নয়াদিল্লি: দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে রাজ্যসভার অধিবেশন পরিচালনার পর জগদীপ ধনখড় হঠাৎই পদত্যাগ করেছেন। স্বাস্থ্যগত কারণকে সামনে রেখে নিজের পদ থেকে সরে দাঁড়ান তিনি। তবে এনডিটিভির প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, আকস্মিক এই পদত্যাগের নেপথ্যে একাধিক রাজনৈতিক কারণ জড়িয়ে রয়েছে। বিশেষত, বিরোধীদের প্রস্তাবিত বিচারপতি যশবন্ত বর্মার ইমপিচমেন্ট মঞ্জুর করা নিয়ে সরকারকে না জানিয়ে নেওয়া সিদ্ধান্তই বড় ভূমিকা রেখেছে বলে জানা গিয়েছে।
ধনখড়ের পর বিজেপি যে নতুন মুখকে বেছে নিয়েছে, তিনি সিপি রাধাকৃষ্ণণ। রাজনৈতিক মহলের মতে, ধনখড়ের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন চরিত্রের নেতা তিনি। দক্ষিণ ভারতের অভিজ্ঞ এই জনসংঘ–প্রশিক্ষিত রাজনীতিবিদকে বিজেপির কৌশলগত পদক্ষেপ হিসেবেই দেখা হচ্ছে। ধনখড় যেখানে ছিলেন আইনি ব্যাখ্যা আর তর্কে জড়িয়ে পড়াপ প্রবণতায় পরিচিত, সেখানে রাধাকৃষ্ণণকে শান্ত, সমন্বয়মূলক এবং ভারসাম্যপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
২০২২ সালে জাট আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ধনখড়কে রাজ্যসভার জন্য মনোনীত করেছিল বিজেপি। বার্তা ছিল স্পষ্ট—কৃষক সমাজের প্রতিনিধিত্ব শাসক দলের মূল স্রোতের অংশ। কিন্তু রাধাকৃষ্ণণের মনোনয়ন বিজেপির দক্ষিণমুখী বিস্তারের রূপরেখা স্পষ্ট করছে। ওবিসি ভোটব্যাঙ্ককে আরও সুসংহত করার কৌশলও এতে প্রতিফলিত হয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
আরও পড়ুন: দ্য বেঙ্গল ফাইল’ বিতর্কে তুঙ্গে, গোপাল ‘পাঠা’র নাতির আইনি নোটিস পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রীকে
রাধাকৃষ্ণন অতীতে তামিলনাড়ুতে ডিএমকে সরকারের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় অবস্থানকেই সমর্থন করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী এম.কে. স্ট্যালিনের সঙ্গে রাজনৈতিক যোগাযোগ গড়ে তুলেছেন তিনি। উদয়নিধি স্ট্যালিনের ‘সনাতন ধর্ম’ বিতর্ক নিয়েও মন্তব্য করেছিলেন, যদিও তা ছিল অনেকটাই নমনীয় ও পরিমিত স্বরে। আবার মহারাষ্ট্রে বিতর্কিত জননিরাপত্তা বিল নিয়ে বিরোধীরা তাঁর কাছে নালিশ জানালেও তিনি সাংবিধানিক কাঠামোর ভেতরেই নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন।
ধনখড়ের আরএসএস–এর সঙ্গে দীর্ঘ সম্পর্ক ছিল না। বরং তিনি ছিলেন আইনজীবী–রাজনীতিক, যাঁকে অনেকেই প্রয়োজনমাফিক নির্বাচিত মুখ হিসেবেই দেখেছিলেন। অন্যদিকে, রাধাকৃষ্ণন ১৭ বছর বয়স থেকেই আরএসএস ও জনসংঘের সঙ্গে যুক্ত। ফলে তাঁকে বিজেপির মতাদর্শের ভিত থেকে উঠে আসা নেতৃত্ব হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
রাজনৈতিক মহলের মতে, রাজ্যসভার কার্যকর পরিচালনা এবং বিরোধী দলের সঙ্গে সমঝোতার প্রয়োজনীয়তার দিক থেকে রাধাকৃষ্ণণ ধনখড়ের তুলনায় উপযুক্ত। একদিকে ধনখড়কে বিরোধীরা পক্ষপাতদুষ্ট ও বিতর্কসন্ধানী হিসেবে দেখেছেন, অন্যদিকে রাধাকৃষ্ণণকে সন্বয়কারী মুখ হিসেবে বিজেপি আনতে চয়েছেন বলে মনে করছেন অনেকে।
আরও পড়ুন: পশ্চিমবঙ্গে কবে শুরু হবে বিশেষ ও নিবিড় সংশোধন (SIR)? সাংবাদিক বৈঠকে যা জানাল কমিশন