আমন্ড বাদামকে বলা হয় পুষ্টির পাওয়ার হাউজ। সাম্প্রতিক এক গবেষণা রিপোর্টে বলা হয়েছে, রোজ সামান্য কয়েকটি আমন্ড বাদাম খেলেই মানসিক উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তা কমে। শরীরে ফোলা ভাব দূর হয়। সায়েন্টেফিক রিপোর্টস জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে গবেষণাপত্র। আমন্ড বাদাম খেলে অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের ওপর কী প্রভাব পড়ে তা দেখতে ৮টি আলাদা আলাদা ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালানো হয়।
অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের কারণে শরীরে ফোলা ভাব দেখা যায়, অকালে বুড়িয়ে যায় মানুষ, ক্রনিক অসুখ দেখা যায়। গবেষকরা দেখেন যে সব ব্যক্তি রোজ ৬০ গ্রাম আমন্ড বাদাম খেয়েছেন তাঁদের কোষের কম ক্ষতি হয়েছে। কোষকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে সুপারঅক্সাইড ডিসমুটেস নামক উৎসেচক। আমন্ড বাদাম খেলে এই অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট উৎসেচকের নিঃসরণ বাড়ে। নিয়মিত আমন্ড বাদাম খেলে ডিএনএ কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে ক্যালরি বেশি পরিমাণে থাকে বলে বুঝেশুনে খাওয়া উচিত আমন্ড বাদাম। আমন্ড বাদামে থাকে ভিটামিন ই, পলিফেনলস ও ফ্যাট।
কেন জলে ভেজানো আমন্ড বাদামকে বেশি স্বাস্থ্যকর বলে মনে করা হয়?
★ পুষ্টিতে ভরপুর আমন্ড বাদামে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, প্রোটিন, ভিটামিন ই, ম্যাগনেশিয়াম পাওয়া যায়। তাই সকালে খালি পেটে একমুঠো জলে ভেজানো আমন্ড বাদাম খেয়ে দিন শুরু করা নিঃসন্দেহে দারুণ স্বাস্থ্যকর।
★ কাঁচা আমন্ড বাদামে এমন সব উৎসেচক আর ট্যানিন থাকে যা সহজে হজম হতে চায় না। জলে ভেজানো থাকলে আমন্ড বাদাম একদিকে যেমন নরম হয়ে যায় তাতে তা সহজেই ভাঙা যায়। তাই জলে ভেজানো আমন্ড বাদাম সহজে হজম হয়। তেমনই, জলে ভেজানো আমন্ড বাদাম পুষ্টি শুষে নিতেও সাহায্য করে। জলে ভেজানো আমন্ড বাদামে এমন উৎসেচক তৈরি হয় যা অন্য খাবার হজম করতেও সাহায্য করে।
★ আমন্ড বাদামে পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণে দরকারি উৎসেচক যা জলে ভেজানো হলে সক্রিয় হয়ে ওঠে। এই সব উৎসেচক ভিটামিন, খনিজ পদার্থের রাসায়নিক জটিল গঠন ভাঙতে সাহায্য করে। এই উৎসেচক প্রক্রিয়া খাবার হজম করতে সাহায্য করে।
★ দীর্ঘ সময় জলে ভেজানো থাকলে আমন্ড বাদামে শুরু হয়ে যায় জার্মিনেশন বা অঙ্কুরোদ্গম প্রক্রিয়া।
★ আমন্ড বাদামে পাওয়া যায় ফাইটিক অ্যাসিড যা ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, দস্তার মতো খনিজ পদার্থকে এমন ভাবে বেঁধে রাখে যে তা শরীরে মিশে যেতে দেয় না। বাধা দেয়। জলে ভেজানো আমন্ড বাদামে ফাইটিক অ্যাসিডের পরিমাণ কমে যায়।
★ বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে জলে ভেজানো আমন্ড বাদাম মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়িয়ে তোলে। আমন্ড বাদামে থাকা ভিটামিন ই মস্তিষ্কের কগনিটিভ কার্যকারিতা বাড়িয়ে তোলে। কগনিটিভ কার্যকারিতা মানে লক্ষ্য স্থির রেখে হাঁটাচলা করা, গণনা করার ক্ষমতা, তথ্য বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা, মনে রাখার ক্ষমতা বা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা। জলে ভেজানো আমন্ড বাদাম স্মৃতিশক্তি বাড়িয়ে তোলে।
★ আমন্ড বাদামে প্রচুর পরিমাণে মোনো স্যাচুরেটেড ফ্যাট পাওয়া যায় যা হৃদযন্ত্রকে ভালো রাখে। জলে ভেজানো আমন্ড বাদাম রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। ক্ষতিকারক কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে রক্তে গুড কোলেস্টেরল (HDL)- এর মাত্রা ঠিক রাখে। জলে ভেজানো আমন্ড বাদাম রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে যা হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য খুব জরুরি।
★ জলে অনেকক্ষণ ধরে ভিজিয়ে রাখার কারণে নরম হয়ে যায় বলে সহজে চিবনো যায়। বিশেষ করে শিশু, বয়স্ক বা যাদের দাঁতে ব্যথা রয়েছে তারাও জলে ভেজানো আমন্ড বাদাম খেতে পারে।
★ আমন্ড বাদামে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই আছে ত্বক মসৃণ করে ও উজ্জ্বল করে তোলে। চুল পড়া আটকায়। আমন্ড বাদামের তেল ত্বকের জন্য খুব উপকারী।
আরও পড়ুন:
খাবার খাওয়ার পর স্নান কতটা ক্ষতিকর, কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?
ব্যায়ামের সময় হার্ট অ্যাটাকের ৫ সংকেত, যা কখনোই উপেক্ষা করবেন না