবে বলে জানিয়েছেন তিনি। এমনকি, নির্দেশকের নিজস্ব দফতর ও বাসভবনের নামফলকেও ইতিমধ্যেই যুক্ত হয়েছে বাংলা ভাষা।
এই সিদ্ধান্ত এমন এক সময় এল, যখন আঞ্চলিক ভাষা নিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে। জাতীয় শিক্ষানীতির মাধ্যমে হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার অভিযোগে ক্ষোভ ছড়িয়েছে বাংলা-সহ দক্ষিণের রাজ্যগুলিতে। বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে বাংলাভাষীদের হেনস্থার অভিযোগ ঘিরেও উদ্বেগ বাড়ছে। এই প্রেক্ষাপটে খড়্গপুর আইআইটির এই পদক্ষেপ যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ এবং উদাহরণযোগ্য বলে মনে করছেন শিক্ষা মহলের একাংশ।